জনসংকট হতে পারে চিনে! জন্মহার বৃদ্ধির জন্য কী কৌশল নিচ্ছে ড্রাগনের দেশ?
প্রতীকী চিত্র।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: চিন বর্তমানে জনসংখ্যা সংকটের (China Population Crisis) মুখোমুখি হচ্ছে। এর কারণ বহু মহিলা ব্যক্তিগত জীবনের পরিবর্তে তাঁদের পেশাগত জীবনের প্রতি বেশি মনোনিবেশ করছেন। পরিবার শুরু করার জায়গায় কেরিয়ারকে বেছে নিচ্ছেন। যার ফলে জনসংখ্যা দ্রুত হারে কমতে শুরু করেছে এবং জনসংকট একটি প্রধান সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। জন্মহার বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন সময়ে একাধিক বিশেষ পরিকল্পনা চালিয়েছে চিন। জন্মহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৬ সালে এক-সন্তান নীতি বাতিল করেছিল চিন। এর পর ২০২১ সালে সন্তান প্রসবের ঊর্ধ্বসীমাকেও বাতিল করে ড্রাগনের দেশ। তা সত্ত্বেও দম্পতিদের সন্তান প্রসব কম হচ্ছে। এবার গবেষণায় এসেছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য।
সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মু ঝেং বলেছেন, “চিনে (China Population Crisis) বিবাহিত দম্পতিরা কম সন্তান ধারণ করছেন। আবার কোনও কোনও ক্ষেত্রে একেবারেই সন্তান না থাকা পছন্দ করছেন। কোভিড এখনও তার অনেক নেতিবাচক প্রভাব অব্যাহত রেখেছে এবং ভবিষ্যতের দিকে অনিশ্চয়তার ধারা অব্যাহত রেখেছে। এছাড়াও একটি অসহায়তার অনুভূতি রয়েছে যা অনেক মহিলাকে সন্তান ধারণ করতে নিষেধ করছে। জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় পরিবার প্রসারিত করতে চাওয়া থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।" চিনের ন্যাশনাল ব্যুরো অফ স্ট্যাটিস্টিকস রিপোর্ট করেছে যে জনসংখ্যা ২০২১ সালে ১.৪১৩ বিলিয়ন থেকে গত বছর ১.৪১২ বিলিয়ন হয়েছে। তথ্য অনুসারে, ১৯৬০ সালের পর প্রথমবারের মতো প্রাকৃতিক বৃদ্ধির হার নেতিবাচক ছিল ড্রাগনের দেশে।
পশ্চিমের দেশগুলির তুলনায় চিনের (China Population Crisis) কর্মশক্তিতে মেয়দের সংখ্যা বেশি। একজন অর্থনীতিবিদ অ্যান্ডি জি বলেছেন, “চিনে কেরিয়ার গড়ার ইচ্ছা আছে মহিলাদের মধ্যে। বাড়িতে থেকে মা হওয়া কখনই লক্ষ্য নয় তাঁদের। বহু মহিলা উচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করে কর্মক্ষেত্রে পদে উন্নতি করেছেন। ফলে তাঁরা আশা করেন যে, তাঁদের স্বামীরা তাঁদের থেকে বেশি উপার্জন করবে। ২০২০ সালে মহিলা পড়ুয়াদের ডক্টরেট ডিগ্রি নথিভুক্তিকরণ প্রায় ৪২% বৃদ্ধি পেয়েছে। পুরুষদের তুলনায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্যও উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি সংখ্যক মহিলা নথিভুক্ত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।”
বেশি মহিলাকে সন্তান ধারণে উৎসাহিত করার জন্য উৎসাহ দেওয়ার কাজ করছে ট্রিপ ডট কম হল একটি চিনা কোম্পানি। চিনে (China Population Crisis) এই সংস্থায় ৩০,০০০ কর্মচারীর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি মহিলা। অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি কোম্পানি মহিলা কর্মীদের আরও সন্তান নিতে উৎসাহ দিয়ে থাকে৷ আবার এই সংস্থার সিইও জেন সান গত মাসে সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, “আমাদের সংস্থায় মহিলাদের একটি কেরিয়ার, একটি পরিবার এবং সন্তান ধারণের জন্য শুধুমাত্র সাত থেকে আট বছর সময় দেওয়া হয়। গর্ভবতী কর্মচারীদের কর্মস্থলে এবং সেখানে বিনামূল্যে ট্যাক্সি চড়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়ে থাকে। তাঁদের সন্তানের জন্ম ও স্কুল শুরু হলে নগদ সুবিধা দেওয়ার কথাও বলা হয়।
এনইউএইচ-এর সহকারি অধ্যাপক মু বলেছেন, “চিনের (China Population Crisis) কিছু মহিলা সন্তান চান, কিন্তু তাঁরা বিয়ে বা বৈবাহিক জীবনের জন্য প্রস্তুত নন। মহিলারা এখন অর্থনৈতিকভাবে অনেক বেশি স্বাধীন। তাই তাঁদের অনেকের কাছে বিয়ে তেমন আকর্ষণীয় বিকল্প নয়।” সিএআইসি-এর তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে, ২০২১ সালে ৭৬.৪ লক্ষ মহিলা বিয়ে করেছে। তুলনায় ২০২০ সালের ৮১.৪ লক্ষ থেকে অনেকটাই কমে গিয়েছে।
যে মহিলাদের সন্তান ধারণের পর বিবাহবিচ্ছেদ হয়, তাঁরা সামাজিক কলঙ্কের সম্মুখীন হন এবং একা সন্তান লালন-পালন করার সময় তাঁদের কর্মজীবনে ভারসাম্য বজায় রাখতে ব্যাপক সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয়। চিনে একজন ৩৬ বছর বয়সি মহিলা এক সন্তানের মা বলেন, “আমি বিয়ে না করে একক ভাবে মা হওয়া লজ্জাজনক বলে মনে করি না। তবে আমি আমার সহকর্মীদের কাছ থেকে গোপন রেখেছিলাম কারণ আমি চাই না যে সকলে আমাকে অন্যভাবে দেখুক।” সূত্রে জানা গিয়েছে, চিনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ সিচুয়ানে বছরের শুরুতে ঘোষণা করেছে যে অবিবাহিত বাসিন্দারা বিবাহিত দম্পতিদের মতো একই সুবিধা পাবেন। এই পদক্ষেপ যা আশা করছে চিনের (China Population Crisis) দেশটির জন্মহার বৃদ্ধি করবে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।