Hezbollah: জঙ্গিদের আখড়া, তাই কি বন্ধ করে দেওয়া হল নীল-মসজিদ?...
জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। বন্ধ মসজিদের সামনে প্রহরা জার্মান পুলিশের।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: এবার জার্মানির (Germany) বিখ্যাত ব্লু-মস্ক বা নীল-মসজিদে অভিযান চালাল পুলিশ। হামবুর্গের এই মসজিদটি সে দেশের প্রাচীনতম মসজিদগুলির একটি। মসজিদটি ইমাম আলি মসজিদ নামেও পরিচিত। সম্প্রতি এই মসজিদেই হামলা চালায় পুলিশ। বালাক্লাভাসের অফিসাররা মসজিদ প্রাঙ্গন থেকে প্রচুর নগদ টাকা ও একটি কালো রংয়ের অডি গাড়ি বাজেয়াপ্ত করেছে। জঙ্গি সংগঠন হিজবুল্লার (Hezbollah) সঙ্গে যুক্ত নেটওয়ার্ক ধ্বংস করতে উঠেপড়ে লেগেছে জার্মান পুলিশ।
তার জেরেই পুলিশি অভিযান চালানো হয় ওই মসজিদে। ইরানি শাসনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ইসলামিক জঙ্গি দমনে কড়া পদক্ষেপ করছে জার্মান পুলিশ। সেই সূত্রেই এবার তারা ঢুকে পড়ল দেশের প্রাচীনতম একটি মসজিদে। জানা গিয়েছে, তদন্ত চালিয়ে জার্মান পুলিশ দেখেছে, ‘ইসলামিক সেন্টার হামবুর্গ’ কেবল ধর্মীয় কাজকর্ম করে না। তারা কাজ করে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা খোমেইনির প্রতিনিধি হিসেবে। জার্মানিতে তারা ইসলামি বিপ্লব রফতানি করার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ। জার্মানির ইন্টিরিয়র মন্ত্রী ন্যান্সি ফেসার ব্লুমবার্গ মসজিদ পরিচালনাকারী সংগঠন ‘ইসলামিক সেন্টার হামবুর্গ’কে (ICH) চরমপন্থী গোষ্ঠী দেগে দেন।
মসজিদটিকে নিষিদ্ধও ঘোষণা করা হয়েছে। ফয়েসার বলেন, “এই গোষ্ঠীটি একটি চরমপন্থী প্রচারকারী সংগঠন। এরা এ দেশে ইরানি বিল্পব রফতানি করতে চায়। এরা হিজবুল্লাকে সমর্থন করে। এই হিজবুল্লা ইরানপন্থী প্রতিরোধের অক্ষ। তাই জার্মানিতে (Germany) নিষিদ্ধ।” তিনি বলেন, “আমরা ধর্মের পরিপন্থী নই। আমরা বিশেষত ইসলামিক উগ্রপন্থীদের বিরুদ্ধে। জার্মানিতে যেসব মুসলমান শান্তিতে ধর্মাচরণ করছেন, তাঁদের থেকে এই জঙ্গিদের বিচ্ছিন্ন করতে চাইছি আমরা।” ইন্টিরিয়র মন্ত্রী বলেন, “আমরা একটা সুস্পষ্ট লক্ষ্মণরেখা টানতে চাইছি। যে জঙ্গিদের কোমর ভেঙে দিতে আমরা অভিযান চালাচ্ছি, তাদের সঙ্গে সেই সব মুসলমানদের দূরে রাখতে চাইছি, যাঁরা নিজেদের ধর্ম বিশ্বাস নিয়েই রয়েছেন।” তিনি মনে করিয়ে দেন, “এই নিষেধাজ্ঞা শিয়া ধর্মের শান্তিপূর্ণ অনুশীলনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।”
প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছর ধরে ইরান বিরোধী সাংসদ এবং সমাজকর্মীরা ব্লু-মসজিদ বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তার পরেই শুরু হয় তদন্ত। ২০১৭ সালে গোয়েন্দা সূত্র মারফৎও প্রশাসন খবর পায়, জার্মানিতে ইরানের সরকারপন্থী কার্যকলাপের সব চেয়ে প্রভাবশালী কেন্দ্র এই মসজিদ। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তথ্য সংগ্রহ করতে শুরু করে জার্মান সরকার। তার পরেই নিষেধাজ্ঞা জারি করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। নিষেধাজ্ঞার কথা ঘোষণা করা হয় দিন দুই আগে (Germany)। জানা গিয়েছে, ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদে শিশুদের ইসলামিক শিক্ষা দেওয়া হয় ফার্সি, আরবি এবং জার্মান ভাষায়। এর নেতৃত্ব দিত ইরানি বিপ্লবের কট্টর সমর্থকরা। শিশু মনে তারা পুঁতে দিত ইরানি বিপ্লবের বীজ।
আরও পড়ুন: বাতাসে বারুদের গন্ধ, জেলেনস্কির ডাকে ইউক্রেনে যাচ্ছেন মোদি?
হামবুর্গের নিরাপত্তা মন্ত্রী অ্যান্ডি গ্রোট মসজিদে এই নিষেধাজ্ঞা জারির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “ইসলামিক জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে এটা একটা রামধাক্কা।” ‘ইসলামিক সেন্টার হামবুর্গ’কে তিনি জঙ্গিদের আউটপোস্ট বলেও উল্লেখ করেন। গত নভেম্বরেও মসজিদটিতে অভিযান চালিয়েছিল জার্মান পুলিশ। সেই সময় দেশে চলছিল শিয়া বিরোধী আন্দোলন। এর কিছুদিন আগেই শুরু হয়েছে গাজা-ইজরায়েল লড়াই। জার্মান পুলিশের দাবি, মসজিদটিতে যে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, তার স্বপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। জানা গিয়েছে, ২০২০ সালে হিজবুল্লা এবং ২০২৩ সালে হামাস সমর্থকদের বিরুদ্ধেও কড়া পদক্ষেপ করেছিল জার্মান প্রশাসন। নীল-মসজিদের কাজকর্মকে জার্মানির গোয়েন্দারা সাংবিধানিক নির্দেশের বিরোধী বলে অভিহিত করেছেন। এরা ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা খামেইনির প্রতিনিধিত্ব করছিল। চলতে চাইছিল খামেইনির আদর্শ নিয়ে। এসবই তারা করতে চাইছিল সন্ত্রাসের পথে। সেই কারণেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মসজিদটি।
ইরান সমর্থিত লেবানের জঙ্গি গোষ্ঠী হিজবুল্লা। হিজবুল্লাকে জঙ্গি সংগঠন বলে দেগে দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ২০২০ সালে হিজবুল্লাকে বেআইনি ঘোষণা করে আইসিএইচ-ও। জার্মান (Germany) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই সংগঠন (হিজবুল্লা) মানব মর্যাদা, নারীর অধিকার, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা এবং গণতান্ত্রিক শাসনের বিরোধিতা করে একটি ইসলামপন্থী চরমপন্থী, সর্বগ্রাসী মতাদর্শ প্রচার করে। নিষেধাজ্ঞাটির লক্ষ্যবস্তু যে চরমপন্থী ইসলামিরাই, সে কথাও (Hezbollah) সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বিবৃতিটিতে (Germany)।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।