Shut Down: গৌতম আদানির সংস্থাকে বিপদে ফেলা সেই হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ সংস্থায় পড়ছে ঝাঁপ...
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ সংস্থা।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বন্ধ হয়ে যাচ্ছে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ (Hindenburg Research) সংস্থা। ‘স্বল্পায়ু’ এই সংস্থার প্রকাশ করা রিপোর্টের প্রেক্ষিতে বড়সড় বিপদে পড়েছিল বিভিন্ন সংস্থা। বিপদে পড়েছিল ভারতের আদানি গোষ্ঠীও। শেয়ার বাজারে পতনের পাশাপাশি আইনি ঝামেলায়ও জড়িয়ে পড়ে গৌতম আদানির সংস্থা। পরবর্তীকালে সেবি প্রধান ও তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধেও বড় অভিযোগ এনেছিল এই সংস্থা। এহেন আলোড়ন ফেলা একটি সংস্থার ঝাঁপই (Shut Down) বন্ধ হতে চলেছে। হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিষ্ঠাতা ন্যাথান অ্যান্ডারসন জানান, এই সংস্থা তাঁর জীবনের একটি অধ্যায়, গোটা জীবন নয়। ভেবেচিন্তেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
বুধবার হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি ব্যক্তিগত নোটে ন্যাথান অ্যান্ডারসন বলেন, “কাজের অত্যন্ত তীব্র এবং কখনও কখনও সর্বগ্রাসী প্রকৃতিই আমার এই সিদ্ধান্তের নেপথ্য কারণ।” প্রসঙ্গত ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ। অ্যান্ডারসন লিখেছেন, “এটি অত্যন্ত তীব্র, এবং কখনও কখনও সর্বগ্রাসী ছিল। প্রায়ই ঘুমের মধ্যে আমি নতুন কোনও তদন্তের ধারা নিয়ে ভাবতে ভাবতে জেগে উঠি, অথবা কোনও সম্পাদনার বিষয়ে যা দিনে আমার অজান্তে আমাকে অস্থির করেছিল। অথবা সব কিছুর সাধারণ চাপের কারণে। আমরা ভীতিহীন নই—আমরা কেবল সত্যের প্রতি বিশ্বাস রাখি এবং আশা করি এটি আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করবে।” তিনি আরও বলেন, “অদ্ভুত, হাস্যকর এবং উদ্ভট ঘটনাগুলোর দিনও ছিল।” হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ বন্ধ করার কারণ প্রসঙ্গে অ্যান্ডারসন বলেন, “এর পেছনে কোনও নির্দিষ্ট কারণ নেই— কোনও বিশেষ হুমকি, স্বাস্থ্য সমস্যা, বা বড় কোনও ব্যক্তিগত সমস্যাও নেই।”
আদানি শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবির প্রধানের যোগসূত্রের উল্লেখ করে রিপোর্ট প্রকাশ করে আমেরিকার বেসরকারি সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ। এ নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর যখন তুঙ্গে, তখন একটি বিবৃতি প্রকাশ করে হিন্ডেনবার্গকে পাল্টা আক্রমণ করে শিল্পপতি গৌতম আদানির সংস্থা। গত অগাস্টে আদানি শিল্পগোষ্ঠীর এক মুখপাত্র বিবৃতি দিয়ে বলেছিলেন যে, জনসমক্ষে প্রকাশিত তথ্যের কিছু মিথ্যা, ক্ষতিকর এবং বিদ্বেষমূলক অংশ নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। ব্যক্তিগত লাভের জন্য পূর্ব নির্ধারিত সিদ্ধান্তে আসা হয়েছে। হিন্ডেনবার্গকে আক্রমণ শানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, আমেরিকার এই সংস্থাটির বিরুদ্ধে একাধিকবার ভারতে আইন ভাঙার অভিযোগ উঠেছে।
গৌতম আদানির শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শেয়ার বাজারে অনিয়ম সংক্রান্ত অভিযোগ তুলেছিল হিন্ডেনবার্গ। সে প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আদানি গোষ্ঠীর তরফে বলা হয়েছিল, সবিস্তার তদন্তের পর প্রমাণিত হয়ে গিয়েছিল যে অভিযোগ ভিত্তিহীন। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টও মামলা খারিজ করে দেয় (Shut Down)। হিন্ডেনবার্গ (Hindenburg Research) মার্কিন সংস্থা। সেই সময় তারা এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছিল, আদানিরা বিদেশে যে টাকা সরিয়েছেন, তাতে অংশীদারিত্ব রয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা সেবির প্রধানের। হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল, গৌতম আদানির ভাই বিনোদ আদানির বিদেশে থাকা সংস্থায় অংশীদারিত্ব রয়েছে সেবি প্রধান মাধবী পুরী বুচ ও তাঁর স্বামী ধবল বুচের। যে বছর হিন্ডেনবার্গের জন্ম হয়, সেই বছরই সেবিতে যোগ দেন মাধবী। হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টে এও দাবি করা হয়, সেই সময় সম্ভাব্য নজরদারি এড়াতে মাধবীর নামে থাকা সমস্ত বিদেশি বিনিয়োগ নিজের নামে করে নেন তাঁর স্বামী। রিপোর্টটিকে চরিত্রহননের চেষ্টা বলে উড়িয়ে দেন বুচ দম্পতি। তবে তাতে বিতর্ক থামেনি।
আদানি ও সেবির বিরুদ্ধে হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট প্রকাশিত হয় ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে। এই রিপোর্টকে হাতিয়ার করে মোদির বিরুদ্ধে ময়দানে নেমে পড়েছিল ইন্ডি-জোটের অংশীদাররা। তখনই, হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট নিয়ে জর্জ সরোসের যোগ নিয়ে একটা ইঙ্গিত মিলেছিল। সেই ইঙ্গিত জোরালো হয়ে ওঠে, যখন সরাসরি জর্জ সরোস দাবি করে বসেন যে, হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টের জন্য নরেন্দ্র মোদিকে জবাবদিহি করতে হবে। তখন থেকেই হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টের আসল উদ্দেশ্য সামনে আসতে থাকে। বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, বিদেশ থেকে ভারতের লোকসভা নির্বাচনকে প্রভাবিত করার ‘অপচেষ্টা’ চলছে।
এর মধ্যেই ফাঁস হয়ে যায় ন্যাথান অ্যান্ডারসনের সরাসরি যোগাযোগের বিষয়টি। কী ছিল সেই যোগসূত্র? হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টকে হাতিয়ার করে মার্কিন আদালতে আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি এবং সাতজন অন্যান্য এক্সিকিউটিভ আধিকারিকের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও ঘুষের অভিযোগ এনেছিলেন নিউইয়র্কের ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্টের মার্কিন অ্যাটর্নি ব্রিয়ন পিস। জানা যায়, এই ব্রিয়নের স্ত্রী যে সংস্থার অন্যতম শীর্ষ ডিরেক্টর, সেই (এনজিও) সংস্থাটির মালিক হলেন ব্রায়ান স্টিভেনসন, যিনি কিনা আবার সরোসের মালিকানধীন ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনের বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যও বটে। ফলে, সরোসের সঙ্গে পিস দম্পতির যোগসাজস পরিষ্কার হয়ে যায়। কাকতালীয়ভাবে, এর পরেই ব্রিয়ন পিস তাঁর পদত্যাগের কথা ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য যে, নাথান অ্যান্ডারসনের হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ বন্ধ করার ঘোষণাটি এমন একটি সময়ে এল যখন দিন কয়েকের মধ্যে ৪৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিতে চলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার আগেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এই সংস্থা। হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ বন্ধের সময় জন্ম দিয়েছে বহু প্রশ্নের। এই সিদ্ধান্তটি এমন একটি সময়ে এল যখন হাউস জুডিশিয়ারি কমিটির সদস্য রিপ্রেজেন্টেটিভ ল্যান্স গুডেন ১৪ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে অ্যাটর্নি জেনারেল মেরিক গারল্যান্ডকে চিঠি লিখে আদানি গ্রুপের তদন্ত সম্পর্কিত ন্যায়বিচার বিভাগের সমস্ত নথি ও রেকর্ড প্রকাশ করার দাবি জানান (Hindenburg Research)।
এর আগে রিপাবলিকান নেতা আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে ওঠা বিতর্কিত অভিযোগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। ৭ জানুয়ারি গারল্যান্ডকে লেখা এক চিঠিতে ল্যান্স গুডেন বলেছিলেন, “অভিযোগে যেসব ঘটনার কথা বলা হচ্ছে, সেগুলি সবই ভারতে ঘটেছে। এখানে শুধুমাত্র ভারতীয় নাগরিক ও কর্তারা জড়িত, কোনও মার্কিন স্বার্থের ক্ষতি হয়নি (Shut Down)।” তিনি আরও বলেন, “যদি অভিযোগ প্রমাণিতও হয়, তবে এ ক্ষেত্রে আমেরিকা চূড়ান্ত বিচারক হতে পারে না। কারণ এতে কোনও মার্কিন পক্ষের জড়িত থাকার প্রমাণ নেই (Hindenburg Research)।”
আরও পড়ুন: কুম্ভে আসতে চেয়েছিলেন স্টিভ জোবস, বন্ধুকে জানিয়েছিলেন, সেই চিঠি বিক্রি হল ৪.৩২ কোটিতে
গুডেন অবশ্য দাবি করেন, “আদানি মামলার অভিযোগ, যদি প্রমাণিতও হয়, তবুও আমেরিকাকে এই বিষয়ে চূড়ান্ত এবং যথোপযুক্ত বিচারক করে তোলে না। এই ‘ঘুষ’গুলো অভিযোগ অনুযায়ী ভারতের রাজ্য সরকারের কর্তাদের কাছে, ভারতে, একটি ভারতীয় কোম্পানির ভারতীয় কর্তারা দিয়েছেন, যেখানে কোনও মার্কিন পক্ষের সরাসরি জড়িত থাকার বা ক্ষতির প্রমাণ নেই। অন্যদিকে, স্মার্টম্যাটিক একটি আমেরিকান কোম্পানি, যা আমাদের নির্বাচনের দায়িত্বে ছিল, তার কর্তারা অর্থপাচার এবং বিদেশি সরকারকে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিল ন্যায়বিচার বিভাগের অভিযোগ অনুযায়ী। তবে, আমার সহকর্মী এবং আমি বহুবার চেষ্টা করেও নির্বাচনের আগে এই বিষয়ে আপনার বিভাগ থেকে কোনও ব্রিফিং পাইনি।”
রিপাবলিকান ওই নেতা বলেন, “যদি এই মামলাটির (Hindenburg Research) সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ থাকে, তবে বিচার বিভাগ কেন এখনও একজন আমেরিকানকেও অভিযুক্ত করেনি? এই চক্রান্তের যে অভিযোগ উঠেছে, তাতে কি কোনও আমেরিকান জড়িত ছিল না? গৌতম আদানির বিরুদ্ধে কেন বিচার বিভাগ এই মামলা পরিচালনা করছে, যখন অভিযোগের ঘটনাটি ভারতের সঙ্গে সম্পর্কিত (Shut Down)?
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।