Maldives: মলদ্বীপকে ভারতের ওপর নির্ভর করতেই হবে, কেন জানেন?...
মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জু। এঁর অতিরিক্ত চিন-প্রীতিই সমস্যার মূলে। ফাইল ছবি।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মলদ্বীপের সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ফিরেছে চিনপন্থী মুইজ্জু সরকারের দল পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেস। সম্প্রতি নির্বাচন হয়েছে সে দেশে। ক্ষমতায় আবারও এসেছে প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জুর সরকার। তার পরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে একদা (India Maldives Relation) ‘পরমমিত্র’ ভারতের সঙ্গে মলদ্বীপের নয়া সরকারের সম্পর্ক কী হবে? বিশেষত মুইজ্জুর চিন-প্রেমের পাশাপাশি ভারত-বিরোধিতা যেখানে জলের মতো স্পষ্ট।
মুইজ্জুর সঙ্গে পিপলস মজলিশের দ্বন্দ্বের মধ্যেই মলদ্বীপে হয়েছে নির্বাচন। যার জেরে স্থগিত হয়ে গিয়েছে তাঁর মন্ত্রিসভার তিন সদস্যের নিয়োগ। তা সত্ত্বেও বিপুল ভোটে জিতে ফের মলদ্বীপের ক্ষমতায় এসেছে মুইজ্জুর দল। ধরাশায়ী হয়েছে মলদ্বিভিয়ান ডেমক্র্যাটিক পার্টি। উনিশের সাধারণ নির্বাচনে যে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল মলদ্বিভিয়ান ডেমক্র্যাটিক পার্টি, প্রায় সেরকমই জনসমর্থন নিয়েই ক্ষমতায় এসেছে মুইজ্জুর দল। মুইজ্জুর দল যেখানে চিনপন্থী, সেখানে মলদ্বিভিয়ান ডেমক্র্যাটিক পার্টি তাদের ভারত-প্রেমের জন্য জনপ্রিয় সে দেশে। মুইজ্জুর সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই ভারতের সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে শুরু করে মলদ্বীপ প্রশাসন (India Maldives Relation)। ঘনিষ্ঠ হতে থাকে ড্রাগনের দেশের সঙ্গে। ভারতের পরিবর্তে চিনের অর্থনৈতিক সাহায্যের প্রত্যাশী হয় মুইজ্জু সরকার। তবুও মলদ্বীপ সরাসরি ভারতের বিরোধিতা করতে পারেনি। কারণ ভারতের সঙ্গে মলদ্বীপের রয়েছে ভৌগোলিক নৈকট্য।
মনোহর পরিক্কর ইনস্টিটিউট অফ ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালিসিসের রিসার্চ ফেলো স্মূর্তি পট্টনায়েক বলেন, “যে নেতাই ক্ষমতায় আসুন না কেন, তাঁকে প্র্যাগমেটিক (বাস্তবপন্থী) হতেই হবে।” দক্ষিণ এশিয় এই বিশেষজ্ঞ সংবাদ মাধ্যমে বলেন, “নির্বাচনী প্রচারের বক্তৃতাগুলি ছিল আলাদা আলাদা।” গত নির্বাচনেই প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হয়েছিলেন মুইজ্জু। ভারত-বিরোধিতাকেই হাতিয়ার করে তার দল পার হয়েছিল ভোট-বৈতরণী। প্রচার করতে গিয়ে তিনি জোর দিয়েছিলেন ‘ইন্ডিয়া আউট’ স্লোগানে। ভারতের যে কয়েকজন সেনা জওয়ান মলদ্বীপে শান্তিরক্ষার কাজে নিয়োজিত ছিলেন, তাঁদেরও দ্বীপরাষ্ট্র ছেড়ে চলে যাওয়ার আওয়াজ তোলেন। ভারতীয় এই সেনার সংখ্যাটা একশোরও কম। ভারত-বিরোধী হাওয়া জোরালো করে প্রেসিডেন্ট পদে বসেন মুইজ্জু। তার পরেই সরিয়ে দেওয়া হয় সে দেশে থাকা ভারতীয় জওয়ানদের।
গত ডিসেম্বরে ভারতের সঙ্গে জলভাগের মানচিত্র চুক্তি পুনর্নবীকরণ করার সিদ্ধান্ত নেয় মলদ্বীপ প্রশাসন (India Maldives Relation)। জাতীয় সুরক্ষার স্বার্থেই এই চুক্তি পুনর্নবীকরণ করার সিদ্ধান্ত নেয় দ্বীপরাষ্ট্রটি। এই চুক্তি প্রথম স্বাক্ষরিত হয়েছিল ২০১৯ সালের ৮ জুন, মোদির মলদ্বীপ সফরের সময়। দ্বীপরাষ্ট্র থেকে ভারতকে সেনা প্রত্যাহার করে নিতে বলার পর চলতি বছরের জানুয়ারিতে চিনা জলযানকে রিসার্চ ওয়ার্কের জন্য নিজেদের জলসীমায় প্রবেশ করানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় মুইজ্জু সরকার। চিনের এই চর জাহাজ যাতে মলদ্বীপের জলসীমায় না ঢোকে সে জন্য নানাভাবে মুইজ্জু প্রশাসনকে চাপ দিতে থাকে ভারত। দক্ষিণ ভারত মহাসাগরে যাতে চিনের ওই গুপ্তচর জাহাজ (যাকে গবেষণার কাজে ব্যবহৃত জাহাজ বলে দাবি করছে চিন) যাতে না নোঙর করে, সেজন্য নয়াদিল্লির তরফে অব্যাহত হতে থাকে মুইজ্জু প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। তা সত্ত্বেও ভারত মহাসাগরে মলদ্বীপের জলসীমানয় নোঙর করেছিল ওই চিনা চর জাহাজ।
ভারত-মলদ্বীপের এসব মন কষাকষির মধ্যেই গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো প্রকাশ্যে চলে আসে মলদ্বীপের তিন জুনিয়র মন্ত্রীর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য। পরে আবার ভারতের জাতীয় পতাকাকে অপমান করেন সে দেশের মুইজ্জু সরকারের বরখাস্ত হওয়া এক মন্ত্রী। এসবের জেরেই ভারত-মলদ্বীপ সম্পর্কে চিড় ধরে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যা পরিণত হয়েছে গভীর ফাটলে। অথচ নয়াদিল্লির ‘প্রতিবেশী প্রথম নীতি’ অনুযায়ী ভারতের কাছে মলদ্বীপের গুরুত্ব কম নয়। কারণ ভারত মহাসাগরে এই দেশটির অবস্থান। ভারতের (India Maldives Relation) সঙ্গে মলদ্বীপের এথনিক, লিঙ্গুইসটিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় এবং বাণিজ্যিক বিষয়-আশয় আদান-প্রদান হয়। সেই কারণেই ভারত বরাবর মলদ্বীপের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। মুইজ্জু প্রশাসনের ভারত-বিরোধিতার মাঝেও কূটনৈতিকস্তরে আলোচনা চালিয়ে মলদ্বীপের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি করতে চাইছে নয়াদিল্লি। তবে ভারতের এই প্রচেষ্টায় পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে দ্বীপরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের অত্যধিক চিন-প্রীতি।
আরও পড়ুুন: “আত্মনির্ভর হোন, সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভাবুন”, মুসলিমদের উদ্দেশে বললেন মোদি
ভারত মহাসাগরের একটি দেশ হওয়ায় মলদ্বীপকে যতটা প্রয়োজন ভারতের, দ্বীপরাষ্ট্রেরও তার চেয়ে বেশি প্রয়োজন ভারতকে। সেই কারণেই তীব্র ভারত-বিরোধী অবস্থান নিতে পারছে না মুইজ্জু প্রশাসন। এর একটা কারণ যদি হয়, ভারতের সঙ্গে মলদ্বীপের ভৌগোলিক দূরত্ব, তবে অন্য কারণটি অবশ্যই পর্যটনগত। চিনের সঙ্গে মলদ্বীপের যা দূরত্ব, তার চেয়ে ঢের কম ভারতের সঙ্গে দূরত্ব। তাছাড়া, পর্যটন শিল্প নির্ভর দেশ মলদ্বীপ। প্রতি বছর যত পর্যটক মলদ্বীপে বেড়াতে আসেন, তার সিংহভাগই ভারতীয়। তাই ভারতকে সমঝে চলাই দস্তুর বলে মনে করে মলদ্বীপ প্রশাসন। সর্বোপরি, মলদ্বীপ প্রশাসনের মাথার ওপর রয়েছে বিপুল দেনার বোঝা। ২০২৩ সালের মধ্যেই ভারতকে ৪০০.৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ ফেরানোর কথা ছিল মুইজ্জু সরকারের। বছর পেরিয়ে গিয়ে নতুন বছরের মাঝামাঝি হতে চলল, সে ঋণ শোধ করেনি মালে (মলদ্বীপের রাজধানী)। এসবের জেরেই মলদ্বীপ প্রশাসনের পক্ষে তীব্র ভারত-বিরোধী অবস্থান নেওয়া প্রায় অসম্ভব বলেই ধারণা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের। তাই ভারতের মুখেপেক্ষী হয়ে থাকা ছাড়া আর কোনও উপায়ই নেই মুইজ্জু সরকারের সামনে (India Maldives Relation)।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।