Bangladesh: বাংলাদেশে কেন ইসকনকে টার্গেট করছে ইসলামি মৌলবাদীরা? নেপথ্যে রয়েছে যে কারণ...
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু আন্দোলন (সংগৃহীত ছবি)
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশের (Bangladesh) ইউনূস সরকারের প্রাণ ভোমরা রয়েছে বিএনপি সমেত মৌলবাদীদের হাতে। এমন অবস্থায় সে দেশে হিন্দুদের ওপর একের পর এক আক্রমণের ঘটনা ঘটেই চলেছে। সম্প্রতি চট্টগ্রামে ওসমান নামের স্থানীয় এক ব্যবসায়ী সমাজ মাধ্যমে ইসকনের (ISKCON) বিরুদ্ধে একটি পোস্ট করেন। এই পোস্টে ইসকনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার দাবি জানানো হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয় চট্টগ্রাম। প্রশাসনের তরফ থেকেও পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার জন্য ইসকনকে দায়ী করা হয়। অনেকেই মনে করছেন বাংলাদেশে ইসকনকে নিষিদ্ধ করে ইউনূস সরকার উগ্র মৌলবাদীদের খুশি করার চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু বেছে বেছে ইসকনকে টার্গেট করা হচ্ছে কেন? এর কিছু কারণ রয়েছে।
বিশ্লেষকরা জানাচ্ছেন, ইসকনের সন্ন্যাসী ও ব্রহ্মচারীরা সেদেশের জাগরণ মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত। এই জাগরণ মঞ্চের সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন হিন্দু ধর্মীয় মঠ, মন্দির, প্রতিষ্ঠানও যুক্ত রয়েছে। সংখ্যালঘুদের ওপর মৌলবাদীদের আক্রমণের প্রতিবাদে গত মাসের ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামে একটি বিরাট সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এই সমাবেশের পরে ঢাকাতেও একটি বিরাট সমাবেশ করা হয়েছিল। সেখানে নিজেদের নিরাপত্তার দাবি তুলেছিলেন হিন্দুরা। ঢাকায় সমাবেশকে সফল করার পিছনে জাগরণ মঞ্চের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। চট্টগ্রাম এবং ঢাকায়- এই দুই জায়গার সমাবেশ, ইউনূস সরকারের আমলে সে দেশের সংখ্যালঘু নির্যাতনকে সারা বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে সমর্থ হয়েছিল এবং এতে বিপাকে পড়তে হয়েছিল ইউনূস সরকারকে। কারণ হিন্দুদের ওপর লাগাতার হামলার কথা তারা অস্বীকার করে আসছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনাকে নাকি অতিরঞ্জিত করে দেখানো হচ্ছে, এমনও বক্তব্য সামনে এসেছে, ইউনূস সরকারের বিভিন্ন কর্তা ব্যক্তিদের মাধ্যমে। কিন্তু চট্টগ্রাম ও ঢাকায় যে সংখ্যালঘুদের সমাবেশ হয়, তা প্রমাণ করে যে ইউনূস সরকারের এমন বক্তব্য ঠিক কত বড় মিথ্যা এবং বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রকৃত দুর্দশা ঠিক কতটা!
প্রসঙ্গত, সংখ্যালঘু হিন্দুরা ইউনূস সরকারের কাছে নিজেদের দাবিও পেশ করেন। এই দাবিগুলির মধ্যে ছিল- সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রক গঠন, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য সংসদে আসন সংরক্ষণ, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনার যারা অভিযুক্ত, তাদের বিচারের জন্য ট্রাইবুনাল গঠন, হামলায় যে সমস্ত সংখ্যালঘু হিন্দুদের ক্ষতি হয়েছে, তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া, সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে সংখ্যালঘুদের উপাসনালয় নির্মাণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলগুলির আধুনিকীকরণ, পালি ও সংস্কৃত শিক্ষা বোর্ডের সংস্কার, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টিকে ফাউন্ডেশনে উন্নত করা, প্রতিবছর দুর্গাপুজোতে পাঁচ দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা। এই সমস্ত দাবিগুলি নিয়েই সে দেশের হিন্দুরা লাগাতার আন্দোলনে নেমেছেন। একের পর এক সমাবেশ করেছেন। সাম্প্রতিক ইতিহাসে বাংলাদেশে হিন্দুরা, এর আগে কখনও নিজেদের এতটা সংগঠিত করেননি। এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এত বড় সমাবেশ কখনও সে দেশে হতে দেখা যায়নি। বাংলাদেশে হিন্দুদের এমন প্রতিবাদ, গর্জে ওঠা- এই সমস্ত কিছুই সে দেশের কট্টরপন্থী উগ্র ইসলামিক মৌলবাদীদের চমকে দিয়েছে। উগ্র মৌলবাদীদের অনেকেই আবার বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের মন্ত্রীও হয়ে রয়েছেন।
স্বরাজ্য পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, আওয়ামী লিগের সঙ্গে যুক্ত ঢাকার এক হিন্দু আইনজীবী বলছেন, ‘‘উগ্র ইসলামিক মৌলবাদীরা কখনও ভাবতে পারেনি যে হিন্দুরা এত বড় সমাবেশ করবে এবং নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে এমনভাবে তাঁরা দাবি জানাবেন। কারণ উগ্র মৌলবাদীরা, সর্বদাই আশা করতেন যে হিন্দুরা বিনয়ী হবেন। তাঁরা বাধ্য হবেন এবং বাংলাদেশে তাঁদের দুঃখজনক পরিণতিকে তাঁরা মেনে নেবেন,- এমনটাই মনে করছিলেন উগ্র মৌলবাদীরা। স্বাভাবিকভাবে সে দেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের এমন প্রতিবাদকে মৌলবাদীরা মেনে নিতে পারছেন না।’’ প্রসঙ্গত, সম্প্রতি চট্টগ্রামে হিন্দুদের সমাবেশ যেদিন করা হয় দিনটি ছিল শুক্রবার। শুক্রবার সমাবেশ করাকেও মৌলবাদীরা আবার ভালো চোখে দেখছেন না। কারণ শুক্রবার ইসলামে পবিত্র দিন মানা হয়। মৌলবাদীদের মতে, শুক্রবার সমাবেশের ডাক দিয়ে নাকি তাঁদের প্রতি অবমাননা করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, হিন্দুদের এই জাগরণে সে দেশে ইসকন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আন্তর্জাতিক স্বনামধন্য এই সংস্থার সন্ন্যাসী হলেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস। যিনি জাগরণ মঞ্চের নেতৃত্ব প্রদান করছেন এবং নির্যাতিত হিন্দুদের আওয়াজ বিশ্বের মঞ্চে তুলে ধরছেন। এই আবহে ওয়াকিবহাল মনে করছে যে ইসকনকে টার্গেট করে আসলে ইউনূস সরকার, বাংলাদেশের হিন্দুদের কাছে একটি বার্তা পাঠাবে, আন্দোলন করার জন্য চরম মূল্য দিতে হল ইসকনকে। এতে খুশি করা যাবে বাংলাদেশের (Bangladesh) মৌলবাদীদেরও।’’ ঠিক এই কারণেই চট্টগ্রাম সমাবেশের ঠিক একদিন পরেই ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস সমেত ১৮ জনের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ। বাংলাদেশের বিএনপি'র স্থানীয় নেতা ফিরোজ খানের অভিযোগের ভিত্তিতে অন্যান্য ১৯ জনের বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা হয়। প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওই ঐতিহাসিক সমাবেশ লালদিঘি ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
সমাবেশের সঙ্গে যুক্ত অন্যতম উদ্যোক্তা চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ী কার্তিক পাল স্বরাজ্য পত্রিকাকে টেলিফোনে বলেন, ‘‘গত এক নভেম্বরের ওই সমাবেশে ইউনূস সরকার মনে করছে অত্যধিক পরিমাণে বাড় বেড়েছে হিন্দুদের। তাঁদের এজন্য সবক শেখানো দরকার। ঠিক এই কারণেই অত্যন্ত সহজ উপায় ছিল ইসকনকে (ISKCON) টার্গেট করা। কারণ হিন্দুদের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান সে দেশে ইসকন। বড় অংশের হিন্দুরাই সেই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। তাই ইসকনকে টার্গেট করে হিন্দুদেরকে সবক শেখাতে চাইছে আসলে ইউনূস সরকার।’’
প্রসঙ্গত, এর পরই গত ৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের ওসমান মোল্লার ইসকনকে নিয়ে সমাজ মাধ্যমে অপমানজনক পোস্টের বিরুদ্ধে হিন্দুরা সংগঠিতভাবে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতেই নামাতে হয় সেনাবাহিনীকে। সেনার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে, হিন্দুদের বাড়িতে ঢুকে তারা লুটপাট চালিয়েছে। মূল্যবান জিনিসপত্র যেমন ভাঙচুর করেছে তেমনই মহিলাদেরও শ্লীলতাহানি করেছে তারা। স্বরাজ্য পত্রিকার প্রতিবেদন অনুসারে, কয়েকজন মহিলাকে গণধর্ষণও করা হয়েছে। নিরাপত্তা কর্মীরা নিজেদের এই তাণ্ডবকে আড়াল করতে নাকি সিসিটিভি ক্যামেরাও ভেঙে দিয়েছে বলে অভিযোগ। গত ৬ নভেম্বরের এই ঘটনার জন্য বাংলাদেশের প্রশাসন আবার উল্টে ইসকনকেই দায়ী করেছে। এক প্রশাসনের আধিকারিক জানিয়েছেন, অশান্তি সৃষ্টি ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে ৫৮২ জন হিন্দুর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এর পিছনে ইসকনের সমর্থকরা জড়িত ছিল বলে অভিযোগ করেন ওই আধিকারিক।
একইসঙ্গে ঢাকার হিন্দু সমাজের অন্যতম নেতা সুধাংশু পাল, স্বরাজ্য পত্রিকাকে বলেন, ‘‘ইসকনের বিরুদ্ধে প্রশাসনের এমন অভিযোগ আসলে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কারণ প্রশাসন ইসকনকে নিষিদ্ধ করার জন্য ও ইসলামপন্থীদের প্রচারে আরও অক্সিজেন দেওয়ার জন্য এধরনের অভিযোগ আনছে। প্রশাসনের এমন অভিযোগের পরে, ইসকনের ওপর ইউনূস সরকার সহজেই নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারবে। এতে বাংলাদেশের হিন্দুদের মনোবলও ভেঙে দেওয়া যাবে।’’
প্রসঙ্গত, ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে সেদেশের মৌলবাদী সংগঠন হেফাজতে-ইসলাম গতকাল শুক্রবার একটি মিছিল করে। সে নিয়ে একটি ভিডিও পোস্ট করেন শুভেন্দু অধিকারী। (যদিও সেই ভিডিও-র সত্যতা যাচাই করেনি মাধ্যম)। নিজের পোস্টে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জানান, আন্তর্জাতিক সংস্থা ইসকন। ৭৬টা দেশে যার শাখা রয়েছে, হরে কৃষ্ণ আন্দোলনকে, যারা ছড়িয়ে দিচ্ছে পৃথিবীজুড়ে, সেই ইসকনের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে বাংলাদেশে। তার কারণ সেখানকার সন্ন্যাসী এবং ব্রহ্মচারীরা হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনার আওয়াজ তুলছেন।
International Society for Krishna Consciousness or ISKCON; a Hindu Vaishnavite order is under 'concerted' attack in Bangladesh.
— Suvendu Adhikari (@SuvenduWB) November 8, 2024
ISKCON is an internationally reputable religious organisation with presence in over 76 countries, spearhead the Hare Krishna Movement & following the… pic.twitter.com/UcdfVezvi9
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।