ISKCON: ‘‘ইসকনকে তলোয়ার দিয়ে কোপাতে হবে’’! চরম উস্কানিমূলক মন্তব্য কট্টর ইসলামি জেহাদিদের, কোন পথে যাচ্ছে বাংলাদেশ?
বাঁ দিকে রাধারমণ দাস এবং ডানদিকে এম সাব্বির বিন লোকমান। সংগৃহীত চিত্র।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: “ইসকন (ISKCON) ক্যান্সারের মতো উপড়ে ফেলতে হবে”, ভয়ঙ্কর গুজব ছড়িয়ে বাংলাদেশে (Bangladesh) ব্যাপক উস্কানি দিচ্ছে জামাতপন্থী কট্টর মোল্লা-মৌলবীরা। ইসকনের মতো আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনায় মানবসেবায়রত একটি ধর্মীয় সংগঠন সম্পর্কে অপপ্রচারের নেমেছে কট্টর ইসলামি জেহাদিরা। একটাই রাগ, মুসলমান শাসিত বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর নির্যাতন হলে ইসকন কেন পাশে দাঁড়ায়? ইসকনের কৃষ্ণমূর্তি পুজো এবং হিন্দু রীতিতে পুজো করা জেহাদিদের কাছে সেরকি। শারিয়া শাসন ইসালাম ব্যাতিত অন্য কোনও ধর্ম-বর্ণের মানুষকে কাফের মনে করে। তাই তো দাবি উঠেছে সারা বাংলাদেশে ইসকনের সকল মঠ-মন্দির, উপাসনাকেন্দ্রকে ভেঙে দিতে হবে। যদিও ইসকন সম্পর্কে কট্টর মুসলমানদের এই ভাবনার তীব্র সমালোচনা করেছে বিশ্বের বহুদেশ।
গত নভেম্বর মাসের শেষে হিন্দু ধর্মগুরু চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে মিথ্যা মামলা দিয়ে বাংলাদেশের (Bangladesh) অন্তর্বর্তী সরকার গ্রেফতার করেছে। তাঁর আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য আইনজীবীদের উপর ব্যাপক হামলা করা হয়। শুনানির দিন আদালত চত্বরে প্রবেশ করতে পারেনি কোনও হিন্দু আইনজীবী। এই বিষয়ে সরব হয়েছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অথচ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং ভারতীয় সেনার অবদানকে অস্বীকার করে ভারতের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি দিচ্ছে ইসলামি মৌলবাদীরা। শুধু এখানেই শেষ নয়, ওইদেশে মুসলমানদের একাধিক ধর্মীয় সভা বা ওয়াজ মেহফিলে চূড়ান্ত হিন্দু (ISKCON) বিদ্বেষী মনোভাব নিয়ে উস্কানি দেওয়া হচ্ছে। কখনও বলছে, ‘হিন্দু দোকান থেকে মিষ্টি কেনা পাপ’, ‘ইসকন সামাজিক ক্যান্সার’, আবার বলা হচ্ছে ‘তলোয়ার দিয়ে কোপাতে হবে’। ইসকনকে ক্যান্সারের সঙ্গে তুলনা করে বলা হচ্ছে, ‘‘শরীরের কোথাও ক্যান্সার হলে যেমন অঙ্গ কেটে বাদ দিতে হয়, ঠিক একইভাবে বাংলাদেশের শেকড় থেকে ইসকনকে উপড়ে ফেলতে হবে। আর যদি এই কাজে কেউ বাধা দেয় তাহলে তাদেরসঙ্গেও একই আচরণ কড়া হবে। ইসকনের সব আস্তানা ভেঙে ফেলতে হবে। অবিলম্বে ইসকনকে নিষিদ্ধ করতে হবে।’’ এই রকম নানা বিদ্বেষ এবং হিংসাত্মক কথা কীভাবে বাংলাদেশের আমজনতার সামনে তুলে ধরা হচ্ছে, এই সম্পর্কিত একটি ভিডিও পোস্ট করেন কলকাতা ইসকনের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাধারমণ দাস। হিন্দুধর্মাবলম্বীরা কতটা অসুরক্ষিত তা আরও একবার প্রমাণিত হল বাংলাদেশে।
এই প্রকাশিত ভিডিও-র বক্তব্য শুনলে যে কোনও মানুষের ঘুম ছুটে যাবে। উগ্র মুসলমানরা কীভাবে বাংলাদেশের (Bangladesh) জনমানসের মনে মিথ্যাকথা বলে উস্কানি দেয় তার কথাই এই ভিডিওগুলিতে শোনা যাচ্ছে। এম সাব্বির বিন লোকমান নামক এক বক্তা প্রকাশ্য মাইকে বলছেন, “আমি আসতে আসতে রাস্তায় অনেক পোস্টার এবং মন্দির দেখেছি। ইসকনকে (ISKCON) সারা বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করতে হবে। সারা বাংলাদেশে এদের যেখানে আস্তানা রয়েছে ভেঙে দিতে হবে। যারা এদের দোসর হবে, যারা এদের রক্ষক হবে, তাদেরকেও চিরতরে মুছে দিতে হবে। এরা সমাজে ক্যান্সারের মতো। ক্যান্সারের কোনও উত্তর নেই, যেখানে ক্যান্সার হয়, সেই অঙ্গ কেটে বাদ দিতে হয়, নইলে সারা দেহে ছড়িয়ে যায়। ইসকন কেও শেষ করতে হবে।”
In the past few days, fundamentalists in Bangladesh have been crisscrossing the country in private jets, delivering sermons calling for the extermination of ISKCON devotees and their supporters. This open call for genocide against minorities in Bangladesh is shocking, and the… pic.twitter.com/SUQphC08n7
— Radharamn Das राधारमण दास (@RadharamnDas) December 8, 2024
আবার বাংলাদেশের (Bangladesh) আরেক মৌলবাদী নেতা রফিকুল ইসলাম মাদানি বলেন, “এখন হাসিনার সময় নেই, রাজনীতি করার সময় নেই, আমাদের ঠান্ডা মাথায় কথা বলা সম্ভব নয়, তলোয়ারের ভাষায় কথা হবে। আগামী ২ এক দিনের মধ্যে ইসকনকে বন্ধ করতে হবে। হাসিনার প্রেতাত্মারা ইসকনের উপর ভর দিয়ে শাসনে ফিরতে চায়। মাহফিলে থাকার সময় নেই। ইসকনের (ISKCON) পান্ডারা আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে যে ভাবে কুপিয়ে মেরেছে, ওদেরকেও কোপাতে হবে। জেহাদের এটাই আসল সময়। প্রত্যেক মুসলমানকে হাতে অস্ত্র তুলে নিতে হবে। বিধর্মীদের যেখানে পাবে কুপিয়ে মারতে হবে।” এই মন্তব্য অত্যন্ত বিদ্বেষ মূলক।
আরও পড়ুনঃ চিন্ময় প্রভুর মুক্তির দাবি জানিয়ে ইউনূসকে চিঠি দিল বাংলাদেশের রামকৃষ্ণ মঠ-মিশন
কলকাতা ইসকনের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাধারমণ দাস বলেন, “আমি বাংলাদেশ (Bangladesh) থেকে এই ভিডিওগুলি পেয়েছি। বাংলাদেশে মৌলবাদী জেহাদিরা এই ভাবে উস্কানি দিচ্ছে। ইতিমধ্যে ব্রিটেনের ৩ জন সাংসদ ব্যাপক ভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশের রামকৃষ্ণ মিশন শাখা চিঠি লিখে চিন্ময়কৃষ্ণ প্রভুর মুক্তি চেয়েছেন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের করজোরে নিবেদন যে, হিন্দুদের নিরাপত্তা দেওয়া হোক। ওই দেশের সংখ্যালঘুরাও দেশভক্ত। মৌলবাদীরা ঘুরে ঘুরে উত্তেজক ভাষণ এবং হিংসা ছড়াচ্ছে। অত্যন্ত উদ্বেগের কারণ এটা।”
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।