Mosquito: ম্যালেরিয়া মশার বংশ ধ্বংস করতে কী পদ্ধতি আবিষ্কার করলেন বিজ্ঞানীরা?
ম্যালেরিয়া মশার বংশ ধ্বংস করতে উদ্যোগী বিজ্ঞানীরা (প্রতীকী ছবি)
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ম্যালেরিয়ার (Malaria) মশার বংশ ধ্বংস করতে জিনতত্ত্বের নতুন প্রায়োগিক পদ্ধতি আবিষ্কার করলেন পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বার্কিনা ফাসো ও আমেরিকার বিজ্ঞানীরা। পদ্ধতিটি প্রয়োগ করেও নাকি সাফল্য পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি। 'নেচার' জার্নালেরই একটি বিভাগ 'সায়েন্টিফিক রিপোর্টস'-এ এই গবেষণা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
এমনিতেই হাজার চেষ্টা করেও ম্যালেরিয়ার (Malaria) মশার বংশ ধ্বংস করা যায়নি। বরং বিভিন্ন সময়ে বিজ্ঞানীরা যে রক্ষাকবচ তৈরি করেছেন, তা ভেদ করতে সক্ষম হয়েছে তারা। ম্যালেরিয়ার বাহক অ্যানোফিলিস মশারা দিনে দিনে তাদের চরিত্র বদলে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। রাসায়নিক স্প্রে, কীটনাশক প্রয়োগ করে সাময়িক ভাবে তাদের রুখে দেওয়া হয়তো সম্ভব, কিন্তু তাতে সুদূরপ্রসারী ফল মেলে না। রাসায়নিকের প্রভাব কেটে গেলে ফের স্বমহিমায় ফিরে আসে তারা। তাই মশা মারতে আর কামান না দেগে বরং জিনবিদ্যাকেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। আর নতুন পদ্ধতিটি আগের পদ্ধতিগুলির চেয়ে অনেকটাই আলাদা। জানা গিয়েছে, এমন কিছু ছত্রাক আছে, যারা মাটিতে বা জলে জন্মায় এবং কীটপতঙ্গের শরীরে ঢুকলে বিষক্রিয়া করতে পারে। এদের বলে 'এন্টোমোপ্যাথোজেনিক ফাঙ্গাস'। এই প্রজাতির কিছু ছত্রাককে নিয়েই গবেষণাটি করেছেন বিজ্ঞানীরা। ছত্রাকগুলিকে গবেষণাগারে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়েছে। এর পর সেগুলিতে জিনগত বদল ঘটিয়েছেন বিজ্ঞানীরা, যাতে সেগুলি প্রাণঘাতী বিষ তৈরি করতে পারে। পুরুষ মশার শরীরে এই ছত্রাকের রেণু ঢুকিয়ে দিতে পারলেই কেল্লাফতে! 'জেনেটিক মিউটেশন'-এর কারণে ছত্রাক কেবল বিষই তৈরি করবে না, পুরুষ মশার শরীরে ঢুকে তাদের চরিত্রও বদলে দেবে। পুরুষ মশার শরীরে ঢুকবে মারণ ছত্রাকের রেণু। তাই বয়ে নিয়ে গিয়ে স্ত্রী মশাদের আকৃষ্ট করে প্রেমের জালে ফাঁসাবে পুরুষেরা। মিলন হলেই সর্বনাশ। সঙ্গমের পরেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে স্ত্রী মশারা।
আরও পড়ুন: ‘ঘটনা বিরলতমই’! আরজি করে নির্যাতিতার বাড়িতে শুভেন্দু, আজ শুনানি সুপ্রিম কোর্টে
গবেষকরা বলেন, "ছত্রাক পুরুষ মশার শরীরে তেমন প্রভাব ফেলবে না। কারণ, পুরুষ অ্যানোফিলিস মশা বাহকের (Malaria) কাজ করবে। ছত্রাক বয়ে নিয়ে গিয়ে তারা স্ত্রীদের আকৃষ্ট করবে। সঙ্গমের পরেই স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশার শরীরে ঢুকে যাবে সেই ছত্রাকের রেণু। আর এর পরেই রোগ ছড়াবে দ্রুত। ছত্রাক শরীরে ঢোকার ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু হবে স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশার।" আমেরিকা ও পশ্চিম আফ্রিকার বিভিন্ন জায়গায় এই পরীক্ষা করে ভাল ফল পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই পদ্ধতি সম্পর্কে চিকিৎসক অনির্বাণ দলুইয়ের মত, "জিনগত রূপান্তর ঘটিয়ে মশার বদল আগেও করা হয়েছে। যদিও সার্বিকভাবে সব জায়গায় এর প্রয়োগ হয়নি। মারণ ছত্রাক ঢুকিয়ে মশার সঙ্গম ঘটানোর প্রক্রিয়া কতটা কার্যকর হবে তা হল প্রথম বিষয়, দ্বিতীয়ত সেই মশা কামড়ালে মানুষের শরীরে কী প্রভাব পড়তে পারে বা আদৌ কোনও প্রভাব পড়বে কি না, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। গবেষণাটি পরীক্ষার স্তরেই আছে। সেটির বাস্তব প্রয়োগ শুরু না হলে এই বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়।"
জিনগত প্রযুক্তি (Malaria) ব্যবহার করে এর আগেও মশা (Mosquito) ধ্বংসের চেষ্টা করেছিল ব্রাজ়িল সরকার। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল অবধি চলেছিল ওই পরীক্ষা। একটি ব্রিটিশ সংস্থা ব্রাজ়িল সরকারের অনুমতি নিয়ে প্রতি সপ্তাহে ওই শহরে সাড়ে চার লক্ষ পুরুষ মশা ছাড়ত, যাদের জিনগত রূপান্তর ঘটানো হয়েছিল। ফলে, ওই পুরুষ মশার সঙ্গে সঙ্গম করলে স্ত্রী মশা বংশবিস্তারের ক্ষমতা হারাবে। যদি বা অপত্যের জন্ম দিতে পারে, তা বেশি দিন বাঁচবে না। কিন্তু সেই পরীক্ষা সফল হয়নি। প্রথম প্রথম স্ত্রী মশারা ফাঁদে পড়লেও পরে নাকি সতর্ক হয়ে যায়। বিজ্ঞানীরা জানান, জিনগত ভাবে রূপান্তরিত পুরুষ মশাদের এড়িয়ে চলত স্ত্রী মশারা। তবে এ বার বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, পূর্বের ভুলত্রুটি শুধরে নেওয়া হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের এই উপায় এবার সফল হবে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।