Pakistan: শুরু হাসপাতালে কর্মী ছাঁটাইও...
পাকিস্তানে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে তীব্র সংকট
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে গোটা দেশ! এর আগেই জানা গিয়েছিল, খাবারের জন্য রাস্তায় মারামারি করছে মানুষ। গমের দাম আকাশ ছোঁয়া। এবারে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাতেও পড়েছে এর প্রভাব। ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে প্রতিবেশি দেশ পাকিস্তান। সূত্রের খবর, পাকিস্তানে অর্থনৈতিক মন্দার উত্তাপ এখন তার ‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থায়’ পৌঁছেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় ওষুধের জন্য হিমশিম খেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। প্রয়োজনীয় ওষুধ বা অপরিহার্য ওষুধের উপাদান (এপিআই) আমদানি করা যাচ্ছে না। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এর ফলে হাসপাতালে অস্ত্রোপচারও হচ্ছে না এবং অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) মাত্র দুই সপ্তাহের ওষুধ ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাকি রয়েছে।
চরম দুরাবস্থা পড়শি দেশ পাকিস্তানে। কোষাগারে বিদেশী মুদ্রার ভাণ্ডারে টান। চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশটি। এর মাঝেই পর্যাপ্ত ওষুধের অভাবে ভেঙে পড়েছে পাকিস্তানের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। নেই জীবনদায়ী ওষুধ। বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার তলানিতে এসে ঠেকেছে, আমদানি করা যাচ্ছে না গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ। যার ফলে দেশীয় ওষুধ প্রস্তুতকারকদের উপর জোর দিচ্ছে সরকার। এমনকি অলিখিত ভাবে চিকিৎসকদের উপর ফতোয়া জারি করা হয়েছে। চিকিৎসকদের বলা হচ্ছে বেশি অপারেশন না করতে। রোগী কম দেখতে।
পাক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, বর্তমানে অপারেশন থিয়েটারে মাত্র দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের জন্য চেতনানাশক ওষুধ অ্যানেসথেসিয়া মজুত রয়েছে। হার্ট, ক্যানসার এবং কিডনির মত রোগের অস্ত্রোপচারের জন্য যা অত্যাবশ্যকীয় একটি ওষুধ। ওষুধের ঘাটতি এবং সেগুলো তৈরিতে প্রয়োজনীয় উপাদানের কারণে ওষুধ কোম্পানিগুলো ওষুধের পণ্য কমিয়ে দিয়েছে। এ কারণে হাসপাতালের রোগীরা বিপাকে পড়েছেন।
মনে করা হচ্ছে, ওষুধের ঘাটতি শুধু রোগীদের নয়, বহু মানুষের কর্মসংস্থানকেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে। চিকিৎসাক্ষেত্রে শুরু হয়েছে ছাঁটাই। কর্মহীন হচ্ছে বহু মানুষ। ফলে এটি মানুষের দুর্দশা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
ওষুধ উৎপাদনকারীরা এ সংকটের জন্য বর্তমান আর্থিক ব্যবস্থাকে দায়ী করছেন। তারা বলেছেন, কাঁচামাল আমদানি করার জন্য লেটার অব ক্রেডিটের (এলসি) ছাড়পত্র দিচ্ছে না বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলো। পাকিস্তানের ওষুধ শিল্প প্রায় পুরোটাই আমদানি নির্ভর। মোট ওষুধের ৯৫ ভাগ কাঁচামালই ভারত, চিনসহ অন্যান্য দেশগুলো থেকে আসে। কিন্তু ডলার সঙ্কটের কারণে কাঁচামাল করাচি বন্দরে দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে।
পাকিস্তানের ওষুধ উৎপাদনকারীরা বলছেন, দেশের মুদ্রার মান কমে যাওয়া, তেলের দাম বৃদ্ধি ও পরিবহণ খরচ বাড়ায় ওষুধের দাম বেড়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি যাতে বিপর্যয়ের দিকে না যায় সেজন্য সরকারের হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে পাকিস্তান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (পিএমএ)। তবে, কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ না নিয়ে এখনও ঘাটতির পরিমাণ নির্ধারণের চেষ্টা করছে। পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের খুচরা ওষুধ বিক্রেতারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি ওষুধের সংকট নিয়ে একটি সার্ভে চালিয়েছে সরকার। তারা জানিয়েছেন, বাজারে এখন খুব সাধারণ কিন্তু অতি জরুরি প্যানাডোল, ইনসুলিন, ব্রুফেন, ডিসপ্রিন, ক্যালপল, তাগরাল, নিমেসুলেদে, হেপামারজ, বুসকোপান এবং রিভোট্রিলের মত ওষুধগুলো পাওয়া যাচ্ছে না।
গত মাসেই (জানুয়ারি) পাকিস্তান ফার্মাসিউটিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার অ্যাসোসিয়েশনের (পিপিএমএ) কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান সাঈদ ফারুক বুখারি জানিয়েছিলেন, ওষুধ উৎপাদন প্রায় ২৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। তিনি সতর্কতা দিয়ে বলেছিলেন, যদি আগামী ৪-৫ সপ্তাহ কাঁচামাল আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকে তাহলে ওষুধের তীব্র সংকট দেখা দেবে।