ভৌগলিক ও আবহাওয়া জনিত কারণ গুরুত্বপূর্ণ হলেও বাদ দেওয়া যাচ্ছে না নজরদারির অভাব, পুরনো বিমানের ব্যবহার, ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা এয়ারলাইন্সের মতো প্রসঙ্গও
দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমান, সংগৃহীত ছবি
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: রবিবার কাঠমান্ডু থেকে পোখরার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল বিমানটি। আকাশপথে এই দূরত্ব ১৪৬ কিলোমিটার, যেতে সময় লাগে ৩০ মিনিট মতো। ৭২ জন যাত্রী নিয়ে ইয়েতি এয়ারলাইন্সের এই বিমানটি কাঠমান্ডু থেকে রওনা হওয়ার ২০ মিনিটের মধ্যে ভেঙে পড়ে। ৭২ জনেরই মৃত্যু হয়েছে।
নেপালে বিমান দুর্ঘটনা (Nepal Plane Crash) নতুন কিছু নয় বারবার সেখানে দুর্ঘটনার মুখে পড়ে বিমান। ২০১৮ সালের একটি রিপোর্ট বলছে গত ৩০ বছরে ২৭টি বিমান দুর্ঘটনা হয়েছে সেদেশে অর্থাৎ প্রতিবছরে গড়ে একটি বিমান দুর্ঘটনা হয়েই থাকে নেপালে কিন্তু কেন বারবার এমন হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কাঠমান্ডু বিমানবন্দরের উচ্চতা ১,৩৩৮ মিটার। তারপর আবার অপ্রশস্থ উপত্যকার উপর গড়ে উঠেছে বিমানবন্দর।
নেপালের র্যাডার প্রযুক্তির অবস্থাও খুব খারাপ। তাই বিমানচালকে নিজের দৃষ্টির উপরেই নির্ভর করতে হয়। আবার সে দেশে বাজেট কম থাকায়, কম বিমানচালক নিয়োগ করা হয়ে থাকে। গত কয়েক বছরে একের পর এক বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে নেপালে। গত ৬ মাসে পোখরায় এই নিয়ে দ্বিতীয় বার কোনও বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়ল।
ভৌগলিক ও আবহাওয়া জনিত কারণ গুরুত্বপূর্ণ হলেও বাদ দেওয়া যাচ্ছে না নজরদারির অভাব, পুরনো বিমানের ব্যবহার, ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা এয়ারলাইন্সের মতো প্রসঙ্গও। নেপালের মতো পাহাড়ি এলাকায় বিমান চালানোর জন্য বিমানচালকেরা পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ পান কি না বা এয়ারলাইন্সগুলি উপযুক্ত বিমানচালক নিয়োগ করেন কি না,তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
২০২২ সালের ২৯ শে মে তারা এয়ারের একটি বিমান দুর্ঘটনার মুখে পড়ে। নেপালে সবার ছিলেন ২২ জন যাত্রী সকলেরই মৃত্যু হয়েছিল।
২০১৯ সালে কাঠমান্ডু ফিরছিল এয়ার ডায়নাস্টি সংস্থার একটি হেলিকপ্টার, পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে সেটি পড়ে। সাতজন যাত্রীরই মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নেপালের পর্যটন মন্ত্রী রবীন্দ্র অধিকারী।
২০১৮ সালের ১২ই মার্চ নেপালে ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে নামার সময় ভেঙে পড়ে বোম্বাদিয়ার কিউ ৪০০ বিমান। সমস্ত যাত্রীর মৃত্যু হয়।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে পোখরা থেকে জমসম যাচ্ছিল ছোট একটি বিমান। মাঝ আকাশে বিমানটি দুর্ঘটনাগ্রস্ত হলে ২৩ জনেরই মৃত্যু হয়।
২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দুর্ঘটনার মুখে পড়ে সীতা ইয়ার সংস্থার একটি বিমান। যাত্রী ছিল ১৯ জন, সবার মৃত্যু হয়।
২০১২ সালের জমসম যাওয়ার পথে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয় একটি বিমান। ২১ জন যাত্রী সওয়ার ছিলেন। ২১ জনের মধ্যে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
২০১১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ভেঙে পড়ে বুদ্ধ এয়ারের একটি বিমান। সবারই মৃত্যু হয়েছিল।
২০১০ সালের ডিসেম্বরে তারা এয়ার সংস্থার আরও একটি বিমান ভেঙে পড়ে। মোট ২৫ জনের মৃত্যু হয়।
ওই ২০১০ সালেই অগ্নি এয়ারের একটি বিমান দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়।
১৯৯২ সালে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস এর একটি বিমান কাঠমান্ডুতে ভেঙে পড়ে, ১৬৭ জন যাত্রীরই মৃত্যু হয়।
এর উপরে রয়েছে চিন। সাম্প্রতিক অতীতে নেপালের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থার সুযোগ নিয়ে সে দেশের নানা কাজে নানা ভাবে নাক গলাতে শুরু করেছে চিন সরকার। চিনা অর্থে তৈরি হচ্ছে সড়ক, বিমানবন্দর।
পোখরার নবনির্মিত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও চিনের ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া ঋণের টাকাতেই তৈরি। তৈরি করেছে চিনা ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থা CAMC Engineering Co. Ltd। যা, চিনের সীমান্তবর্তী এলাকায় সড়ক এবং বন্দর তৈরির প্রকল্প China’s Belt and Road Initiative (BRI)-এর অংশ। তার উপরে কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই গত ১ জানুয়ারি তড়িঘড়ি সেই বিমানবন্দর উদ্বোধন করা হয়েছিল। দুর্ঘটনার পরে সেই বিমানবন্দরও সকলের প্রশ্নের মুখে।
অনেকেই আবার অভিযোগ করেছেন পোখরার নতুন বিমানবন্দরেই গলদ রয়েছে। নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই বিমানবন্দরটি খুলে দেওয়া হয়েছিল। গত ১ জানুয়ারি বিমানবন্দরটি খুলে দেওয়া হয়। একটি চিনা সংস্থা বিমানবন্দরটি নির্মাণ করছে। প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ড বিমানবন্দরটি উদ্বোধন করেছিলেন ১ জানুয়ারি। তার কয়েকদিনের মধ্যেই এই বিপত্তি।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ।
Tags: