Most Polluted City: বিশ্বের দূষিততম শহর লাহোরের দূষণের মূল কারণ নিম্নমানের যানবাহন!…
ধূলিকণার দূষণ জনিত ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন লাহোর শহর। সংগৃহীত চিত্র।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: পাকিস্তানের (Pakistan) লাহোরের বায়ুদূষণের মাত্রা রেকর্ড পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ রবিবার সকালে বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছে গিয়েছে। দূষণের মাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৭০৭। তাই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর (Most Polluted City) হিসাবে পরিণত হয়েছে এই লাহোর। বাতাসে ঘন কালো ধূলিকণার মেঘ আচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে। দূষণের সঙ্গে কুয়াশা মিশে বিপজ্জনক ধোঁয়াশা (ইংরেজিতে স্মগ) তৈরি হয়েছে। যা ঢেকে দিয়েছে লাহোরের আকাশ। ফলে এই অঞ্চলে শীতের বাতাস ঢুকতে বাধা পড়ছে। মানুষের জনজীবন এবং জনস্বাস্থ্য অত্যন্ত বিপদ জনক অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছে। জঙ্গি উৎপাদনের পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ নিয়ে বিশ্ববাসীর এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়ে পাকিস্তান।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, লাহোর এবং তার বিভিন্ন আশেপাশের এলাকাগুলিতে উদ্বেগজনকভাবে উচ্চ এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (AQI) রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। থকর নিয়াজ বেগ এলাকা একিউআই-এর মাত্রা ৮৭৮। জোহর টাউন এলাকায় মাত্রা ৮৯৩, সৈয়দ মারাতিব আলি রোডে ৭৫৪ এবং শাহরাহ-ই-কায়েদ-ই এলাকায় রেকর্ড হয়েছে ৬৩৩। ইউএস কনস্যুলেট ৭০০ একিউআই রেকর্ড করেছে। আবার পাকিস্তান ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস রিপোর্ট করেছে একিউআই-এর পরিমাণ ৬৮৮। দূষণের এই উচ্চ স্তরগুলি লাহোরকে শুধুমাত্র পাকিস্তানের সবচেয়ে দূষিত শহর (Most Polluted City) নয়, বরং বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে খারাপ শহর হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ফলে পাকিস্তানের নাগরিক জীবন কতটা আশঙ্কাজনক তা অনুমান যোগ্য।
বর্তমানে লাহোরের (Pakistan) তাপমাত্রা ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আগামী দিনে সর্বোচ্চ ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছানোর পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে৷ আবহাওয়া দফতর আগামী ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের কোনওরকম সম্ভাবনাকে নাকচ করে দিয়েছে। শহরের জনগণকে এই দূষিত বায়ুর মধ্যেই কাটাতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে পাঞ্জাব এনভায়রনমেন্ট প্রোটেকশন ডিপার্টমেন্ট প্রদেশের জন্য একটি সতর্কতা জারি করেছে। তাতে বলা হয়েছে, লাহোরের গত ২৪-ঘণ্টায় গড় আইকিউআই-এর ফলে দৃশ্যমানতা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শীত ঘনিয়ে আসার মুখে, লাহোরের নিচু এলাকায় এই সমস্যা আরও জটিল করে তুলছে। ঠান্ডা বাতাসকে আটকে দেয় এই ধূলিকণার ধোয়া, যা বায়ুর গুণমানকে আরও খারাপ করে দেয়।
ভয়াবহ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পাক পাঞ্জাব সরকার (Pakistan) জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য জরুরি সতর্কতা জারি করেছে। লাহোরের সমস্ত স্কুলের কর্মসূচি ৩১ জানুয়ারী, ২০২৫ পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। স্কুলের সময়েও পরিবর্তন করা হয়েছে। ২৮ অক্টোবর থেকে সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। বাড়ি থেকে বৃদ্ধ এবং শিশুদের বের হতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আতশবাজির উপর নিষেধাজ্ঞা জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে বলে প্রশাসন জানিয়েছে। জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থার প্রতিক্রিয়া হিসাবে লাহোর ট্রাফিক পুলিশ মোটরসাইকেল চালকদের সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছে, কারণ কিছু এলাকায় দৃশ্যমানতা কমতে কমতে এক কিলোমিটারে এসে ঠেকেছে। পরিবেশবিদ এবং চিকিৎসকরা শহরে প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে গাছপালার প্রয়োজনীয়তার কথা জোর দিয়ে বলেছেন। শহরের বাসিন্দাদের মাস্ক পরতে, অপ্রয়োজনীয় বাইরে বের হওয়া এড়াতে এবং বিশেষ করে সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য সতর্কতা অবলম্বনের কথা বলেছেন।
আরও পড়ুন: মহাকুম্ভ প্যাকেজে কী কী সুবিধা মিলবে জানেন?
পাকিস্তানের (Pakistan) স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন দেশবাসীকে। কারণ দীর্ঘস্থায়ী বিষাক্ত বাতাস ব্যাপক ভাবে শ্বাসকষ্টের সমস্যার প্রাদুর্ভাবকে বৃদ্ধি করবে। অনেক মানুষ ইতিমধ্যেই কাশি, চোখের জ্বালা, জ্বর এবং গলা ব্যথার নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। ফলে যাঁদের আগে থেকে শ্বাসকষ্ট বা হৃদযন্ত্রের সমস্যা রয়েছে তাঁদের বাইরের কার্যকলাপ সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানের মন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজেব স্বীকার করে বলেন, "ধোঁয়াশা রোধে সরকার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চলছে। লাহোরের বাতাসের মান উন্নত হতে আরও ৮ থেকে ১০ বছর সময় লাগবে। তাঁর মতে, লাহোরের দূষণের পেছনে ৭০ শতাংশ দায়ী নিম্ন-মানের স্থানীয় যানবাহন, শিল্প নির্গমন, মৌসুমী ফসল পোড়ানো এবং বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলার কারণে। শহরের ৪৫ হাজার মোটরসাইকেলের মধ্যে ১৮ হাজার বিষাক্ত ধোঁয়া নির্গত করে। সেই সঙ্গে ১ লক্ষ যানবাহন, ১২০০টি ভাটা এবং ৬০,৮০০টি শিল্প ইউনিটও ব্যাপক ভাবে দূষণ ছড়ায়।
বৈশ্বিক দূষণের তালিকায় একটি হটস্পট হিসেবে লাহোরের (Most Polluted City) নাম উঠে এসেছে। পরিবেশ এবং বিশ্ববাসীর কাছে পাকিস্তান অত্যন্ত চিন্তার বিষয় বলে মনে করছেন ভারতীয় পরিবেশবিদরা।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।