Bangladesh: বাংলাদেশে ঋত্বিক ঘটকের জমি দখলের চেষ্টা! ভেঙে ফেলা হল বাড়ি...
রাজশাহীতে ঋত্বিক ঘটকের বাড়ি ভাঙার পর (সংগৃহীত ছবি)
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: হাসিনা সরকারের পতনের পর উত্তাল হয়েছিল বাংলাদেশ (Bangladesh)। রাজপথে বঙ্গবন্ধু মূর্তিতে ভাঙচুর চালানো হয়। বাদ যায়নি বিশ্বকবির মূর্তিও। দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছিল। এই আবহের মধ্যে এবার ওপার বাংলার রাজশাহীতে অবস্থিত এপার বাংলার বিশিষ্ট চিত্র পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের (Ritwik Ghatak) পৈতৃক ভিটে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল। আর এই বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় নাম জড়াল সরকারি হোমিওপ্যাথি কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় বইছে।
জানা গিয়েছে, জীবনের শুরুর দিকের বেশ কিছুটা সময় রাজশাহীর ঘোড়ামারা মহল্লায় মিয়াপাড়ার ওই বাড়িতে কাটিয়েছিলেন চিত্র পরিচালক ঋত্বিক ঘটক (Ritwik Ghatak)। তাঁর বাবা সুরেশচন্দ্র ঘটক ছিলেন ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। পরে বদলি হয়ে রাজশাহীতে আসেন তিনি। সেখানেই পাকাপাকিভাবে পরিবার নিয়ে বসবাস শুরু করেন। দীর্ঘদিন ধরেই বাড়িটি সংরক্ষণের বিষয়ে কথাবার্তা চলছিল। বিশেষ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই বাড়ির ৩৪ শতাংশ জমি ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন এরশাদ সরকার রাজশাহী হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালকে ইজারা দেয়। ২০১৯ সালে বাড়িটির একাংশ ভেঙে সাইকেল গ্যারাজ তৈরির অভিযোগ উঠেছিল কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। তখন রাজশাহী-সহ সারা দেশে এই ঘটনার প্রতিবাদ হয়। পরে ২০২০ সালে বাড়িটি সংরক্ষণে উদ্যোগী হয় রাজশাহী জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক শামিম আহমেদ বলেন, ‘‘জেলা প্রশাসন সংরক্ষণের জন্য ভূমিমন্ত্রককে চিঠি দিয়েছিল। তাতে বাড়িটি ইজারা থেকে মুক্ত করে ঋত্বিক ঘটকের নামে করে দেওয়ার জন আবেদন করা হয়েছিল। তা ফলপ্রসূ হওয়ার আগেই বাড়িটা ভাঙা হয়ে গেল।’’ জানা গিয়েছে, কলেজ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। বাড়ির অধিকাংশ অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। বলা যেতে পারে, গোটা বাড়িটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এক ঠিকাদার বাড়ি ভাঙার কাজ করছিলেন। কলেজ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এই কাজ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
আরও পড়ুন: মধ্যরাতে আরজি করে দুষ্কৃতী তাণ্ডব, আন্দোলন থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর ছক?
ঋত্বিক ঘটক (Ritwik Ghatak) ফিল্ম সোসাইটি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের কড়া শাস্তির দাবি করেছে। তাঁদের বক্তব্য, রাজশাহী হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজের একদম পাশে এই বাড়ি। কিন্তু সেই বাড়ি ভেঙে দেওয়া হলেও হাসপাতালে কোনও আঁচ পড়েনি। এর থেকেই বোঝা যায় কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। সংগঠনের অভিযোগ, ঋত্বিক ঘটকের বাড়ির জমির কিছুটা দখল করে আগেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের বিল্ডিং বানিয়েছে। এবার পুরো জায়গা দখল করার জন্যই এই কাজ করেছে। মেডিক্যাল কলেজের বিরুদ্ধে অভিযোগ এখানেই শেষ নয়। পরিচালক তৌকির শাইকের দাবি, এর আগে ঋত্বিক ঘটকের বাড়ি ভাঙার বহু চেষ্টা করেছে তাঁরা। কিন্তু পারেননি। তবে বাড়ি ভাঙার অজুহাত খুঁজছিল। এমনকী তিনি এও জানিয়েছেন, এই বাড়ির ওপর যাতে কোনও আক্রমণ না হয় তার জন্য স্টে অর্ডার আনা হয়েছিল। কিন্তু গত ৬ অগাস্ট থেকে মেডিক্যাল কলেজের সিসিটিভি যা বাড়ির দিকে ছিল তা বন্ধ করা রয়েছে। কেন তা করা হয়েছে, তার কোনও উত্তর নেই।
এদিকে এই অভিযোগ ওঠার পর রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ আনিসুর রহমান বলেন, ‘‘৬ অগাস্ট একদল ছাত্র এসে আমাকে বলে যে কলেজ থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি সরাতে হবে এবং ওই বাড়িটা ভেঙে ফেলা হবে। পরে সেদিন রাতেই আমি জানতে পারি যে, বাড়িটি ভাঙা হচ্ছে। আমাকে শ্রমিকরা জানিয়েছেন যে কিছু লোক টাকা দিয়ে বাড়িটি ভাঙতে বলে গিয়েছিল। আমার কাছে খবর আসে ৬-৭ জন মিলে ওই বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছে। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রতিবাদ করায় তারা পালিয়ে যায়। তবে কাউকে আমি চিনি না।’’ সিসিটিভি ফুটেজ কেন নেই, এই প্রশ্ন করায় তিনি বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীরাই তা ভেঙে দিয়েছে। ’’
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।