অযোধ্যা ও তাইল্যান্ডের আয়ুথায়কে মিলিয়েছে ভগবান রাম
প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: অযোধ্যা ও আয়ুথায় (Thailand's Ayutthaya) দুই শহর। একটি অবস্থিত ভারতে এবং অপরটি তাইল্যান্ডে। এই দুটি স্থানের মধ্যে ভৌগলিক দূরত্ব অনেকটাই কিন্তু দুই শহরকে জুড়েছে আধ্যাত্মিকতা এবং ধর্ম বিশ্বাস। ভারতের রাম জন্মভূমির প্রতিধ্বনি যেন শোনা যাচ্ছে সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বিদেশি শহর আয়ুথায়তে। রাম মন্দিরের উদ্বোধন ঘিরে সাজসাজো রব চলছে অযোধ্যায়। ২২ জানুয়ারি উদ্বোধন হবে রাম মন্দিরের। অন্যদিকে তাইল্যান্ডের আয়ুথায়তেও চলছে সেই মুহূর্তের উদযাপনের প্রস্তুতি।
শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের তরফ থেকে ইতিমধ্যে আয়ুথায় থেকে মাটি ও জল আনা হয়েছে। তাইল্যান্ডের ৩ নদীর জল এসেছে রাম মন্দিরের নির্মাণে। এই নদীগুলি হল চাও ফ্রায়া, লোপ বুড়ি, এবং পা সাক। নদীর তীরে অবস্থিত প্রাচীন শহর আয়ুথায় (Thailand's Ayutthaya) ব্যাংকক থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং তা ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তকমাও পেয়েছে, শহরে গৌরবময় সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের জন্য।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ব্যাংকক শাখার সদস্যরা বলছেন, আয়ুথায়তে (Thailand's Ayutthaya) অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু মন্দিরগুলিতে বড় স্ক্রিন লাগানো হবে ২২ জানুয়ারি এবং সরাসরি সম্প্রচারিত হবে রাম মন্দিরের উদ্বোধন অনুষ্ঠান। জানা গিয়েছে, রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠার দিন মাটির প্রদীপ সেখানে জ্বালানো হবে সন্ধ্যা বেলায়। রামায়ণ পাঠ এবং তার সঙ্গে রাম ভজনও চলবে দিনভর। রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক চম্পত রাই বলছেন, "আয়ুথায় হল তাইল্যান্ডের অযোধ্যা। আমরা সেখান থেকে পবিত্র মাটি এবং জল পেয়েছি রাম মন্দিরের উদ্বোধনের জন্য।" স্বামী বিজ্ঞয়ানন্দ হলেন 'ওয়ার্ল্ড হিন্দু ফাউন্ডেশন'-এর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, "অযোধ্যার নামকরণ থেকেই আয়ুথায় নামটি এসেছে। ভগবান রামের জন্মস্থান এবং হিন্দু ধর্মের সঙ্গে সম্পর্ক বোঝাতেই এমন নামকরণ আয়ুথায়।" তিনি আরও জানান, রাজা রামাথিবোদি ছিলেন আয়ুথায়ের প্রথম শাসক। তিনিই এই শহরের নামকরণ করেন। এবং এই নামকরণেই বোঝা যায় যে রামায়ণের প্রভাব ঠিক কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত। তাঁর পরবর্তী চক্র রাজ বংশের রাজারাও রামকে গ্রহণ করেন বলে জানা যায়। প্রসঙ্গত, আয়ুথায়ের রামায়ণ বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা প্রচার করেছিলেন। তাইল্যান্ডের স্থানীয় ভাষায় যার নাম হয়েছিল রামাকিয়েন। ফ্রা নাখোন সি হল আয়ুথায়ের সরকারি নাম। এই শহর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৩৫০ খ্রিস্টাব্দে এবং এটি ছিল সিয়ামিজ রাজ্যের দ্বিতীয় রাজধানী।
সিয়ামিজ বংশের রাজা কিং ইউথং তিনি পরবর্তীকালের জনপ্রিয় হয়েছিলেন রামাথিবোদি নামে। জানা যায়, ১৪ থেকে ১৮ শতকের মধ্যে খুবই দ্রুত বেড়ে উঠেছিল এই শহর এবং পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম বৃহত্তম নগর হয়ে উঠেছিল। জানা যায়, ১৭৬৭ খ্রিস্টাব্দে বর্মা সেনা আক্রমণ করে এই শহর এবং লুটপাট চালায় প্রচুর। এখানকার বাসিন্দারা শহর ছাড়তে বাধ্য হন। কার্যত বর্মার সেনারা এই শহরকে জ্বালিয়ে দেয়। পরবর্তীকালে তা নতুনভাবে আর গড়ে ওঠেনি সেই একই স্থানে এবং এটি একটি আর্কিওলজিক্যাল সাইট হিসেবেই থেকে গিয়েছে। আয়ুথায় (Thailand's Ayutthaya) এখন একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আর্কিওলজিক্যাল ধ্বংসাবশেষ হিসেবে থেকে গিয়েছে।
সংস্কৃতের পণ্ডিত পদ্মভূষণ পুরস্কারপ্রাপ্ত সত্যব্রত শাস্ত্রী তাই ভাষায় রামাকিয়েনকে সংস্কৃততে অনুবাদ করেন। রামাকিয়েন বাল্মিকী রচিত রামায়ণকে অনুসরণ করে গড়ে ওঠেনি অথবা অন্য কোনও ভারতীয় রামায়ণকে অনুসরণও এখানে করা হয়নি। তাইল্যান্ডের (Thailand's Ayutthaya) অন্যতম অধ্যাপক সুরেশ পাল গিরি বলেন, "বর্মার সৈন্যরা যখন এই শহরকে ধ্বংস করেছিল, তখন একজন নতুন রাজার উত্থান হয়েছিল।" তিনি নিজেকে প্রথম রাম বলে অভিহিত করেছেন। ওই রাজা একটি শহরকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যা বর্তমানে ব্যাংকক নামে পরিচিত। তিনি রামাকিয়েন লেখেন যা কিনা স্থানীয় ভাষায় রামায়ণ বলেই পরিচিত। এই রামায়ণ বর্তমানে সে দেশের জাতীয় মহাকাব্য হিসেবে উঠে এসেছে এবং বৌদ্ধ মন্দিরগুলোতেও রামাকিয়ানের বিভিন্ন বাণী নজরে পড়ে। জানা যায়, ওই রাজা একজন বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী ছিলেন তবুও তিনি ভগবান রামের আরাধনা করতেন।
তাইল্যান্ডে এবং ভারতের মধ্যে সম্পর্ক শুধুমাত্র রামচন্দ্র বা অযোধ্যাকেন্দ্রিক নয়। এর প্রতিফলন বিভিন্ন উৎসবেও মেলে। যেমন ভারতের দীপাবলি তাইল্যান্ডে পালিত হয় লয় কার্থং নামে। তাইল্যান্ডের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দেখা মেলে শিব, পার্বতী, গণেশ, ইন্দ্র এই সমস্ত মূর্তির। হিন্দু সংস্কৃতির অন্যতম কেন্দ্র বলা চলে এই দেশকে। ব্যাংককের সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরের দেওয়ালে নজরে পড়ে সমুদ্র মন্থনের বিভিন্ন দৃশ্য যা বিষ্ণু পুরাণ থেকে নেওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে, আয়ুথায় ছাড়াও তাইল্যান্ডের প্রায় প্রত্যেক মন্দিরেই ২২ জানুয়ারি মহাসমারোহে পালন করা হবে রাম মন্দিরের উদ্বোধন উৎসব।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।