রানি এলিজাবেথের মুকুটের অমূল্য হীরেটি ১০৫.৬ ক্যারেটের, ওজন ২১.৬ গ্রাম।
কোহিনুর
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ব্রিটেনের সিংহাসনে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে রাজত্ব করেছেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ (Queen Elizabeth)। প্রায় ৭০ বছর এই রানির পদে থেকেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার ৯৬ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন রানি৷ তাঁর মৃত্যুর পর এখন ব্রিটেনের সিংহাসনে বসবেন প্রিন্স চার্লস৷ রানির প্রায় সব সম্পত্তির মালিকই এখন তিনি। কিন্তু কোহিনুর কার কাছে যাবে সে দিকেই তাকিয়ে আছে ভারতসহ গোটা পৃথিবী।
এই বছরের শুরুতে রানি নিজেই ঘোষণা করেছিলেন ডাচেস অফ কনওয়েল (Duchess of Cornwall) ক্যামিলা কুইন কনসর্ট হিসেবে পরিচিত হবেন৷ তাই ধরে নেওয়া হচ্ছে প্রিন্স চার্লসের স্ত্রী ক্যামিলাকে তাই এই কোহিনূর উত্তরাধিকার হিসেবে দেওয়া হতে পারে৷ নিজের ব্রিটিশ সিংহাসনে বসার ৭০ বছর পূর্তিতে কুইন এলিজাবেথ এই ঘোষণা করেছিলেন৷ যদিও এই অমূল্য হীরে পাওয়ার পথ এত সহজ নাও হতে পারে। অন্য পথেও হাঁটতে পারে ব্রিটেনের রাজ পরিবার।
আরও পড়ুন: তারার দেশে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ! শোকবার্তা মোদির
রানি এলিজাবেথের মুকুটের অমূল্য হীরেটি ১০৫.৬ ক্যারেটের, ওজন ২১.৬ গ্রাম। ১১০০ থেকে ১৩০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টুরের কাছে কল্লুর খনি থেকে পাওয়া গিয়েছিল এই হীরে। ১৩১০ সালে কাকোতীয় বংশের সঙ্গে বরঙ্গলের যুদ্ধে এই হীরে দখল করেন দিল্লির সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি। পরে তা হাতবদল হয়ে আসে মুঘল দরবারে। 'বাবরনামা'য় উল্লেখ রয়েছে, ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে পানিপথের যুদ্ধে তা বাবরের দখলে আসে। সপ্তদশ শতকে মুঘল সম্রাট শাহজাহানের দরবারে ময়ূর সিংহাসনে শোভা পেত কোহিনুর। পার্সি ভাষায় ‘কোহিনূর’ শব্দের অর্থ 'আলোর পর্বত'। ১৭৩২ সালে নাদির শাহ মুঘল সাম্রাজ্য আক্রমণ ও দিল্লি লুণ্ঠন করে ময়ূর সিংহাসনের সঙ্গে কোহিনুর হীরেটিকেও নিয়ে যান ইরানে। পরে দেহরক্ষীদের দ্বারা নিহত হন নাদির শাহ।
নাদির শাহের পর আহমদ শাহ দুররানি কোহিনুর হস্তগত করেন। ১৮১৩ সালে দু্ররানি পাঞ্জাবের সিংহাসন হারলে তা ‘শের-ই-পঞ্জাব’ মহারাজা রঞ্জিত সিংহের হাতে আসে। তিনি নাকি এই বহুমূল্য হিরে তাঁর পাগড়িতে আটকে রাখতেন। রঞ্জিত সিংহের পর এই হীরের মালিকানা লাভ করেন নাবালক মহারাজা দলীপ সিংহ। শতাব্দীর পর শতাব্দী বিভিন্ন হাতে ঘুরেছে এই কোহিনূর৷ যখন ১৮৪৯ সালে পাঞ্জাবে ব্রিটিশ শাসন শুরু হয়৷ সেই সময় এই হীরে রানি ভিক্টোরিয়ার হাতে তুলে দেওয়া হয়৷ সেই থেকে এই রত্ন ব্রিটিশ ক্রাউন জুয়েলের (British Crown Jewels) অংশ হয়ে যায়৷ কিন্তু এই হীরে নিয়ে বিবাদ আজও অব্যাহত। কুইন এলিজাবেথের জন্য প্ল্যাটিনাম ক্রাউনে এই হীরে বসানো হয়৷
এক কালের ভারতের এই সম্পত্তির মায়া এখনও ছাড়তে পারেননি ভারতবাসী। একদিন ব্রিটেনের এই রাজপরিবার ভারতবর্ষ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিল দুর্মূল্য কোহিনূর। কেটে গিয়েছে বহুদিন। বহুবার রাজ পরিবারে হাতবদল হয়েছে কোহিনূরের। কোহিনুরখচিত মুকুট এক মাথা থেকে আরেক মাথায় গিয়েছে। কিন্তু সেই হিরে আর ফিরে পায়নি ভারত। কিন্তু কোহিনূর পাওয়ার আশায় আজও বুক বেঁধে রয়েছে এই দেশ। কারণ কোহিনূর যে তাঁদের, এই দেশের। যদিও তত্ত্ব বলছে ভারত ছাড়াও আরও চার দেশের সঙ্গে জড়িত কোহিনূরের ইতিহাস। তবে ভারতের দাবিই সব থেকে বেশি। কারণ লিখিত ইতিহাসে কোহিনূরকে ভারতের সম্পত্তি বলেই দাবি করা হয়েছে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ।