JU Student Death: র‍্যাগিং কি মানসিক রোগ? কেন হয় র‍্যাগিং? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা? 

র‍্যাগিংয়ের অভিযোগের নিরিখে দেশের প্রথম তিন রাজ্যের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ!
JU_Student_Death
JU_Student_Death

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: স্কুল পেরিয়ে কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন শুরুর সময় অনেক নতুন ধাপ আসে! আর তার মধ্যে কমবেশি সকলের কাছেই পরিচিত হয়ে ওঠে একটি শব্দ, সেটা হল র‍্যাগিং! কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে র‍্যাগিংয়ের শিকার হন নতুন ভর্তি হওয়া পড়ুয়ারা। দীর্ঘদিন এই র‍্যাগিং প্রক্রিয়াকে মজা বলা হলেও, তাকে কেবল মজা বলে মানতে নারাজ বিশেষজ্ঞ মহল। বিশেষত, ভারতের মতো দেশে যেখানে প্রতি বছর কয়েকশো পড়ুয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হেনস্থার শিকার হন। এ রাজ্যের পরিস্থিতি দেশের মধ্যে সবচেয়ে উদ্বেগজনক। এমনটাই জানাচ্ছে ইউজিসি'র (ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস কমিশন) রিপোর্ট। সম্প্রতি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া স্বপ্নদীপ দাসের মৃত্যু (JU Student Death) ফের প্রকাশ্যে আনল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হেনস্তার পিছনে থাকে মানসিক বিকার!

রাজ্যে র‍্যাগিং রোগ কতখানি ভয়াবহ? 

ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, র‍্যাগিংয়ের অভিযোগের নিরিখে দেশের প্রথম তিন রাজ্যের মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকেই পশ্চিমবঙ্গ তালিকার উপরের দিকে রয়েছে। সম্প্রতি অভিযোগ (JU Student Death) আরও বেড়েছে। ওই রিপোর্ট থেকে জানা যায়, প্রতি বছর গড়ে ৪৭৫-৫০০টি অভিযোগ জমা পড়ে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার অভিযোগও জানান ভুক্তভোগীরা। তাই পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই র‍্যাগিং রোগ জাঁকিয়ে বসেছে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।

র‍্যাগিং কাকে বলে? 

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, র‍্যাগিং হল এক ধরনের হেনস্তা। কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া নতুন পড়ুয়াদের পরিচয় পর্বের নামে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনকেই র‍্যাগিং বলা হয়। এটা এক ধরনের কুপ্রথা। যেমন, নানান সামাজিক হেনস্তা দীর্ঘদিন ধরে মজা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। ঠিক সেরকমই এই কুপ্রথাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পড়ুয়াদের নিছক মজা বলেই চালানো হয়। কিন্তু র‍্যাগিং হল এক ধরনের অপরাধ।

মানসিক সমস্যা থেকেই হেনস্তার ইচ্ছে তৈরি হয়? 

মনোরোগ চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, অপরাধ মনস্ক মানসিকতা থেকেই তৈরি হয় হেনস্তার ইচ্ছে। নতুন ভর্তি হওয়া অধিকাংশ পড়ুয়ার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশে মানিয়ে নিতে সময় লাগে। নতুন পরিবেশে তুলনামূলক তারা দুর্বল। তাই তাদের উপর নানান অত্যাচার (JU Student Death) করা যাবে, এই ভাবনা থেকেই র‍্যাগিং হয়। আর এই ভাবনা সুস্থ মানসিকতার লক্ষণ নয় বলেই মনে করছেন মনোরোগ চিকিৎসকরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, যেমন অনেকেই শিশুদের মারধর করেন। অনেক ধরনের রাগ কিংবা হতাশার বহিপ্রকাশ ঘটান বাড়িতে শিশুদের মারধর করে। শিশুরা শারীরিক ও মানসিকভাবে সেই মারধরের তৎক্ষণাৎ প্রতিরোধ করতে পারবে না, সেই ভাবনা থেকেই অনেকেই বাড়ির শিশুদের মারধর করেন। র‍্যাগিং অনেকটাই সেরকম। নানান হতাশা ও অবসাদ থেকে একটা পাল্টা আক্রমণের ইচ্ছে তৈরি হয়। আর তুলনামূলক দুর্বলের উপরে তা প্রয়োগ সহজ। তাই সদ্য আসা পড়ুয়ারাই হয় টার্গেট।

র‍্যাগিংয়ের প্রভাব কতখানি সুদূরপ্রসারী হতে পারে? 

যেসব পড়ুয়ারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই ভয়ানক অভিজ্ঞতা (JU Student Death) ভোগ করেন, সাধারণত তাদের মনে এর ভয়ঙ্কর গভীর প্রভাব পড়ে বলেই জানাচ্ছেন মনোরোগ চিকিৎসকরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, অনেকের মানসিক স্থিতি চিরকালের জন্য চলে যায়। আর যারা পরিস্থিতি সাময়িক সামলে নেন, তাদের মনেও এই হেনস্তার দীর্ঘপ্রসারী প্রভাব পড়ে। আত্মবিশ্বাস হারিয়ে যায়। অনেকের চিরকালীন ট্রমা তৈরি হয়। যা অনেক ক্ষেত্রে প্রকাশ পায়। এক ধরনের মানসিক অস্থিরতা তৈরি হয়।

র‍্যাগিং হলে কী আইনি অধিকার রয়েছে? 

আইনজীবীরা জানাচ্ছেন, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য ভর্তি হওয়া পড়ুয়াদের হেনস্তার (JU Student Death) করা যেতেই পারে। কারণ, তারা দুর্বল, এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। র‍্যাগিং হলে পড়ুয়ারা কী ধরনের আইনের সাহায্য পাবেন এবং যারা র‍্যাগিং করবে, তারা কী শাস্তি পেতে পারেন, সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরি। আইন অনুযায়ী, কোনও ছাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভিতরে কিংবা হস্টেলে কোনও রকম হেনস্তার শিকার হলে, তা শারীরিক হোক কিংবা মানসিক, লিখিত অভিযোগ দায়ের করবে। শুধুমাত্র সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকেই নয়। প্রয়োজনে সরাসরি ইউজিসি-র অ্যান্টি র‍্যাগিং সেলে যোগাযোগ করবেন। সেখানেও লিখিত অভিযোগ দায়ের করা যায়। এই ধরনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তের উচ্চশিক্ষা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। রেজাল্ট আটকে রাখা যেতে পারে। এমনকি জেলও হতে পারে। অভিযুক্তের পাশপাশি সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে পারে ইউজিসি। আইনজ্ঞরা জানাচ্ছেন, র‍্যাগিং সামাজিক ব্যাধি এবং আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। সে সম্পর্কে সচেতনতা জরুরি। সেই সচেতনতা প্রসারের দায়িত্ব সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের। সেই দায়িত্ব পালনে ঘাটতি থাকলে এই সামাজিক ব্যাধি আরও প্রকট হবে।

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles