মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে গিয়ে হাতির হানায় মৃত্যু হয়েছে জলপাইগুড়ির এক পরীক্ষার্থীর। এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই মর্মান্তিক ঘটনার পরই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। ঘটনাটি ঘটার পরে জলপাইগুড়ির জেলাশাসক, বন দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। ঘটনাটি কী ভাবে ঘটেছে, তা জানতে চান। পাশাপাশি, হাতির হানা রুখতে বন দফতরকে আরও সক্রিয় হতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপরই পরীক্ষার্থীদের সুরক্ষার্থে আসরে নামে বন-দফতর। পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে প্রকাশ করা হয় একগুচ্ছ নির্দেশিকা।
কী রয়েছে নির্দেশিকায়?
এদিন সকালে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছনোর আগেই হাতির হামলায় মৃত্যু হল জলপাইগুড়ির মহারাজঘাটের বাসিন্দা এ বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী অর্জুন দাসের। এর পরেই বন দফতর থেকে ৮ দফা নির্দেশিকা জারি করা হল। পরীক্ষার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে পরীক্ষা দিতে পারে তার জন্য নেওয়া হল ব্যবস্থা।
যে সমস্ত এলাকায় হাতির হানার প্রকোপ বেশি, সেই এলাকায় পুলিশ ও বনকর্মীদের পাহারায় জোর দেওয়া হল।
এলাকায় সচেতনতা বাড়াতে ক্রমাগত মাইকে প্রচার করা হবে।
পরীক্ষার্থীদের পারাপারের জন্য আলাদা লক গেটের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
বিশেষ গাড়ি ‘ঐরাবতি’-র ব্যবস্থা করা হয়েছে, যার সাহায্যে পরীক্ষার্থীদের নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া হবে পরীক্ষাকেন্দ্রে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক দুই পরীক্ষাতেই থাকবে ব্যবস্থা।
মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন বন দফতরের কর্মীদের ছুটি বাতিলের কথাও বলা হয়েছে নির্দেশিকায়।
যতদিন না পরীক্ষা শেষ হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত বন দফতরের কাছে প্রতিদিনের রিপোর্ট জমা দিতে হবে, যেখানে উল্লেখ থাকবে যে, এই সমস্ত নির্দেশিকা মেনে চলা হচ্ছে কিনা।
কী ঘটেছিল?
সূত্রের খবর, আজ, বৃহস্পতিবার সকালে বাবার সঙ্গে পরীক্ষাকেন্দ্রে যাচ্ছিল ছাত্রটি। তখন জলপাইগুড়ির বৈকন্ঠপুর জঙ্গল সংলগ্ন টাকিমারি এলাকায় এক দাঁতালের সামনে পড়ে যায় তাঁরা। সেখান থেকে ভয়ে পালানোর মুহূর্তেই হাতি পা দিয়ে পিষে মারল ছাত্রটিকে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ছাত্রকে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা জানান, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই মৃত্যু হয়েছে ছাত্রের। মৃত ছাত্রের নাম অর্জুন দাস।
স্থানীয় সূত্রে খবর, মোটরবাইকে করে ছেলেকে নিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্রে যাচ্ছিলেন বাবা বিষ্ণু দাস। হঠাৎ করেই মোটরবাইকের সামনে চলে আসে হাতিটি। মোটরবাইক দেখে তেড়ে আসে হাতিটি। অর্জুনকে ধরে ফেলে হাতি। সেখানেই শুঁড়ে তুলে আছড়ে মারে। তারপর পা দিয়ে পিষে যান। আশঙ্কাজনক ছাত্রটির বাবাও। জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জ ব্লকের মহারাজা ঘাটের বাসিন্দা অর্জুন। সে জলপাইগুড়ির পাচিরাম নাহাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। অর্জুনের পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল বেলাকোবা কেবলপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে। আর জীবনের এই প্রথম বড় পরীক্ষা দিতে গিয়েই প্রাণ হারাল এই ছাত্র।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, ৭-১০ দিন আগেও ওই হাতি একজনকে পিষে মেরেছে। বন দফতরের থেকে সেরকম কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি বলে অভিযোগ। কার্যত অর্জুনের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়েছে এলাকায়। মিল্টন দাস নামে এক স্থানীয় বাসিন্দার কথায়, “প্রতি বছর হাতির হামলা হলেও বনদফতর কোনও দায়িত্ব নেয় না। এই ভাবে কারও মৃত্যু হওয়ার পর চাকরি দিলেই কি সান্ত্বনা পাওয়া যায়?”
হাতির পদপিষ্ট হয়ে অর্জুনের মৃত্যুর ঘটনায় শোকস্তব্ধ গোটা এলাকা। সেখানে পৌঁছেছেন পুলিশ এবং বনকর্মীরা। নিহত ছাত্রটির পরিবারকে আর্থিক সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন রাজগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক খগেশ্বর রায়।
+ There are no comments
Add yours