মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: রামনবমীর (Ram Navami) দিন জেএনইউয়ে (JNU) দুই ছাত্র সংগঠনের মধ্যে অশান্তির ঘটনায় প্রতিক্রিয়া দিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গেরুয়া ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে বাম ছাত্র সংগঠনের আনা আমিষ খাবারে বাধা দেওয়ার তত্ত্ব খারিজ করে কর্তৃপক্ষের তরফে জানিয়ে দেওয়া হল, আমিষ নয়, যজ্ঞে বাধা দেওয়াতেই ঘটনার সূত্রপাত।
বাম ছাত্র সংগঠের অভিযোগ ছিল, ক্যাম্পাসের ভিতর পড়ুয়াদের আমিষ খাওয়ার উপর 'নিষেধাজ্ঞা' জারি করে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (RSS) ছাত্র সংগঠন শাখা অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (ABVP)। তার জেরেই বাকি ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় তারা।
সেই ঘটনার প্রায় ২৪-ঘণ্টা পর কর্তৃপক্ষের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরেই কাবেরী ছাত্রাবাসের ভিতর যজ্ঞের আয়োজন করেছিল এবিভিপি। তাতে বাধাদেয় বামপন্থীরা। আর তার জেরেই নাকি ছড়ায় অশান্তি! যদিও কর্তৃপক্ষের এই দাবি মানতে নারাজ বামপন্থীরা (NSUI)।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে রেজিস্ট্রার রবিকেশ জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে খাদ্যাভাস নিয়ে কোনও বিধিনিষেধ বা নিয়ন্ত্রণ নেই। এখানে যাঁর ইচ্ছা হবে, তিনিই আমিষ খাবার খেতে পারবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে রামনবমীর ঘটনা প্রসঙ্গে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। তাতে বলা হয়, "১০ এপ্রিলে জেএনইউ ক্য়াম্পাসের ভিতর পড়ুয়াদের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। রামনবমী উপলক্ষ্যে ক্য়াম্পাসের ভিতরেই কাবেরী ছাত্রাবাসে একটি যজ্ঞের আয়োজন করা হয়েছিল। কিছু পড়ুয়া তাতে বাধা দেয়। তবে ওয়ার্ডেন এবং ডিনের সহযোগিতায় বিষয়টি তখনকার মতো মিটে যায় এবং যজ্ঞ নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়। কিন্তু, পড়ুয়াদের একাংশ এতে খুশি ছিল না। রাতের খাবার খাওয়ার সময় হলে তারাই ঝামেলা শুরু করে।"
একইসঙ্গে, রবিবারের ঘটনা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ছাত্রাবাসের আবাসিকদের খাদ্যাভ্য়াস এবং খাদ্যতালিকা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থানও স্পষ্ট করেন রেজিস্ট্রার। তিনি বলেন, "ছাত্রাবাস পরিচালনার জন্য ছাত্রদের নিজস্ব কমিটি রয়েছে। এরসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনও সম্পর্ক নেই। খাদ্যতালিকা নিয়েও কর্তৃপক্ষের কিছু বলার নেই।"
কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, যারা রবিবারের সংঘর্ষের জন্য দায়ী, তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইসঙ্গে, এই ধরনের ঘটনার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠন-পাঠন যাতে বিঘ্নিত না হয়, সংশ্লিষ্ট সমস্ত পক্ষকে সেই বিষয়টিও নিশ্চিত করার আবেদন করেছেন রেজিস্ট্রার। উল্লেখ্য, ওই ঘটনার পর গভীর রাতে কাবেরী হস্টেলে যান উপাচার্য শান্তিশ্রী ধুলিপুডি পণ্ডিত-সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য আধিকারিকরা।
প্রসঙ্গত, রামনবমীতে আমিষ খাওয়া নিয়ে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) দু’টি ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল। ঘটনায় ছ’জন আহত হয়েছেন। জেএনইউ বাম ছাত্র ইউনিয়নের সভানেত্রী ঐশী ঘোষ অভিযোগ করেন, ঘটনায় হস্টেলের মেস সেক্রটারিকেও মারধর করা হয়।
প্রসঙ্গত, মেস কমিটি পড়ুয়াদের ভোটেই নির্বাচিত হয়। তারা বিভিন্ন খাদ্যাভ্য়াসের আবাসিকদের জন্য মিলিয়ে মিশেয়ে বিভিন্ন পদের আয়েজন করে। রবিবার মাংস এবং পনীর দুই-ই ছিল খাদ্য তালিকায়। কিন্তু বাম ছাত্র সংগঠনের অভিযোগ ছিল, এবিভিপি সদস্যরা তাঁদের আমিষ খেতে বাধা দেন।
এবিভিপির তরফে পাল্টা অভিযোগ করা হয়, বাম ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা তাঁদের উপর প্রথমে আক্রমণ চালায়। যজ্ঞে বাধা দেয়। এই ঘটনায় রবি রাজ নামে তাঁদের এক সদস্য আহত হয়েছে। তাদের এই দাবিতেই মান্যতা দিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
+ There are no comments
Add yours