মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: হুগলি জেলার অন্তর্গত হরিপাল থানার শ্রীপতিপুর পশ্চিম গ্রাম। এখানকার ৭৩ বছরের সিদ্ধেশ্বরী কালীমাতার মন্দির ও অধিকারী বাড়ির ইতিহাস বেশ চমকপ্রদ। শারদ উৎসব শেষ। সামনে দীপাবলি। চারদিকে ধুমধাম করে হবে কালীপুজো (Kali Puja 2023)। সাধারণত নিকষ কালো অথবা শ্যামলা গায়ের মায়ের প্রতিমা দেখতে অভ্যস্ত আমরা। কিন্তু মা কালীর গায়ের রং সবুজ! তাও হয় নাকি? এই প্রতিমা দেখতে গেলে আসতে হবে হুগলির হরিপালের ওই ছোট্ট সুন্দর গ্রামে। হুগলি জেলার সুপ্রাচীন বর্ধিষ্ণু গ্রাম হরিপাল। এই অঞ্চলে একটি ছোট জনপদ শ্রীপতিপুর গ্রাম। এই গ্রামের অধিকারী পরিবারে দীর্ঘদিন যাবৎ পূজিতা মা সবুজ কালী। এখানে সব চেয়ে আকর্ষণীয় ব্যপার হল, মা কালীর গায়ের রং কচি কলাপাতার মতো সবুজ। বেশ জাগ্রত বলে খ্যাত এই সবুজ মা। আর এই মা কালীকে ঘিরে রয়েছে এক সুদীর্ঘ ইতিহাস।
৭৩ বছর আগে প্রতিষ্ঠা (Kali Puja 2023)
১৩৫৭ সালে এই মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন বটকৃষ্ণ অধিকারী মহাশয়। তিনি এই শ্রীপতিপুরেরই বাসিন্দা ছিলেন। বৈষ্ণবসুলভ আচরণ ছোট থেকেই জন্মসূত্রে পেয়েছিলেন অধিকারী মশাই। তৎকালীন ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাশ করার পর কয়েক বছর ভিন রাজ্যে চাকরি করেন। তারপর ভাগ্যচক্রে আবারও গ্রামে এসে চাষাবাদ শুরু করেন। অতঃপর পরিবারের আদেশ অনুযায়ী জনৈক আঙুরবালা দেবীর সঙ্গে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন। কিন্তু সংসারে তাঁর মতি ছিল না। মাঠে-ঘাটে, শ্মশানে ঘুরে বেড়াতেন। এরকম কয়েক বছর চলার পর জানা যায়, কোনও এক মাঠে তিনি গরুর খুঁট বাঁধছিলেন, সেই মুহূর্তে তাঁর পিছন থেকে এক সাদা বস্ত্র পরিহিত সন্ন্যসী এসে বলেন, অমুক স্থানে অমুক সময়ে তোমার দীক্ষা হবে। এর পরের ঘটনা সবটাই গুপ্ত।
কী জানালেন পরিবারের সদস্যরা?
কথা হচ্ছিল বটকৃষ্ণর সুযোগ্য নাতি দেবজ্যোতি অধিকারীর সঙ্গে। তিনি জানান, এরপর বটকৃষ্ণ শ্মশানে সাধনা করতে করতে সিদ্ধিলাভ করেন, এবং স্বপ্নাদৃষ্ট হয়ে মা কালীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু গোঁড়া বৈষ্ণব পরিবারে জন্ম। তাঁর বাড়িতে কেউ তিলক সেবা রাধাগোবিন্দের নাম না করে জলস্পর্শ করেন না। সেই বৈষ্ণব বাড়িতে কালীপুজো! তৎকালীন সমাজের মাতব্বররা রে রে করে উঠলেন। বললেন নৈব নৈব চ। কিন্তু সমস্ত বাধা অতিক্রম করে তিনি বাড়িতে কালীর ঘট স্থাপন করলেন। বেশ কিছুদিন পর আবার তিনি স্বপ্ন দেখেন, মায়ের মূর্তি স্থাপনের। এবার তিনি দেখেন, অদ্ভুত এক স্বপ্ন। কৃষ্ণ ও কালী একই অঙ্গে বিরাজ করছেন। গাত্রবর্ণ যার সবুজ। একদম কচি কলাপাতার মতো। এভাবেই প্রতিষ্ঠিত হল সবুজ কালী। রটন্তী পূজার দিন প্রতিষ্ঠা করেন এই সবুজ কালী মাকে (Kali Puja 2023)।
প্রতিটি অমাবস্যাতেই আসেন বহু ভক্ত (Kali Puja 2023)
এখানে মা পরম বৈষ্ণব। সারা বছর এই বৈষ্ণব বাড়িতে পূজিতা হন মা সবুজ কালী। পাশাপাশি অদ্ভুত কিছু নিয়ম আছে এখানে। গুপ্ত তন্ত্র মতে পুজো হয়। মা পঞ্চমুন্ডির আসনের ওপর পূজিত হন। যেহেতু বৈষ্ণব বাড়ি, তাই বলি প্রথার চল নেই। এখানে দেবী পরম বৈষ্ণব। কপালে তিলক কাটা হয়। যদিও মায়ের ভোগ আমিষ। বিশেষত ইলিশ মাছের ভোগ মায়ের প্রিয়। সাধারণত মাকালীর প্রিয় রং লাল বলে জবা ফুল দিয়ে পুজো করা হয়। যদিও এই সবুজ কালীর পুজোর ফুল জুঁই। আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল বাঁশি। এখনও মাকে বাঁশি বাজিয়ে শোনান সেবাইতরা। মঙ্গলারতির মাধ্যমে পুজো হয়। প্রতিটি অমাবস্যাতেই বহু ভক্ত আসেন এই মায়ের (Kali Puja 2023) দর্শনে। মায়ের কাছে প্রার্থনা করে অনেকেই সুফল পেয়েছেন বলে বিশ্বাস গ্রামবাসীদের।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours