মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে (Kanchanjunga Express) দুর্ঘটনার জন্য দায়ী মালগাড়ির গতিবেগ, প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে এমনই দাবি রেলের। এই দুর্ঘটনার কারণ খুঁজতে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য সুরক্ষা কমিশনার জনককুমার গর্গের নেতৃত্বে বুধবার থেকে শুরু হয়েছে তদন্তের কাজ। এদিনই কাটিহার ডিভিশনের পক্ষ থেকে দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ ব্যাখ্যা করে একটি তদন্ত রিপোর্ট চিফ সেফটি কমিশনারের কাছে জমা পড়ে। সেই রিপোর্টের এই দাবি করা হয়েছে। মালগাড়িটিকে দ্রুত গতিতে যেতে দেখে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে রাঙাপানির গেটম্যান ‘সতর্ক’ করেছিলেন বলে বুধবার দাবি করেছেন কাটিহার ডিভিশনের ডিআরএম সুরেন্দ্র কুমার।
কাঞ্চনজঙ্ঘা ২৮ মিনিট, মালগাড়ি নেয় ১৩ মিনিট
রেল সূত্রে খবর, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে (Kanchanjunga Express) দুর্ঘটনার তদন্তে এদিন ডেকে পাঠানো হয় রাঙাপানির স্টেশন ম্যানেজার, রেল গেটের গার্ড, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের চালকদের৷ শিলিগুড়ি এনজেপি স্টেশন সংলগ্ন এডিআরএম অফিসে হাজির হন সকলে। সেখানেই একটি প্রাথমিক রিপোর্ট পেশ করা হয়। দুর্ঘটনার সময় কর্তব্যরত কর্মীরা কে, কী দায়িত্ব পালন করছিলেন, তা রয়েছে রিপোর্টে। প্রাথমিক তদন্তে যে তথ্য উঠে আসছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, সোমবার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস রাঙাপানি স্টেশনে ঢোকে। ছাড়ে ৮টা ২৭ মিনিট নাগাদ। দুর্ঘটনাটি ঘটে ৮টা ৫৫ মিনিটে। আর মালগাড়িটি ৮টা ৪২ মিনিটে রাঙাপানি স্টেশন ছাড়ে। রাঙাপানি স্টেশন থেকে দুর্ঘটনাস্থলের দূরত্ব আড়াই কিলোমিটারের কাছাকাছি। হিসেব করে দেখা যাচ্ছে, ওই পথ অতিক্রম করতে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস সময় নেয় প্রায় ২৮ মিনিট। অন্য দিকে, মালগাড়ির সময় লাগে ১৩ মিনিট।
কী বলছেন ডিআরএম
রিপোর্টে বলা হয়েছে, মালগাড়ির চালক এবং সহকারী চালক তিরিশ ঘণ্টা বিশ্রাম নেওয়ার পরে ট্রেনে চেপেছিলেন। ফলে টানা ডিউটির জেরে চালকেরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন, সেই যুক্তি এক্ষেত্রে খাটছে না। দুর্ঘটনাস্থল নির্মলজোত এলাকায় বজ্রপাতের ফলে সোমবার সকাল ৫টা ৫০ মিনিটে অটোমেটিক সিগন্যালিং ব্যবস্থা বিকল হয়ে পড়ে। এর পরে নিউ জলপাইগুড়ি-আলুয়াবাড়ি মেইন রুটের ডাউন লাইন দিয়ে মালগাড়ির আগে মোট সাতটি ট্রেন যায়। চালকেরা সকলেই ম্যানুয়াল মেমো সিস্টেমে গাড়ি নিয়ে এগিয়ে যান। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসও (Kanchanjunga Express) সেই নিয়ম মেনেই এগোচ্ছিল। প্রাথমিক তদন্তে দাবি, ভুল ছিল মালগাড়ির চালকরেই। তবে ডিআরএম বলেন, ‘‘এখনই কোনও তথ্যে সিলমোহর বসাচ্ছে না রেল। সবটাই প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে অনুমান।"
তদন্ত শেষ হতে কতদিন
তদন্ত (Kanchanjunga Derailed) শেষ হতে কত দিন লাগবে, তা নিয়ে ডিআরএম বলেন, ‘‘আদৌ কত দিন সময় লাগবে, তা আগে থেকে বলা সম্ভব নয়। তবে যে সমস্ত প্রশ্ন উঠে আসছে প্রশিক্ষণ না-দেওয়া বা মালগাড়ির চালকের পর পর তিন দিন নাইট ডিউটি দেওয়া নিয়ে, তা সবটাই তদন্তসাপেক্ষ। চালকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণই দেওয়া হয়। যখনই কোনও দুর্ঘটনা ঘটে, তখনই প্রশিক্ষণের কথা উঠে আসে। শুধুমাত্র বয়ান নয়, স্পিডোমিটারে মালগাড়ির গতিবেগ কত ছিল, সেটাও দেখা হবে। অন্য দিকে, মালগাড়ির যে ইঞ্জিন রয়েছে, সেটাতেও টেকনিক্যাল ফরেনসিক তদন্ত হবে।’’
আরও পড়ুন: ডাক্তারিতে সুযোগ, পরে আইএএস! চাকরি ছেড়ে ২৬ হাজার কোটির কোম্পানি রোমান সাইনির
১০ জনের বয়ান লিপিবদ্ধ
উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের কাটিহার ডিভিশনের ডিআরএম সুরেন্দ্র কুমার বলেন, "দুর্ঘটনার (Kanchanjunga Derailed) সঙ্গে সম্পর্কিত প্রায় দশ জন কর্মীর বয়ান এদিন রেকর্ড করা হয়েছে। তার মধ্যে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের চালক রাজু বাল্মিকী, সহকারী চালক শৈলেন্দ্র কুমার, রাঙাপানি স্টেশনের কর্মী, গেটম্যান, লাইনম্যানের বয়ানও রেকর্ড করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ১০ জনের বয়ান লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। অন্তত ৩০ জনকে তলব করা হয়েছে। তাঁদেরও বয়ান লিপিবদ্ধ করা হবে এবং একের সঙ্গে অন্যের বয়ান মিলিয়ে দেখা হবে।"
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours