মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠে গাওয়া, 'আকাশ প্রদীপ জ্বলে দূরের তারার পানে চেয়ে' গানটি বাঙালির এক নস্টালজিয়া। এই 'আকাশ প্রদীপ' (akash Pradip) কয়েক বছর আগেও কার্তিক মাসে বাংলার ঘরে ঘরে জ্বলে উঠত। এখন অবশ্য আধুনিকতার ছোঁয়ায় লোকাচার যেন হারিয়ে যাচ্ছে। তবুও গ্রাম বাংলায় কার্তিক মাসের হালকা শীতের চাদর মোড়ানো সন্ধ্যায় সন্ধান পাওয়া যায় 'আকাশ প্রদীপ' এর। পুরাণ মতে , দীর্ঘ চার মাসের যোগনিদ্রা শেষে, কার্তিক (Kartik) মাসে জেগে ওঠেন ভগবান বিষ্ণু। তাঁকে প্রসন্ন রাখতে, ভক্তরা কার্তিক মাসের প্রথম দিন থেকে সংক্রান্তির দিন পর্যন্ত, প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলায় মাটির প্রদীপ ঘি বা তেল দিয়ে জ্বালিয়ে রাখেন। বাড়ির সব থেকে উঁচু স্থানে উত্তর অথবা পূর্ব দিকে মুখ করে রেখে এই প্রদীপ জ্বালানো হয়। লাঠির ডগায় ছাদের উপরেও এই প্রদীপ দিতে দেখা যায়। বর্তমান সময়ে প্রদীপের বদলে বৈদ্যুতিক বাতিও দেন অনেকে। বিশ্বাস, ভক্তদের আকাশ প্রদীপ অর্পণে সন্তুষ্ট হয়ে ভগবান বিষ্ণু তাঁদের মনস্কামনা পূরণ করেন। সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধিতে ভরে ওঠে ভক্তদের জীবন। আরোগ্য ও আশীর্বাদ প্রদান করেন ভগবান বিষ্ণু।
অন্য একটি কিংবদন্তি মতে, আশ্বিন মাসের মহালয়ার দিন পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করা হয়। তার পরের একটি মাস তাঁরা আনন্দ উৎসবে সামিল হন এবং পরলোকের উদ্দেশ্যে গমন করেন কালী পূজার অমাবস্যায়। এই প্রদীপ (akash Pradip) জ্বেলে আবাহন করা হয় পিতৃলোকে, প্রেতলোকে অবস্থান করা পূর্বপুরুষদেরও। যাতে তাঁরা আকাশ প্রদীপের আলোয় পথ চিনে আশীর্বাদ দিতে আসতে পারেন উত্তরসূরীদের।
প্রদীপ হিন্দু ধর্মের যে কোনও অনুষ্ঠানের সব থেকে অপরিহার্য এবং গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ধর্মীয় আচার, রীতি সবকিছুই সম্পন্ন হয় প্রদীপের দ্বারা। ভগবান বিষ্ণুর বন্দনা করতে তাই বেছে নেওয়া হয়েছে 'আকাশ প্রদীপ' (akash Pradip)। ভগবান বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে সমর্পিত এই প্রদীপের ধরন আলাদা আলাদা হয় এবং তা ভক্তদের নানা মনোবাসনা পূরণের লক্ষ্যে জ্বালানো হয়। একনজরে আমরা দেখে নিই আকাশ প্রদীপের ধরন গুলি।
১. দ্বিমুখী প্রদীপ: ভগবানের অসীম কৃপা লাভ, আশীর্বাদ লাভ এবং দীর্ঘজীবনের অধিকারী হওয়া যায় দ্বিমুখী প্রদীপ জ্বালালে। এটাই ভক্তদের বিশ্বাস।
২. ত্রিমুখী প্রদীপ: লোকবিশ্বাস, এই প্রদীপ জ্বালালে শত্রুর কু-নজর থেকে ভগবান বিষ্ণু ভক্তদের রক্ষা করেন।
৩. চতুর্মুখী প্রদীপ: সন্তানের দীর্ঘজীবন কামনা করে মা-বাবারা এই প্রদীপ জ্বালেন।
আরও পড়ুন: কার্তিক মাসে গ্রাম বাংলায় পালিত হয় 'যমপুকুর ব্রত'! জানেন এর নেপথ্য গল্প?
কার্তিক মাসব্যাপী সন্ধ্যার সময় অনেক গৃহে তুলসীতলায় প্রদীপ জ্বালানোর রীতি রয়েছে।পুকুরে বা নদীতেও অনেক সময় প্রদীপ ভাসানো হয় ভগবানের আশীর্বাদ এবং কৃপা লাভের উদ্দেশ্যে। আকাশপ্রদীপ দেওয়ার মন্ত্রটি হলো- "আকাশে সলক্ষ্মীক বিষ্ণোস্তোষার্থং দীয়মানে প্রদীপঃ শাকব তৎ।"আকাশে লক্ষ্মীর সঙ্গে অবস্থান করছেন যে বিষ্ণু, তাঁর উদ্দেশে দেওয়া হল এই প্রদীপ। ঘটের মতো প্রদীপকেও অনেক পণ্ডিত দেহেরই প্রতীক বলে মনে করেন। আকাশ-প্রদীপও (akash Pradip) নশ্বর শরীরের মতো ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ ও ব্যোম- এই পঞ্চভূতে তৈরি।
ক্ষিতি অর্থাৎ মাটি, কায়া তৈরি করে। অপ অর্থাৎ জলে আকার পায়। তেজ অর্থাৎ আগুন, আত্মার মতোই স্থিত হয় তার অন্তরে। মরুৎ অর্থাৎ হাওয়া আগুনকে জ্বলতে সাহায্য করে। আর ব্যোম অর্থাৎ অনন্ত শূন্য জেগে থাকে প্রদীপের গর্ভে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ।
+ There are no comments
Add yours