Mamata Foreign Tours: স্পেন নয় প্রথম! অতীতেও লগ্নি আনতে বিদেশে গিয়েছিলেন মমতা, প্রাপ্তি ‘লবডঙ্কা’

Bengal Industry Situation: মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর সিঙ্গাপুর থেকে লন্ডন, মিলান থেকে হেগ— বিদেশে এর আগেও শিল্প সম্মেলন করেছেন মমতা, লাভ হয়নি কিছুই
mamata-banerjee-2_new
mamata-banerjee-2_new

একদা রোমান সেনেটকে লেখা এক চিঠিতে রোম সম্রাট জুলিয়াস সিজার উল্লেখ করেছিলেন ‘ভেনি, ভিডি, ভিসি’ শব্দবন্ধের। বাংলায় যার অর্থ— ‘এলাম, দেখলাম, জয় করলাম’ স্বরূপ। এরাজ্যের শিল্প-বাণিজ্য সম্মেলনে যোগ দিতে আসা দেশি-বিদেশি শিল্পপতিদের মুখে ‘পি-থ্রি’ থাকে। যার অর্থ— প্রবেশ, প্রস্তাব, প্রস্থান...

 

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ঠিক এক যুগ আগে, ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পর মসনদে বসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আশ্বাস দিয়েছিলেন, রাজ্যে শিল্পে জোয়ার আনবেন তিনি। দাবি করেছিলেন, বিনিয়োগের বন্যায় ভেসে যাবে রাজ্য। কিন্তু, সব প্রতিশ্রুতিই সার! যদিও, এখনও সেই একই বুলি আওড়ে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর সেই গালগপ্পোকে হাতিয়ার করেই তিনি বর্তমানে স্পেন-মধ্যপ্রাচ্য সফরে গিয়েছেন— রাজ্যে বিনিয়োগ আনতে (Mamata Foreign Tours)। যদিও, শেষেমেশ কী আসবে, তা নিয়ে জোর বিতর্ক হতেই পারে। কারণ, অতীতে যে বাণিজ্য-শিল্প সফর করেছিলেন তিনি, সেখান থেকে কার্যত খালি হাতেই ফিরেছেন (Bengal Industry Situation)। 

রাজ্যে বিনিয়োগ খতিয়ান

দেশে-বিদেশে মুখ্যমন্ত্রী একাধিক বাণিজ্য সম্মেলন থেকে শুরু করে শিল্প মেলার আয়োজন করেছেন। প্রত্যেকটায় নিট ফল শূন্য। না, এটা বিরোধীদের গাল-ভরা অভিযোগ নয়। খোদ সরকারি পরিসংখ্যানই তাই বলছে। ২০১৫ সালে রাজ্যের শিল্প সম্মেলনে ঘোষিত হয়েছিল ২,৪৩,১০০ কোটি টাকার লগ্নি৷ বাস্তবায়িত হয়েছে মাত্র ৯৮৩ কোটি টাকা৷ অর্থাৎ ঘোষণার মাত্র ০.৪ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে৷ ২০১৬ সালে বাস্তবায়িত হয়েছে ৩,৪৩৩ কোটি টাকা যা ঘোষণার ১.৩ শতাংশ, ২০১৭ সালে বাস্তবায়িত হয়েছে ২,৫৩৬ কোটি টাকা, যা ঘোষণার ১.০৭ শতাংশ।

প্রবেশ, প্রস্তাব, প্রস্থান

ইতিহাসবিদদের মতে, আনুমানিক ৪৭ খৃষ্টপূর্ব সময়ে জুলিয়াস সিজার রোমান সেনেটকে লেখা এক চিঠিতে একটি বীরত্বসূচক বাক্যাংশ উল্লেখ করেছিলেন। যা পরবর্তীকালে, অমর হয়ে যায়। সেই বাক্যাংশটি ছিল ‘ভেনি, ভিডি, ভিসি’। বাংলায় যার অর্থ— ‘এলাম, দেখলাম, জয় করলাম’ স্বরূপ। রোম সম্রাটের বাক্যাংশ ‘ভি-থ্রি’ (তিনটে ইংরেজি অক্ষর ভি) হলে, এরাজ্যের শিল্প-বাণিজ্য সম্মেলনে যোগ দিতে আসা দেশি-বিদেশি শিল্পপতিদের মুখে ‘পি-থ্রি’ থাকে। যার অর্থ— প্রবেশ, প্রস্তাব, প্রস্থান। অর্থাৎ, তাঁরা আসেন, বড় বড় প্রস্তাব-প্রতিশ্রুতি দেন এবং প্রস্থান করেন। এ তো গেল রাজ্য সম্মেলনের কথা। এবার আসা যাক বিদেশে মমতার শিল্প-বাণিজ্য সম্মেলনের কথায়। মসনদে আসীন হওয়ার পর মমতা প্রথম বিদেশে বাণিজ্য সম্মেলন করেন সিঙ্গাপুরে ২০১৪ সালের অগাস্ট মাসে (Mamata Foreign Tours)। সেবার ব্যাঙ্কিং, তথ্যপ্রযুক্তি জগতের একঝাঁক প্রতিনিধি সহ ৫২ জন বণিক-কর্তা ও ১২ জন সরকারি আধিকারিক মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়েছিলেন। ছিলেন বিনোদন জগতের ব্যক্তিত্বরাও।

সিঙ্গাপুর থেকে কি কিছু এল?

টলিউডের আশা ছিল, সিঙ্গাপুরে যেমন হলিউডের স্টুডিও আছে, সেই মতো বিদেশি স্টুডিও যেন এরাজ্যেও গড়ে ওঠে। টলিউডের দাবি ছিল, সিঙ্গাপুরের পরিকাঠামো যাতে এরাজ্যে আসে, তার প্রয়াস যেন করেন মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Foreign Tours)। শোনা গিয়েছিল, সিঙ্গাপুরের মতো দিঘাতেও ওয়াটার ওয়ার্ল্ড গড়ে উঠবে। তৈরি হবে আন্ডারওয়াটার পার্ক, সাবমেরিন মিউজিয়াম। শেষে দেখা গেল, সিঙ্গাপুর থেকে বিনিয়োগের ছিঁটেফোঁটাও এলো না। দিঘায় এখন শুধুমাত্র সিঙ্গাপুরি কলা পাওয়া যায়। ওয়াটার ওয়ার্ল্ড বিশ বাঁও জলে। এও শোনা গিয়েছে, সিঙ্গাপুরে বসবাসকারী এক অনাবাসী ভারতীয় পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগ করতে চেয়েছিলেন। তিনি বালিতে জমি কিনেছিলেন। কিন্তু, স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলরের মাধ্যমে তাঁকে টাকার জন্য এত চাপ দেওয়া হয়, যে সেই অত্যাচারে তিনি চলে যান এরাজ্য থেকে (Bengal Industry Situation)।

কলকাতা হয়ে উঠল কি লন্ডন?

মসনদে বসেই মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছিলেন, কলকাতাকে লন্ডন বানিয়েই ছাড়বেন। সেই গপ্পে ভর করে ২০১৫ সালে লন্ডন সফরে যান মমতা (Mamata Foreign Tours)। তৎকালীন মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র, কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়, রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র, সাংসদ ডেরেক ও’ ব্রায়েন, সাংসদ-শিক্ষাবিদ সুগত বসু, সাংসদ-অভিনেতা দেব, ফিকির সভাপতি জ্যোৎস্না সুরি-সহ এক বিশাল দল নিয়ে জুলাই মাসের শেষে লন্ডন সফর করেন মমতা। ঘটা করে বাণিজ্য সম্মেলন হয়। একাধিক বৈঠক, কথা-আলোচনা... সেবারও অনেক প্রতিশ্রুতি প্রাপ্তি ঘটেছিল। ব্যস, ওই পর্যন্তই। গাল-গপ্পো শেষে দেখা গেল, সবই ‘ধাপ্পা’ (Bengal Industry Situation)। আট বছর পর, সম্প্রতি রেড রোডের ধর্না মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী সদর্পে ঘোষণা করেন, কলকাতাকে লন্ডনের থেকেও ভালো করে দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী এও দাবি করেন, লন্ডনে একটা হাইড পার্ক আছে। সেখানে কতগুলো চিপসের দোকান আছে আর কয়েকটা হাঁস চরে বেড়ায়। আর কিছু নেই।

মমতার জার্মানি-ইতালি সফর

এখানেই শেষ নয়। রাজ্যে শিল্প টানতে মুখ্যমন্ত্রী অতীতে নেদারল্যান্ডস থেকে শুরু করে জার্মানি, ইতালিতেও পাড়ি দিয়েছিলেন।  রাজ্যে বিনিয়োগ টানতেই এই  বিদেশ সফরে ছিল মুখ্যমন্ত্রীর (Mamata Foreign Tours)। ২০১৭ সালের জুন মাসে স্থানীয় বণিকসভার সঙ্গে ছিল মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক, সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র। এছাড়াও ছিলেন রাজ্যের শিল্প প্রতিনিধিরাও। এর পর ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ১২ দিনের সফরে জার্মানি ও ইতালি যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেবারও তাঁর সঙ্গী ছিলেন অমিত মিত্র। তাছাড়া তৎকালীন মুখ্যসচিব মলয় দে, তৎকালীন অর্থসচিব (বর্তমানে মুখ্যসচিব) এইচকে দ্বিবেদীও গিয়েছিলেন মমতার সঙ্গে। সেবার ফ্র্যাঙ্কফুর্ট এবং মিলানে বণিকসভার সঙ্গে বৈঠক করেন মমতা। কিন্তু, সেখান থেকেও কার্যত খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে তাঁকে (Bengal Industry Situation)। 

কেন রাজ্যের শিল্পের এই দুরবস্থা?

বিরোধীদের কটাক্ষ, কোনও শিল্পপতি এরাজ্যে বিনিয়োগে রাজি হননি। কোনও শিল্পপতি রাজ্যে বিনিয়োগ করে অর্থ নষ্ট করতে চাইছেন না। তাঁদের মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যবে থেকে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন, তবে থেকেই বিজনেস সামিট হয়। কিন্তু সেখানে নামকরা কোনও শিল্পপতি আসেন না। থাকেন কিছু সাজানো শিল্পপতি। আর ওই একই লোকেরা প্রতিবছর এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছবি তোলেন। তাঁরা ভালো ভালো কথা বলেন, কিন্তু বিনিয়োগ করেন না। শিল্প বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজ্য শিল্পে পরিকাঠামো, আইনশৃঙ্খলা ক্রমশ অবনতি ঘটাতেই নতুন বিনিয়োগে ভরসা পাচ্ছেন না মাঝারি শিল্পপতিরা। এছাড়াও রাজ্যে শাসক দলের দাপট বেড়ে চলায় রাজ্যে বিনিয়োগে ভরসা কমেছে নতুন শিল্প উদ্যোগীদের (Bengal Industry Situation)। এছাড়াও শাসক দলের শিল্প তাড়ানোর যে ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছে, তা থেকে আজও মুক্ত হতে পারেনি রাজ্য।

 

দেশের খবরদশের খবরসব খবরসবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের FacebookTwitter এবং Google News পেজ

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles