মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ফের পুলিশ লক-আপে মৃত্যু ঘিরে উত্তাল শহর কলকাতা। থানার মধ্যে পিটিয়ে এক ব্যক্তিকে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠল আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার (Amherst Street PS) পুলিশের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগ ঘিরে পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়ে মৃতের পরিবার। দফায় দফায় রাস্তা অবরোধ করেন স্থানীয়রা। ওঠে সিবিআই তদন্তের দাবি। এই ঘটনায় রাজ্য প্রশাসনকে তুলোধনা করেছে বিজেপি। থানার সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশের দাবি তুলেছে বিরোধীরা। এর পরই নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ। ঘটনার সময় থানায় কর্মরত পুলিশকর্মীদের নামের তালিকা তৈরি করেছে লালবাজার।
চোরাই ফোন কেনায় থানায় জিজ্ঞাসাবাদ
জানা গিয়েছে, মৃত ব্যক্তির নাম অশোক সিং। বুধবার, ফোন চুরির একটি তদন্তে ওই ব্যক্তিকে থানায় ডেকে পাঠানো হয়েছিল। মৃতের পরিবারের দাবি, সম্প্রতি ২০০ টাকা দিয়ে একটি ফোন কিনেছিলেন অশোক। সেই নিয়ে থানা (Amherst Street PS) থেকে ফোন করা হয় তাঁকে। বলা হয়, ফোনটি চুরির ফোন। গতকাল থানায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করছিল পুলিশ। সেই সময় বছর বেয়াল্লিশের অশোকের মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ। পরিবারের দাবি, থানার ভেতরে অশেককে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে। যদিও পুলিশের পাল্টা দাবি, ওই ব্যক্তি আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন।
কী জানাচ্ছে মৃতের পরিবার?
পরিবার সূত্রে খবর, বিকেল পাঁচটা নাগাদ আমহার্স্ট স্ট্রিট (Amherst Street PS) থানায় যান অশোক। কিছু ক্ষণ পরই থানায় পৌঁছে ওই ব্যক্তিকে থানার মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন তাঁর পরিবারের লোকজন। মৃতের মুখ দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছিল বলেও অভিযোগ। পুলিশের তরফেই মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অশোককে মৃত (Death In Police Station) বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। পরিবারের প্রশ্ন, থানায় ঢোকার আগে পর্যন্ত দিব্যি সুস্থ ছিলেন অশোক। ভিতরে ঢুকে কী করে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন তিনি? অশোকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই উত্তপ্ত হয়ে পড়ে গোটা এলাকা। থানার সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন স্থানীয়রা। দীর্ঘক্ষণ রাস্তা অবরোধ চলে। তাঁদের দাবি, ঘটনার সিবিআই তদন্ত হলেই প্রকৃত সত্য সামনে আসবে।
ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ বিজেপির
এদিকে এই ঘটনায় পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিজেপি। আমহার্স্ট স্ট্রিট (Amherst Street PS) থানার ওসি সহ ডিউটিরত পুলিশ কর্মীদের ক্লোজ করে অবিলম্বে হেফাজতে নেওয়ার দাবিতে সরব হয়েছে গেরুয়া শিবির। রাতে থানার সমানে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কাউন্সিলার সজল ঘোষ। তাঁর আরও দাবি, মৃত অশোক কুমার সিংয়ের দেহের ময়নাতদন্ত রাজ্য সরকারের কোনও হাসপাতালে না করে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্ত যে কোনও হাসপাতালে করতে হবে৷ তাঁর দাবি কীভাবে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে, তা জানার জন্য ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷
রাজ্য প্রশাসনকে আক্রমণ দিলীপ ঘোষের
আমহার্স্ট স্ট্রিট (Amherst Street PS) থানার ঘটনায় রাজ্য সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেছেন সাংসদ দিলীপ ঘোষ। বৃহস্পতিবার সকালে, নিউটাউনে প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে বিজেপি সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে পুলিশের কাজকর্ম ক্রমশ খুব বিতর্কিত হয়ে যাচ্ছে। এমনিতেই পুলিশকে নিয়ে চিন্তা আছে। সিপিএম আমলে পুলিশকে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এখন গোটাটাই পুলিশ করছে। তৃণমূল পার্টি বলে কিছু নেই। পুলিশ টাকা তুলে দিচ্ছে। বিরোধীদের ঠান্ডা করছে। ফলে তাদের ওপর কোনও কন্ট্রোল নেই। যেখানে গণপ্রহারে লোক মরছে সেখানে পুলিশের দেখা নেই। যেখানে গুলি চলছে, পুলিশ দাঁড়িয়ে দেখছে। ঘরবাড়িতে আগুন লাগানো হচ্ছে, পুলিশ নির্বিকার। আর এখানে, কার মোবাইল চুরি হয়েছে, কোনও তথ্য প্রমাণ ছাড়াই লোককে ডেকে থানায় পিটিয়ে মেরে (Death In Police Station) ফেলা হচ্ছে। এর পিছনে কী রহস্য? তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। মানুষ ভয়ে আছে। দুষ্কৃতীদের থেকে বাঁচতে মানুষ পুলিশের কাছে যায়। পুলিশ যদি এরকম অত্যাচার করে, তাহলে মানুষ কোথায় যাবে?’’
খতিয়ে দেখছে লালবাজার
এদিকে, এই ঘটনায় খতিয়ে দেখছেন কলকাতা পুলিশের একজন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার পদমর্যাদার পুলিশ আধিকারিক৷ এছাড়া ওই ঘটনার সময় আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার (Amherst Street PS) অফিসার ইনচার্জ এবং অতিরিক্ত অফিসার ইনচার্জ-সহ যে ক'জন পুলিশকর্মী থানায় উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের নামের তালিকা তৈরি করেছে লালবাজার৷ তাঁদের সঙ্গে আলাদা আলাদা করে কথা বলে ঠিক কী হয়েছিল, তা জানার চেষ্টা করবেন পুলিশ কর্তারা৷ ওই ব্যক্তিকে থানায় ডেকে কীভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল এবং থানায় ডাকার যে আইনি নিয়ম রয়েছে, তা এক্ষেত্রে মানা হয়েছিল কি না তাও খতিয়ে দেখছেন লালবাজারের তদন্তকারী আধিকারিকরা (Death In Police Station)।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours