মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: তাঁর মা দেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনি কেউই নন। তা সত্ত্বেও প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ছেলে সঞ্জয় প্রশাসনে হয়ে উঠেছিলেন দু’নম্বর ব্যক্তিত্ব। অন্তত বিরোধীদের দাবি তা-ই (Maruti Making)। স্রেফ ইন্দিরার ছেলে হওয়ায় যুব কংগ্রেসের প্রধানের ভূমিকায় চলে গিয়েছিলেন তিনি। ইন্দিরাই দেশে জারি করেছিলেন ২১ মাসের জরুরি অবস্থা। বেছে বেছে বিরোধীদের জেলে পুরে ছিলেন। কংগ্রেসের মধ্যেও যাঁরা জরুরি অবস্থার বিরোধিতা করেছিলেন, তাঁদেরও রেহাই দেননি ‘স্বৈরাচারী’ (বিরোধীরা অন্তত তেমনই বলেন) ইন্দিরা।
সঞ্জয় গান্ধী
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, সরকারের অংশ না হয়েও, বকলমে সরকার পরিচালনা করতেন সঞ্জয়। মায়ের হাতে দেশের চূড়ান্ত ক্ষমতার রশি থাকায় আখের গুছিয়ে নিতে উদ্যোগী হন সঞ্জয়। ইন্টারমিডিয়েট (১০+২) যোগ্যতায় যেখানে ছোটখাট কোনও কোম্পানিতে চাকরি হওয়ার কথা, সেখানে সঞ্জয় চেয়েছিলেন অটোমোবাইল কারখানার মালিক হতে (Maruti Making)। গান্ধী পরিবারের এক বন্ধুর মারফত রোলসের লন্ডন প্ল্যান্টে সঞ্জয়ের তিন বছরের শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করার ব্যবস্থা হয়। বছর দুয়েক পরেই ভারতে ফিরে আসেন ইন্দিরা-পুত্র। দেশে ফিরে সঞ্জয় যোগাযোগ করেন মেকানিক অর্জুন দাসের সঙ্গে। ইনিই হয়েছিলেন সঞ্জয়ের প্রাথমিক সহযোগী। দিল্লির সমস্ত চোরবাজার ছিল এঁর নখদর্পণে। সঞ্জয় এবং অর্জুনের যৌথ উদ্যোগে দ্রুত একটি গাড়ির প্রোটোটাইপ তৈরি করা হয়েছিল।
লাইসেন্স দিয়েছিলেন ইন্দিরা স্বয়ং!
১৯৬৮ সালে আরও অনেকগুলি কোম্পানির সঙ্গে দরপত্র দেয় সঞ্জয়ের কোম্পানিও। সঞ্জয়ের প্রস্তাব ছিল আইএনআর ৬০০০ এর ইউনিট মূল্যে একটি গাড়ি তৈরি করা। সঞ্চয়কে এই গাড়ি তৈরির লাইসেন্স দিয়েছিলেন ইন্দিরা স্বয়ং। তার আগেই অবশ্য ইন্দিরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল লাইসেন্সিং কমিটির সভাপতিত্ব গ্রহণ করেছিলেন। ঘটনাটিকে বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজয়েপী ‘নগ্ন দুর্নীতি’ বলে অভিহিত করেছিলেন।
১৯৭১ সালের অগাস্ট মাসে প্রতিষ্ঠিত হয় মারুতি মোটরস লিমিটেড। এর প্রথম ব্যবস্থাপনা পরিচালক হয়েছিলেন সঞ্জয়। মারুতি কারখানা স্থাপনের জন্য গুরগাঁওয়ে ২৯৭ একর জমি অধিগ্রহণ করেছিলেন। প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়েছিল, হাজার আটেক টাকা মূল্যের দেশীয় গাড়ি তৈরি করা হবে এই কারখানায়। এর আগেই অবশ্য মারুতিকে ৫০ হাজারটি কম দামের গাড়ি তৈরির লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল।
আর পড়ুন: ক্রমাগত হারের ধাক্কায় রাজনীতিতে থেকে বিদায় নিলেন বাইচুং
জানা গিয়েছে, দিল্লি-জয়পুর হাইওয়েতে যে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল, সেই জমি কৃষি জমি নয় বলে দাবি করা হয়েছিল। যদিও পরে দেখা যায়, অধিগৃহীত জমির ৯০ শতাংশ অংশেই সেচের ব্যবস্থা ছিল। এলাকায় একটি এয়ারফোর্স গোলাবারুদ ডাম্প এবং এয়ারফিল্ড ছিল। প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে সেসবই সরানো হয়। জমি অধিগ্রহণ করতে গিয়ে যে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছিল, তাও যৎসামান্য। একর প্রতি জমির মালিকদের ১২ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছিল।
এমডি হিসেবে সঞ্জয় মারুতি লিমিটেডে (Maruti Making) দশ টাকার দশটি শেয়ার কিনেছিলেন। তাঁর বিনিয়োগের পরিমাণ ১০০ টাকা। দেশজুড়ে ৭৫ জন ডিলার নিয়োগ করে সঞ্জয়ের কোম্পানি। ডিলারশিপ ফি বাবদ আদায় করা হয় ২১৮ কোটি টাকা। সময়ে গাড়ি সরবরাহ না করায় প্রতিবাদ করেছিলেন কয়েকজন ডিলার। জরুরি অবস্থার সময় মিসা আইনে গ্রেফতার করা হয় তাঁদের। ১৯৭৭ সালে প্রথম গাড়ি লঞ্চ করছিল সঞ্জয়ের কোম্পানি। পরে এমটিএসের সহযোগী সংস্থা হিসেবে চালু হয় মারুতি হেভি ভেহিক্যালস (পি)। এই সংস্থা ১৬ লাখ এমএইচভি পারকিন্স ও ফোর্ড ইঞ্জিন আমদানি করেছিল। তাদের সঙ্গে পুরানো রোলারগুলিকে সংস্কার করে। পরে সেগুলিকে নতুন হিসেবে বিক্রি করে বলে অভিযোগ।
অকালে প্রয়াত হন সঞ্জয়। তবে সেই স্বল্প জীবনে তিনি ভারতে রেখে গিয়েছেন কেলেঙ্কারির কালো দাগ (Maruti Making)।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours