মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: কাশফুলের মাথা দোলানো, শরতের আকাশ -পুজোর আমেজ আরও বাড়িয়ে দেয়। মহামায়ার আরাধনায় মেতে থাকে আপামর বাঙালি। কিন্তু, দুর্গাপুজোর (Durga Puja) স্থায়ীত্ব যদি একদিন হয়? ভাবলেই মনটা বিষাদে ভরে ওঠে, শুনতে অবাক মনে হলেও এটা সত্যি। এই বংলাতেই হয়। পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল হিরাপুরের ধেনুয়া গ্রামে বোধনের দিনেই বেজে ওঠে নবমীর নিষ্ঠুর সুর। পিতৃপক্ষের অন্তিমক্ষণে একদিনের জন্য বাড়ি আসেন উমা। পুজো নিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পাড়ি দেন কৈলাসের পথে।
কীভাবে শুরু হয়েছিল এই পুজো? (Durga Puja)
পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল হিরাপুর ধেনুয়া গ্রামে কালীকৃষ্ণ যোগাশ্রমে সত্তোরের দশকে আসাম থেকে তেজানন্দ ব্রহ্মচারী নামে এক মহারাজ আসেন। তিনি মহালয়ার দিন স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই পুজোর (Durga Puja) সূচনা করেন। শুরু হয় একদিনের দুর্গাপুজো। মহালয়ার দিনেই পুজো নেন দেবী মহামায়া। কুমারীরূপে পুজো করা হয় দেবীকে। একদিনের পুজো শেষে হয় প্রতিমা নিরঞ্জন। এখানে দেবী অসুরবিনাশিনি রূপে দেখা দেন না। দুই সখা, জয়া-বিজয়াকে সঙ্গে নিয়ে বাপের বাড়ি আসেন পার্বতী। জয়া-বিজয়ার সঙ্গে দেবী দুর্গার মূর্তি সচরাচর দেখা মেলে না এই বাংলায়। তবে এই ধরণের মূর্তির পুজো, বিশেষভাবে প্রচলিত রয়েছে বাংলাদেশে। অনেকের ধারণা, আসামের বাসিন্দা তেজানন্দ ব্রহ্মচারীর সঙ্গে নিবিড় যোগযোগ ছিল বাংলাদেশের। সেই কারণে বাংলার গ্রামে অসুর মর্দিনী রূপে দুর্গা পুজো না করে, কুমারী মহামায়ার মূর্তি আরাধনার জন্য বেছে নিয়েছিলেন তিনি।তেজানন্দ মহারাজের চালু করা নিময় মেনে এখনও ধেনুয়া গ্রামে হচ্ছে একদিনের দুর্গাপুজো। তবে এখন পুজো পরিচালনার সব দায়িত্ব রয়েছে গৌরী কেদারনাথ মন্দির কমিটির হাতে। ২০০৩ সাল থেকে এই পুজো পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে তাঁরা। ধেনুয়া গ্রামে কুমারী মহামায়ার পুজো হয় বৈষ্ণব মতে। যুগলমন্ত্র জানা কোনও পুরোহিত এই পুজো করেন। এই মন্দিরে পশুবলি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
পুজোয় মেতে ওঠেন গোটা গ্রামবাসী
কুমারী দুর্গা পুজোর (Durga Puja) জন্য আগে বিশেষ নিয়ম চালু ছিল ধেনুয়া গ্রামে। আশপাশের বিভিন্ন এলাকার ২১ জন কুমারী মেয়েকে নিয়ে এসে পুজোর আয়োজন করত। তবে, সেই নিয়মে কিছুটা ভাটা পড়েছে এখন। যদিও পূর্বনির্ধারিত সব রীতি রেওয়াজ মেনে হয় ধেনুয়া গ্রামের একদিনের দুর্গাপুজো। স্থানীয় বাসিন্দাদের এই পুজোকে কেন্দ্র করে উৎসাহ থাকে তুঙ্গে। পাশাপাশি, দূরদূরান্ত থেকে এই পুজো দেখতে ছুটে আসেন অনেকে। বাইরের মানুষের কাছে মহালয়ার এই দুর্গাপুজো বোনাস হলেও, স্থানীয়দের কাছে দেবীর দ্রুত গমন কিছুট মনখারাপের সাক্ষী হয়েই থাকে। দেবীর একদিন পরেই কৈলাস প্রস্থানের জন্য, মনঃকষ্টে ভোগেন গ্রামের মানুষ। পুজোর দিনে আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠেন সকলে। তবে, দেবীপক্ষের সূচনার দিনে দেবীর প্রস্থান কাঁদিয়ে যায় ধেনুয়া গ্রামের মানুষকে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours