Muslims: গাঁজা খেয়ে খুন, তাই কি হত্যার ইংরেজি ‘অ্যাসেসিনেশন’?...
‘অ্যাসেসিনেশন’ শব্দটা এসেছে মুসলমান গাঁজা সেবনকারীদের থেকে? প্রতীকী ছবি।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ‘অ্যাসেসিনেশন’ (Assassination)। ছোট্ট এই শব্দটি নিয়েই বর্তমানে চলছে চুলচেরা (Muslims) বিশ্লেষণ। শব্দটির অর্থ ‘হত্যা’। ১৩ জুলাই পেনসিলভানিয়ার বাটলারে একটি জনসভায় যোগ দেওয়ার সময় হত্যার চেষ্টা করা হয় প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট তথা রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। তার পর থেকেই ‘অ্যাসেসিনেশন’ শব্দটি নিয়ে চলছে জোর চর্চা।
গোটা বিশ্বের ইতিহাসে যুদ্ধ এবং স্পাইক্র্যাফ্টের ক্ষেত্রে ‘অ্যাসেসিনেশন’ শব্দটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শব্দটি প্রায়ই ব্যবহৃত হয় প্রধান চরিত্রগুলোকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য। প্রতিপক্ষ যাতে সব সময় অস্থিতিশীল থাকে, সেজন্যও এই শব্দ ব্যবহার করা হয়। ইতিহাসে বহু সফল অ্যাসেসিনেশনের ঘটনা ঘটেছে। এই তালিকায় যেমন রয়েছেন জুলিয়াস সিজার (৪৪ বিসিই), তেমনি রয়েছেন ৩৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডিও। এই তালিকায়ই চলে এসেছেন ট্রাম্প। ট্রাম্পকে অবশ্য হত্যা করতে পারেনি দুষ্কৃতী। হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। তার পর থেকেই ব্যাপক চর্চায় চলে এসেছে ‘অ্যাসেসিনেশন’ শব্দটি।
ঘাতকরা প্রাচ্য এবং প্রতীচ্য দুই অঞ্চলের ইতিহাসেই দীর্ঘস্থায়ী একটা ছাপ রেখে গিয়েছে। ‘অ্যাসেসিনেশন’ (Assassination) শব্দটি বয়ে বেড়াচ্ছে অন্ধকারের গর্ভ হতে তার জন্মানোর পরিচয়। এটি ইচ্ছাকৃত ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত হত্যার রীতিকে বোঝায়। যারা হত্যা করে, সেই ঘাতকদের গল্পটা ভয়ের স্থায়ী শক্তির স্মারক হয়ে দাঁড়ায়। সেই কারণেই মানুষ জানতে চায় ঘাতকদের সম্পর্কে। জানতে চায়, কীভাবেই বা তারা খুনটা করেছিল, খুন করতে গিয়ে তারা গঞ্জিকা সেবন করেছিল কিনা।
আরও পড়ুন: হিন্দু সহপাঠীকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা, লন্ডনের স্কুলে বহিষ্কৃত ৩ পড়ুয়া
এই ‘অ্যাসেসিনেশন’ শব্দটির একটি আকর্ষণীয় (Muslims) এবং অশুভ উৎস রয়েছে। এটি নিহিত ছিল একটি মধ্যযুগীয় শিয়া মুসলমান সম্প্রদায়ের ইতিহাসে। এই সম্প্রদায়টি ঘাতক হিসেবে পরিচিত। মুসলমানদের এই গোষ্ঠীটিকে বলা হয় ‘নিজারি ইসমাইলিস’। একাদশ শতাব্দীর শেষাশেষি জনৈক হাসান-ই সাব্বাহের নেতৃত্বে পারস্য ও সিরিয়ার পার্বত্য অঞ্চলে আবির্ভুত হয়েছিল এই গোষ্ঠী। বলা হয়, একাধিক মুসলমান সম্প্রদায় ভেঙে তৈরি হয়েছিল শিয়া ইসমাইলিসের। অষ্টম শতাব্দীর ষষ্ঠ ইমাম জাফর আল সিদ্দিকির বড় ছেলে ইসমাইলের প্রতি আনুগত্য দেখাতেই একাদশ শতাব্দীতে জন্ম হয়েছিল মুসলমানদের এই গোষ্ঠীটির।
এদিকে, গোঁড়া শিয়ারা সপ্তম ইমাম হিসেবে মেনে নিয়েছিল ইসমাইলের ভাই মুসা আল কাজিমকে। তখন ইসমাইলিদের সমর্থন জুগিয়েছিলেন মুহাম্মদ আল মাহদি। এই ইসমাইলিরা বিশ্বাস করত, মাহদি আসবেন এবং শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন। ইসমাইলিদের এই জগৎ একেবারেই আলাদা গোঁড়া শিয়া এবং আলাদা বাগদাদ ভিত্তিক আব্বাসীয় খিলাফতের থেকে। একাদশ শতকে রাজবংশ সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ইসমাইলি সম্প্রদায় দুটি দলে বিভক্ত হয়ে যায়। এর পরেই আবু মঞ্জুর নিজারের সমর্থকরা (Assassination) নিজারি ইসমাইলিস নামে পরিচিত হয়। এরাই অতঃপর হত্যাকারীতে পরিণত হয়।
১১৩০ থেকে ১১৫১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সম্প্রদায়টি প্রসার লাভ করে। এরা প্রথমে বিভিন্ন পাহাড়ের চূড়ার দুর্গগুলির কয়েকটির দখল নেয়। পরে উত্তর সিরিয়ায় তারা বেশ শক্তিশালী একটি ঘাঁটি গড়ে তোলে। এর মধ্যে জাবাল আনসারিয়া অঞ্চলে এদের সংগঠন বেশ মজবুত ছিল। এই আনসারিয়া ছিল সিরিয়ার ক্রুসেডার রাষ্ট্রগুলির সীমান্ত এলাকা। সিরিয়ার ওরন্টেস উপত্যকার দুর্গযুক্ত শহর মাসয়াফকে নিজারি ইসমাইলিরা দখল করেছিল ১১৪১ খ্রিস্টাব্দে। এই শহরই হয়ে উঠেছিল, নিজারি ইসমাইলিদের রাজধানী। মুসলমানদের হাত থেকে এডেসার নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করতে হয় দ্বিতীয় ক্রুসেড। এই ক্রুসেড ব্যর্থ হয়।
নিজারি ইসমাইলিরা (যারা হাসান-ই সাব্বাহের অনুগামী হিসেবেও পরিচিত) কখনও কখনও তাদের পৃথক অস্তিত্ব বজায় রাখতে ক্রুসেডার রাষ্ট্রগুলিকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিত। আবার এই হাসাশিনরা কখনও কখনও সুন্নি মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ক্রুসেডারদের সমর্থনও করেছিল। এই হাসাশিন থেকেই এসেছে ‘অ্যাসেসিনেশন’ শব্দটি। ‘হাসাশিন’ নামটি হাসান-ই সাব্বাহের অনুগামীদের দেওয়া। এঁর অনুগামীদের হাসাশিন আখ্যা দেওয়া হত। কারণ কাউকে হত্যা করার আগে তারা সেবন করত গঞ্জিকা অর্থাৎ গাঁজা। হাসাশিন আরবি শব্দ। এর অর্থ হল, যে হাসিস বা গাঁজা খায়। কালক্রমে বিবর্তিত হতে হতে এই শব্দটিই প্রথমে ল্যাটিন ভাষায় হত্যাকারী এবং পরে ইউরোপীয় ভাষায়ও হত্যাকারীতে রূপান্তরিত হয়। যা থেকে আধুনিক ‘অ্যাসেসিনেশন’ শব্দের জন্ম বলে অনুমান ভাষাতত্ত্ববিদদের। বর্তমানে ‘অ্যাসেসিনেশন’ শব্দের অর্থ ইচ্ছাকৃতভাবে একজন বিশিষ্ট বা গুরুত্বপূর্ণ (সাধারণত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব) ব্যক্তিকে (Muslims) হত্যা করা বোঝায় (Assassination)।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।