এই দিন থেকে শুরু হয় আরএসএসের গুরুদক্ষিণা দিবস...
প্রতীকী ছবি
অরুণ আনন্দ
আজ গুরুপূর্ণিমা (Guru Purnima)। গুরুর প্রতি শিষ্যের (Disciple) শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের দিন। দিনটি ব্যাসদেবের জন্মদিনও। মহর্ষি ব্যাস চতুর্বেদ সম্পাদনা ছাড়াও রচনা করেছিলেন ১৮টি পুরাণ। তাই দিনটি ব্যাস পূর্ণিমা নামেও খ্যাত। শ্রদ্ধার সঙ্গে দিনটি পালন করে আরএসএসও (RSS)। এই দিন থেকে শুরু হয় আরএসএসের গুরুদক্ষিণা (Gurudakshina) দিবস।
তবে আরএসএসের কাছে গুরুদক্ষিণা দিবস কোনও একটি দিন নয়। প্রায় একমাস ধরে চলতে থাকে অনুশীলন। গোটা দেশে আরএসএসের ৬০ হাজার শাখায় পালিত হয় গুরুদক্ষিণার অনুষ্ঠান। ফি বছর আরএসএস ছটি অনুষ্ঠান পালন করে। তারই একটি হল গুরুপূজা। বাকি পাঁচটি হল বিজয়াদশমী, মকর সংক্রান্তি, বর্ষা প্রতিপদ, হিন্দু সম্রাজ্য দিবস এবং রাখিবন্ধন। গুরুপূর্ণিমার দিনেই শুরু হয় আরএসএসের গুরুদক্ষিণা কর্মসূচির। কর্মসূচি পালিত হয় প্রায় এক মাস ধরে। মূলত দুটি কারণে পালিত হয় এই কর্মসূচি। একটি কারণ হল, ভারতীয় সংস্কৃতি মেনে গুরু-শিষ্যের চিরন্তন সম্পর্ক বজায় রাখা। আর দ্বিতীয় কারণ হল, নিজস্ব সম্পদে বলীয়ান হয়ে ওঠা, যাতে কখনওই অন্য কারও ওপর নির্ভর করতে না হয়।
সুপ্রাচীন কালে ব্রহ্মচর্যাশ্রম পর্বে গুরুগৃহে থেকে শিক্ষালাভ করতেন শিষ্যরা। শিক্ষাপর্ব শেষ হলে দিতে হত গুরুদক্ষিণা। গুরুর প্রতি শিষ্য যে কৃতজ্ঞ, তার প্রকাশক এই গুরুদক্ষিণা। অতীতের সেই পরাম্পরা মেনে আজও গুরুদক্ষিণার অনুষ্ঠান উদযাপন করে আরএসএস। একটি হলঘরে পালিত হয় অনুষ্ঠানটি। সচরাচর সকালেই হয় অনুষ্ঠান। এদিন সবাই সাদা পোশাক পরে যোগ দেন অনুষ্ঠানে। ভারতীয় ঐতিহ্য মেনে স্বয়ংসেবকরা পরে ধুতি কুর্তা কিংবা কুর্তা পাজামা। ওই হলঘরেই তোলা হয় আরএসএসের গেরুয়া পতাকা। জ্বালানো হয় মাটির প্রদীপ, ধূপ। আরএসএসের প্রতিষ্ঠাতা কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার এবং দ্বিতীয় সরসংঘচালক মাধব সদাশিবরাও গোলওয়ালকর। আরএসএসের মধ্যে গুরুজি নামে পরিচিত এই গোলওয়ালকর।
আরও পড়ুন : ২০২৪ সালের মধ্যে ১ লক্ষ শাখা ! শতবর্ষ উদযাপনের আগে পরিকল্পনা আরএসএস-এর
গুরুদক্ষিণা অনুষ্ঠানের শুরুতে গুরুর উদ্দেশে নিবেদিত কয়েকটি সংস্কৃত শ্লোক উচ্চারিত হয় সমবেত কণ্ঠে। এর পরেই স্বয়ংসেবকরা গান দেশপ্রেমের গান। তার পরে এক একজন গিয়ে গৈরিক নিশানের পদপ্রান্তে অর্পণ করে পুষ্পার্ঘ্য। প্রণাম জানিয়ে ফিরে যান নিজের জায়গায়।পরে সাদা খামে মোড়া দক্ষিণা দান করেন স্বয়ংসেবকরা। যেহেতু দান মোড়া থাকে খামে, তাই কেউই জানেন না, ঠিক কত দক্ষিণা কে দিলেন। খাম রেখে আরও একবার প্রণাম সেরে ফের ফিরে যান নিজের জায়গায়।
কেবল স্বয়ংসেবকরা নন, গুরুদক্ষিণার অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। অধ্যাপক, চিকিৎসক, সশস্ত্র বাহিনীর কোনও প্রাক্তন আধিকারিক কিংবা সমাজের কোনও গণ্যমান্য ব্যক্তি।এভাবেই ধীরে ধীরে সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা যুক্ত হয়ে পড়েন আরএসএসের সঙ্গে। সব শেষে হয় আরএসএসের প্রার্থনা। অনুষ্ঠান পর্ব শেষ হলে পরে খাম খুলে হিসেব নিকেশ করা হয় গুরুদক্ষিণা বাবদ প্রাপ্য অর্থ।
আরও পড়ুন : উদয়পুরের মতো নৃশংস ঘটনার প্রতিবাদ করা উচিত মুসলিমদেরও, জানাল আরএসএস
আরএসএসের কাছে গুরুদক্ষিণার তাৎপর্য অনেক। এর মধ্যে গুরু-শিষ্যের চিরন্তন সম্পর্কের পরম্পরা বজায় রাখাও যেমন একটি, তেমনি শিষ্যদের থেকে সংগ্রহ করা হয় সংঘ চালনার অর্থ। সংঘে গৈরিক পতাকা চির উড্ডীন রাখতে যা প্রয়োজন। সর্বোপরি, সংঘের পতাকা যে সবার ওপরে, এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাও বুঝিয়ে দেওয়া হয় সংঘ-সদস্যদের।
শুধু তাই নয়, গুরুদক্ষিণা দিবস পালনের আরও একটা মহতী উদ্দেশ্য রয়েছে। সেটি হল যেসব স্বয়ংসেবক সংঘে নিয়মিত নন, তাঁদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগও হয় গুরুদক্ষিণা দিবস পালনের মাধ্যমে। বছরে অন্তত এই সময়টায় তাঁরা সংঘের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
সংঘে এই গুরুদক্ষিণা কর্মসূচি পালনের আরও একটি উদ্দেশ্য হল সততার পাঠ দেওয়া। স্বয়ংসেবকরা গুরুদক্ষিণা হিসেবে যে অর্থ দান করেন, সেই অর্থের কানাকড়িও এদিক ওদিক হয় না। কোনও স্বয়ংসেবক কী পরিমাণ অর্থ দান করেন, তা দিয়ে তাঁদের যোগ্যতাও মাপা হয় না।
ফি বার গুরুদক্ষিণা কর্মসূচি পালনের পর মুখ্যশিক্ষক দক্ষিণা বাবদ কত দান সংগৃহীত হল, তার হিসেব কষেন। যাঁরা দান দিয়েছেন, তাঁদের নাম এবং দানের অর্থের পরিমাণ সবই লিখে রাখা হয়। পরে সেই তুলে দেওয়া হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হাতে। সংগৃহীত অর্থ আরএসএসের বিভিন্ন কাজে লাগানো হয়। গুরুদক্ষিণা বাবদ যে অর্থ আয় হয়, তার কানাকড়িও কেউ নেন না। তাই দুর্নীতির কোনও কথাও কশ্মিনকালেও ওঠেনি আরএসএসের ইতিহাসে। আরএসএস স্বয়ংসেবকদের চরিত্র গঠনের ওপর জোর দেয় নিরন্তর। তার জেরেই স্বয়ংসেবকরা উন্নত চরিত্রের হন। আরএসএসের কট্টর সমালোচকরাও সংঘের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলতে পারেনি কোনওদিন।
আরএসএসে গুরুদক্ষিণা পালিত হয় বছরে একবার। এক পক্ষকাল কিংবা এক মাসের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। এই পুরো পর্ব জুড়ে হয় গুরুদক্ষিণার অনুষ্ঠান পালন। আরএসএসের জন্মলগ্ন থেকে এই পরম্পরায় ছেদ পড়েনি। শুধু তাই নয়, এই অনুষ্ঠান আরএসএসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম পবিত্র অনুষ্ঠানও। তাই আরএসএস গুরুদক্ষিণার অনুষ্ঠানটি পালন করে মর্যাদার সঙ্গে।
(তথ্য সৌজন্য- ফার্স্টপোস্ট ডট কম)