তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
ঘুমন্ত অবস্থায় বিছানা ভিজে যায়! শৌচালয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হয় বার বার। এমনকী বাইরে বেশিক্ষণ থাকলেই অসুবিধা হয়। কারণ, বেশিক্ষণ মূত্রত্যাগ করতে না পারলেই সমস্যা হয়। আর এই সব সমস্যার জেরে স্বাভাবিক জীবন যাপন অনেকটাই ব্যাহত হয়। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ওভার অ্যাক্টিভ ব্লাডারের সমস্যা (Bladder Problem) অনেকেই লুকিয়ে রাখেন। যার জেরে স্বাভাবিক জীবন যাপনে সমস্যা হয়। তেমনি আবার আত্মবিশ্বাস কমতে থাকে। তাই তৈরি হয় জড়তা।
ওভার অ্যাক্টিভ ব্লাডার সমস্যা কী?
স্নায়ু্র সমস্যার জন্য মূত্রনালির সক্রিয়তা বেড়ে যায়। যার জেরে বার বার বাথরুমে যেতে হয়। অনেক সময়ই মূত্রত্যাগ হয়ে যায়। আর এই সমস্যাকেই চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয়, ওভার অ্যাক্টিভ ব্লাডার সিনড্রম (Bladder Problem)।
এই সমস্যায় ভোগান্তি কতখানি?
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ওভার অ্যাক্টিভ ব্লাডার সিনড্রম-এর (Bladder Problem) জেরে স্বাভাবিক জীবন যাপন মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এক আন্তর্জাতিক সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, একজন মানুষের ওভার অ্যাক্টিভ ব্লাডার সিনড্রম থাকলে ১৬.৫ শতাংশ স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হয়। ৪০ বছরের বেশি মহিলা ও পুরুষদের মধ্যেই এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। প্রতি ৬ জনের মধ্যে একজন ভারতীয় ওভার অ্যাক্টিভ ব্লাডার সিনড্রমে ভোগেন। তবে, চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, শুধুমাত্র প্রৌঢ় বয়সেই এই সমস্যা দেখা যায়, এমন নয়। অনেক ক্ষেত্রে বিশেষত মহিলাদের প্রসব পরবর্তী সময়ে এই ওভার অ্যাক্টিভ ব্লাডার সিনড্রম দেখা দেয়।
ওভার অ্যাক্টিভ ব্লাডার সিনড্রমের উপসর্গ কী?
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ওভার অ্যাক্টিভ ব্লাডার সিনড্রমের (Bladder Problem) সব চেয়ে বড় উপসর্গ হল, বার বার মূত্রত্যাগ করা। শৌচালয়ে বার বার যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা। ইউরিন নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা। আবার অনেক সময় মূত্রত্যাগ না হলেও তার অনুভব হয়। এছাড়াও অনেক সময়েই মূত্রনালিতে এক ধরনের যন্ত্রণা অনুভব হয়, যা ওভার অ্যাক্টিভ ব্লাডার সিনড্রমের লক্ষণ বলেই জানাচ্ছে বিশেষজ্ঞ মহল।
সমাধানের উপায় কী?
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোগীরা আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। অস্বস্তি এড়াতে বাইরে যেতে চান না। যার ফলে, তাঁদের জড়তা বেড়ে যায়। মানসিক অবসাদ তৈরি হয়। কিন্তু চিকিৎসকদের পরামর্শ, ঘরবন্দি থেকে এই সমস্যা এড়ানো যাবে না। বরং জীবন যাপনে পরিবর্তন বদলে দিতে পারে পরিস্থিতি।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, ওভার অ্যাক্টিভ ব্লাডার সিনড্রমের (Bladder Problem) উপসর্গ দেখা দিলেই তা চিকিৎসককে জানানো দরকার। এই রোগের চিকিৎসা সম্ভব। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়া সম্ভব। কিন্তু অধিকাংশ সময়েই এই রোগ গোপন করা হয়। বিশেষত মহিলাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। ফলে, ভোগান্তি বাড়ে।
চিকিৎসকদের পরামর্শ, ওভার অ্যাক্টিভ ব্লাডার কমাতে ওজন কমানো জরুরি। স্থূলতার সমস্যা থাকলে মূত্রনালির উপরে চাপ বেশি পড়ে। ফলে, তার সক্রিয়তা বেড়ে যায়। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার।
এছাড়া কফি ও অ্যালকোহল এই দুই পানীয়ের ক্ষেত্রেও নিয়ন্ত্রণ জরুরি বলেই জানাচ্ছে চিকিৎসক মহল। কারণ এগুলি মূত্রনালির সক্রিয়তা বাড়িয়ে তোলে।
নির্দিষ্ট কিছু যোগাভ্যাস রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সেগুলো নিয়ম করে করলে পেশি শক্তি ফিরে আসে। স্নায়ু সচল থাকে। ফলে, ওভার অ্যাক্টিভ ব্লাডার নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
এছাড়াও রয়েছে ব্লাডার ট্রেনিং। অর্থাৎ, প্রতি আধ ঘণ্টা অন্তর শৌচাগারে যেতে হবে। ধীরে ধীরে শৌচালয়ে যাওয়ার সময়ের ব্যবধান বাড়ানো হবে। এই প্রক্রিয়ায় ব্লাডার সক্রিয়তা কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
নিয়মিত বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মতো চললে স্বাভাবিক জীবন ফিরে যাওয়া সম্ভব বলেই তাঁরা জানাচ্ছেন।
DISCLAIMER: এই প্রতিবেদনটি বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী লেখা। এর সঙ্গে মাধ্যম-এর কোনও সম্পর্ক নেই। মাধ্যম এর কোনও দায় নিচ্ছে না। এখানে বলা যে কোনও উপদেশ পালন করার আগে অবশ্যই কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours