PFI in West Bengal: পশ্চিমবঙ্গে ১৭টি শাখা খুলে অতিসক্রিয় হয়ে উঠেছে পিএফআই, যোগ মাওবাদীদের সঙ্গেও

এনআইএ-র তদন্তে অন্তত চারটি জঙ্গি হানার পিছনে পিএফআইয়ের প্রত্যক্ষ যোগ পাওয়া গিয়েছে। তাতে বাদ যায়নি পশ্চিমবঙ্গও। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি পশ্চিমবঙ্গে পিএফআইয়ের সক্রিয়তা দেখেও চমকে উঠেছে।
PFI-WEST-BENGAL
PFI-WEST-BENGAL

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: গতকাল সারা দেশজুড়ে পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়ার (Popular Front of India) বিভিন্ন দফতরে তল্লাশি চালিয়েছে এনআইএ (NIA), ইডি (ED), কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এবং রাজ্য পুলিশ (West Bengal Police)। সূত্রের খবর, প্রায় শতাধিক পিএফআই (PFI) নেতা-কর্মীকে নির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। আটক হয়েছে দেড়শোর বেশি ফোন, কম্পিউটার অন্যান্য নথি। মূলত দেশজুড়ে উগ্রপন্থা ছড়ানো এবং জঙ্গি কার্যকলাপে (Terror activities) আর্থিক মদতের অভিযোগে পিএফআইয়ের উপর দেশজুড়ে তল্লাশি চলেছে। এনআইএ-র তদন্তে অন্তত চারটি জঙ্গি হানার পিছনে পিএফআইয়ের প্রত্যক্ষ যোগ পাওয়া গিয়েছে। তাতে বাদ যায়নি পশ্চিমবঙ্গও। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি পশ্চিমবঙ্গে পিএফআইয়ের সক্রিয়তা দেখেও চমকে উঠেছে।

বিশেষ করে, গত ১০-১১ বছরে তৃণমূল সরকারের আমলে পশ্চিমবঙ্গের পাঁচ-ছয়টি জেলায় ব্যাপকহারে বেড়েছে পিএফআইয়ের সক্রিয়তা। খোদ কলকাতার বুকেও ট্রেনিং ক্যাম্প করে ক্যাডার নিয়োগ করেছে তারা। তদন্তকারী সংস্থার দাবি, কেরল-কর্নাটক থেকে শুরু হওয়া এই সংগঠন বাংলায় প্রথমে মুর্শিদাবাদে কাজ শুরু করে। ক্রমেই অনুকূল পরিস্থিতি পেয়ে এখন দুই ২৪ পরগনা, মালদহ,নদিয়া, বীরভূম, হাওড়া, কলকাতা এবং উত্তর দিনাজপুরে সব মিলিয়ে কয়েক হাজার ক্যাডার নিয়োগ করেছে তারা। বেশ কিছু হোলটাইমারও পিএফআইয়ের সংগঠন বাড়াতে দিন-রাত কাজ করছে বলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের দাবি।

আরও পড়ুন: জঙ্গি-যোগ! পিএফআই কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার আর্জি দেশজুড়ে, তল্লাশি চালিয়ে কী পেল এনআইএ?

জানা গিয়েছে, ২০০৯ সালে মুর্শিদাবাদে প্রথম পিএফআই কাজ শুরু করে। কলকাতার তপসিয়া এলাকায় রাজ্য দফতর তৈরি হলেও সংগঠনের অধিকাংশ নেতা মুর্শিদাবাদ-মালদহ জেলার। এ রাজ্যে পিএফআইয়ের সভাপতি হলেন হাসিবুল ইসলাম। গত পাঁচ-ছয় বছর পিএফআই কিছুটা অন্তরালে থেকেই কাজ করত। কিন্তু সিএএ-র (CAA) বিষয়টি সামনে আসার পর এ রাজ্যেও পিএফআই প্রকাশ্যে এসে কার্যকলাপ শুরু করে। ২০১৯ এর ৯ নভেম্বর রামমন্দির (Ram Mandir) সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) রায় আসার পর মুর্শিদাবাদে ১৩ নভেম্বর কয়েকশো ক্যাডার নিয়ে প্রতিবাদ মিছিল করে পিএফআই। ইদানীং কলকাতার পার্ক সার্কাস এলাকা, মালদহ, মুর্শিদাবাদ এবং বীরভূমের উত্তরাংশে প্রচার পুস্তিকা এবং লিফলেটও ছড়াচ্ছে তারা।

কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির দাবি, সাংগঠনিক ভাবে পূর্ণিয়া জোনের অধীনে পিএফআইয়ের মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলা পড়ছে। তার মধ্যে পিএফআইয়ের জঙ্গিপুর ডিভিশনের সুতি, সামশেরগঞ্জ, লালগোলা, রঘুনাথগঞ্জ, সাগরদিঘি, বহরমপুর ডিভিশনে ডোমকল, ইসলামপুর, দৌলতাবাদ, বেলডাঙায় শাখা তৈরি হয়েছে। পিএফআইয়ের বেঙ্গল জোনের অধীনে রয়েছে কলকাতা সংলগ্ন এলাকা এবং ওড়িশা। কলকাতা জেলার অধীনে দক্ষিণ ২৪ পরগনা ডিভিশনে মগরহাট ও উস্থিতে শাখা তৈরি হয়েছে পিএফআইয়ের। এছাড়া কলকাতা, হাওড়া, তেলেনিপাড়া, ঘুটিয়ারি শরিফ, সংগ্রামপুর, মল্লিকপুর, বারুইপুরেও পাকাপোক্ত শাখা তৈরি হয়েছে পিএফআইয়ের।

আরও পড়ুন: পরিকল্পনা করেই পিএফআই-এর বিরুদ্ধে অভিযান! দেশে জঙ্গি-কার্যকলাপ রুখতে সক্রিয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক

তদন্তকারী সংস্থার দাবি, কলকাতায় অফিস থাকলেও বহরমপুর থানার অন্তর্গত বাখুরি গ্রামে রয়েছে পিএফআইয়ের সদর দফতর। সেখান থেকে রাজ্যজুড়ে কাজের নিয়ন্ত্রণ হয়ে থাকে। কালিকট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর এক ব্যক্তি রাজ্যে পিএফআইয়ের ক্রমেই অন্যতম মাথা হয়ে উঠছে। এছাড়া রাজ্যে মাওবাদীদের শাখা সংগঠন হিসাবে পরিচিত বেশ কয়েকটি সংস্থার সঙ্গেও পিএফআই নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। যে ভাবে গত কয়েক বছরে ১৭টি শাখা খুলে পিএফআই বাংলায় তাদের ক্যাডার নিয়োগ এবং জাল বিস্তার করে চলেছে তাতে পরিস্থিতি ঘোরালো হতে পারে বলে জানাচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সিএএ বিরোধী আন্দোলনে বহরমপুরে যে দু-তিনটি স্টেশনে ট্রেন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেগুলিতে পিএফআই ক্যাডারদের সক্রিয় ভূমিকা ছিল। দুটি এলাকাতেই পিএফআইয়ের সাংগঠনিক শাখা তৈরি হয়েছে। একইভাবে সিএএ বিরোধী আন্দোলনে কলকাতার পার্ক সার্কাস এলাকা ঘাঁটি তৈরি হলেও নেপথ্যে ছিল পিএফআই। সেই কারণে গত কালের তল্লাশির পর বাংলা নিয়েও বিশেষ পদক্ষেপ করতে চলেছে এনআইএ, ইডি এবং কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি।   

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles