২০০ সদস্যকে নিয়ে ম্যানগ্রোভ অরণ্য রক্ষায় সামিল ‘ঝড়খালি সবুজ বাহিনী’
একেবারে বাঁদিকে ‘ঝড়খালি সবুজ বাহিনী’র নেতা আকুল বিশ্বাস (সংগৃহীত ছবি)
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্যকে (Sunderbans Mangrove Forests) বাঁচাতে ১৯ বছর ধরে উদ্যোগী আকুল বিশ্বাস। তিনি একজন অন্ধ মানুষ। ২০০৫ সাল থেকে রোপণ করেছেন ৫ লাখেরও বেশি ম্যানগ্রোভের চারা। গড়ে তুলেছেন ‘ঝড়খালি সবুজ বাহিনী’। যেখানে ২০০-রও বেশি মহিলা নিয়োজিত রয়েছেন ম্যানগ্রোভ অরণ্যকে বাঁচাতে। সারা পৃথিবীতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বিশ্ব উষ্ণায়নের সমস্যা। এরপরে ব্যাপকভাবে বনাঞ্চল নিকেশের কাজও পরিবেশের ভারসাম্যকে নষ্ট করছে। ঠিক এই আবহে সুন্দরবনের মানুষদের এমন পরিবেশ আন্দোলন সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। ‘ঝড়খালি সবুজ বাহিনী’র অন্যতম সদস্য কল্পনা সর্দারের মতে, ‘‘অক্টোবর থেকে জানুয়ারির মধ্যে চারা গাছ রোপন করা হয়। প্রতিটি সদস্য প্রায় দু'ঘণ্টা করে সময় দেন এবং ২০০ থেকে ২৫০টি চারা রোপন করা হয়।’’ কল্পনা সর্দার নিজেও ২০২১ সাল থেকে ‘ঝড়খালি সবুজ বাহিনী’র সদস্য। তিনি নিজের হাতে কয়েক হাজার ম্যানগ্রোভ চারা রোপন করেছেন বলে জানিয়েছেন।
‘ঝড়খালি সবুজ বাহিনী’ ২৩টি গ্রাম জুড়ে তাদের শাখা বিস্তার করেছে। সংস্থার প্রধান আকুল বিশ্বাসের মতে, ‘‘এমন বনাঞ্চল বৃদ্ধির কাজের ফলে বন্যা এবং ঘূর্ণিঝড় অনেকটাই প্রতিরোধ করতে পেরেছি আমরা।’’ প্রসঙ্গত, ম্যানগ্রোভ অরণ্য ঘূর্ণিঝড়ের সময় প্রাকৃতিক বাঁধ হিসেবে কাজ করে। নদীর বাঁধগুলিকে সুরক্ষিত রাখে (Sunderbans Mangrove Forests)। কারণ তাদের শিকড় একেবারে মাটির নিচে থাকে। ভূমিধসকে প্রতিরোধ করে।
প্রসঙ্গত, সুন্দরবনের এই অঞ্চলে বেশিরভাগ মানুষই তফশিলি সম্প্রদায়ের এবং তাঁরা ১৯৫৭ সাল থেকে এখানে উদ্বাস্তু হয়ে বসতি গড়েছেন। আকুল বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমাদের পূর্বপুরুষরা ১৯৫২ সালেই খুলনা থেকে ভিটেমাটি ছাড়া হয়েছিলেন এবং বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে ঘোরার পরে ১৯৫৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর বিধান চন্দ্র রায় আমাদের এখানে বসতি গড়তে দিয়েছিলেন।’’ প্রসঙ্গত, ম্যানগ্রোভ অরণ্যের চারা রোপনের এমন কাজ আকুল বিশ্বাসরা ২০০৫ সাল থেকেই করছেন অর্থাৎ ১৯ বছর ধরে তাদের এই কাজ চলছে। সে সময়ে কয়েকজন বাচ্চাকে নিয়ে বিদ্যাধরী নদীর ধারে তিনি এই কাজ শুরু করেন এরপরে ধাপে ধাপে তাঁর সংস্থার সদস্য সংখ্যা বাড়তে থাকে।
‘ঝড়খালি সবুজ বাহিনী’র প্রচেষ্টাতে ২০২১ সালে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস বিপর্যয় অনেকটাই হালকা হয়েছে। কারণ ম্যানগ্রোভ চারা রোপনের ফলে কোনও রকমের বাঁধ ভাঙেনি এবং উপকূলীয় গ্রাম প্লাবিত হয়নি স্থানীয় অঞ্চলটির। স্থানীয় এক গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রঞ্জন মন্ডল জানিয়েছেন, ‘ঝড়খালি সবুজ বাহিনী’র প্রচেষ্টায় ১০০ হেক্টর জায়গা জুড়ে ৫ লাখেরও বেশি ম্যানগ্রোভ চারা (Sunderbans Mangrove Forests) রোপন করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, সুন্দরবনের এই বনাঞ্চল পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের বিস্তৃত রয়েছে ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে। এর মধ্যে ভারতে রয়েছে ২,১০৭ বর্গ কিলোমিটার।
কলকাতা থেকে ১০৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সুন্দরবনে প্রবেশ খুব সহজে করা যায় না। যোগাযোগ ব্যবস্থা যথেষ্ট অনুন্নত। জানা গিয়েছে, সম্প্রতি ‘ঝড়খালি সবুজ বাহিনী’র সঙ্গে আয়ারল্যান্ডের একটি এনজিও ‘টাইগার উইডোস অর্গানাইজেশনে’র চুক্তি হয়েছে। এ নিয়ে আকুল বিশ্বাস জানিয়েছেন, তাঁরা যদি স্থানীয় মহিলাদের কিছু জীবিকার সহায়তা দিতে পারেন, তাহলে আরও বেশি পরিবেশ রক্ষার কাজ করতে মহিলারা উৎসাহিত হবেন এবং এর ফলে সুন্দরবনও বাঁচবে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।