মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: সাড়ে চার মাসের অপেক্ষার অবসান। দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালানোর পর অবশেষে নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডের (Recruitment Scam) অন্যতম অভিযুক্ত ‘কালীঘাটের কাকু’-র (Kalighater Kaku) ভয়েস স্যাম্পল হাতে পেল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। কতটা তাৎপর্যপূর্ণ এই ঘটনা? তদন্তেই বা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে এই কণ্ঠস্বর নমুনা?
অগাস্ট থেকে এসএসকেএমেই ঠিকানা ‘কাকু’র
নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডের (Recruitment Scam) স্বার্থে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’-র কণ্ঠস্বর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। সেটা গত বছরের অগাস্ট মাস। সেই মাসেই একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়। তার পর ২২ অগাস্ট থেকে ‘কালীঘাটের কাকু’-র ঠিকানা হয়ে যায় এসএসকেএম হাসপাতাল। কখনও তাঁর ঠাঁই হয় হাসপাতালের আইসিসিইউ বেডে তো কখনও কার্ডিওলজি বিভাগে। সেই থেকে প্রায় সাড়ে চার মাস ওই বিভাগের একটি শয্যা দখল করে রয়েছেন ‘কালীঘাটের কাকু’ (Kalighater Kaku)।
‘কাকু’-র কণ্ঠ পেতে মরিয়া ছিল ইডি
সুজয়কৃষ্ণর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল ইডি। তদন্তকারীরা জানতেন, তদন্তের স্বার্থে এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু, গ্রেফতারের পর দীর্ঘ চার মাসেরও বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করতে হয়েছে ইডি-কে। আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও এতদিন তাঁর কণ্ঠস্বরের নমুনা এতদিন সংগ্রহ করতে পারেনি ইডি৷ কারণ, শারীরিক অসুস্থতা দেখিয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ‘কাকু’ (Kalighater Kaku)। বার বার এসএসকেএমে গিয়েও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে ইডিকে। এমনকী, ডিসেম্বরের শুরুতে জোকা থেকে অ্যাম্বুল্যান্স গিয়েও ফিরে এসেছিল।
আরও পড়ুন: মধ্যরাতে মুখ খুললেন ‘কালীঘাটের কাকু’, কণ্ঠস্বরের নমুনা হাতে পেল ইডি
‘কাকু’কে আড়াল করছে এসএসকেএম!
এই প্রেক্ষিতে, ফের আদালতের দ্বারস্থ হয় তদন্তকারী সংস্থা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিল কেন্দ্রীয় সংস্থা। তাদের দাবি ছিল, ‘কাকু’-কে আড়াল করছে এসএসকেএম। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অভিযোগ ছিল, সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের শারীরিক অবস্থার দোহাই দিয়ে বার বার কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহে বাধা সৃষ্টি করছিল এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ৷ ইচ্ছে করেই তাঁর স্বরের নমুনা সংগ্রহ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এর পরই হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, ইএসআই হাসপাতালে ‘কাকু’কে নিয়ে গিয়ে শারীরিক পরীক্ষা করা হোক। ২ জানুয়ারি কণ্ঠস্বরের নমুনার উপর ফের জোর দেয় আদালত। ফলস্বরূপ, বুধবার মধ্যরাতে জোকা ইএসআই হাসপাতালে হয় ‘কাকু’র (Kalighater Kaku) কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ। যা তদন্তের (Recruitment Scam) গতিপ্রকৃতি স্থির করতে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
১০০ শতাংশ বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়া
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভয়েস স্যাম্পেল টেস্ট ভীষণই বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়া। তাঁরা জানান, ডিএনএ স্যাম্পেলিং, রেটিনাল ম্যাপিং কিংবা ফিঙ্গারপ্রিন্ট অ্যানালিসিস-এর মতোই শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া হিসেবে ১০০ শতাংশ বিজ্ঞানসম্মত এই ভয়েস স্যাম্পেল টেস্ট। সূত্রের খবর, এবার সুজয়কৃষ্ণর এই কণ্ঠস্বরের নমুনা ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠাবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা৷ যার ফলাফলের উপর নিয়োগ দুর্নীতি তদন্তের (Recruitment Scam) ভবিষ্যৎ অনেকটাই নির্ভর করছে বলে ওয়াকিবহল মহলের মত৷ তদন্তকারীদের ধারণা, সেখান থেকেই অনেক রহস্যের উন্মোচন হবে (Kalighater Kaku)।
কথোপকথন পরীক্ষা করা হবে...
ইডি সূত্রর দাবি, নিয়োগ মামলার তদন্তে (Recruitment Scam) এই পরীক্ষা অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলে বিশ্বাস। গোয়েন্দাদের মতে, এই নমুনা তদন্তের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। ইডি সূত্রের দাবি, তদন্ত করতে গিয়ে যেদিন সুজয়কৃ্ষ্ণর বাড়িতে হানা দিয়েছিল ইডি, সেদিনই বিষ্ণুপুর থানায় কর্মরত ‘কাকু’-র ঘনিষ্ঠ রাহুল বেরা নামে এক সিভিক ভলান্টিয়ারের বাড়িতেও পৌঁছেছিল তদন্তকারী দল। ওই সিভিক ভলান্টিয়ারের ফোন বাজেয়াপ্ত করেছিল ইডি। সেখান থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদ্ধার করেন তদন্তকারীরা। তার মধ্য়ে ছিল একটি কথোপকথন। ইডির দাবি, অডিও ক্লিপিংয়ে শোনা যাচ্ছে, রাহুলকে বলা হচ্ছে, মোবাইলে থাকা নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য মুছে ফেলো। ইডি-র দাবি, বক্তা আর কেউ নন, ‘কালীঘাটের কাকু’ (Kalighater Kaku) ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। সেই জন্যই এই কণ্ঠস্বর পাওয়া এত জরুরি ছিল ইডি-র কাছে, চ্যালেঞ্জও।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours