ISRO Moon Mission: একটা বড় লাফ! তাতেই পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণকে চিরতরে বিদায় জানিয়ে চাঁদের দিকে এগিয়ে যাবে ‘চন্দ্রযান ৩’
চন্দ্রযান ৩-এর যাত্রাপথ (ছবি-প্রতীকী)
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ভারতের চন্দ্র মিশনে (ISRO Moon Mission) আজ একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন। আজ মধ্যরাতে ঘটতে চলছে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। সব ঠিকঠাক চললে, আজ রাত থেকে চাঁদের দিকে সরাসরি এগিয়ে যাবে ‘চন্দ্রযান ৩’ (Chandrayaan 3)।
গত ১৪ জুলাই শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে এলভিএম-৩ রকেটে চেপে মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিল ‘চন্দ্রযান ৩’ মডিউল (ISRO Moon Mission)। সেই থেকে টানা ১৮ দিন পৃথিবীর চারপাশে ঘুরে চলেছে এই মহাকাশযান। অর্থাৎ, এখনও পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির ঘেরাটোপেই রয়েছে ‘চন্দ্রযান ৩’। তবে, ঘোরার ফাঁকে নিজের গতিও বাড়িয়ে চলেছে। এখনও পর্যন্ত পৃথিবীর চারপাশে প্রদক্ষিণ করতে করতে নিজের কক্ষপথ পাঁচবার বাড়িয়ে নিয়েছে ‘চন্দ্রযান ৩’। এই প্রক্রিয়া, বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে বলা হচ্ছে অরবিট রেইজিং ম্যানুভার, তার মাধ্যমে কক্ষপথের সঙ্গে সঙ্গে গতি বাড়িয়ে নিয়েছে ‘চন্দ্রযান ৩’ (Chandrayaan 3)। বর্তমানে পৃথিবীকে শেষবার প্রদক্ষিণ করছে মহাকাশযানটি। যাকে বলা হচ্ছে ফাইনাল আর্থ-বাউন্ড ম্যানুভার। এখন সেটি রয়েছে পৃথিবী থেকে ১ লক্ষ ২৭ হাজার ৬০৯ কিলোমিটার (অ্যাপোজি বা পৃথিবী থেকে দূরে) x ২৩৬ কিলোমিটার (পেরিজি বা পৃথিবী থেকে নিকট) পরিধির ডিম্বাকৃতি কক্ষপথে।
আজ রাতে ইসরোর মিশন কন্ট্রোল থেকে ‘চন্দ্রযান ৩’ মডিউলে থাকা রকেটে সীমিত সময়ের জন্য ফায়ারিং বা চালু করা হবে। এর ফলে, ফের একবার কক্ষপথ পরিবর্তন করবে ‘চন্দ্রযান ৩’। তবে তফাতের মধ্যে, এবার আর পৃথিবীর কক্ষপথে সীমাবদ্ধ থাকবে না ‘চন্দ্রযান ৩’ (Chandrayaan 3)। আজকের এই বিশেষ প্রক্রিয়ার ফলে, ‘চন্দ্রযান ৩’ সোজা এক লাফে প্রতিস্থাপিত হবে চাঁদের কক্ষপথের রাস্তায়। বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে বলা হচ্ছে ‘লুনার ট্রান্সফার ট্যাজেক্টরি’। ইসরো সূত্রে খবর, এই বিশেষ প্রক্রিয়াটি হতে চলেছে রাত ১২টা থেকে রাত দেড়টার মধ্যে।
এটা সকলেই জানেন যে, নিজের কক্ষপথে সূর্যের চারপাশে প্রদক্ষিণ করে চলেছে পৃথিবী। এই কক্ষপথকে বলা হয় আর্থ অরবিট। ঠিক একইভাবে, চাঁদও পৃথিবীর চারদিকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে। আর চাঁদ সেই প্রদক্ষিণ করে চলে তার নিজস্ব কক্ষপথ ধরেই। যাকে বলা হয় লুনার অরবিট। আবার চাঁদ একইধারে পৃথিবীর সঙ্গেই সূর্যের চারপাশেও প্রদক্ষিণ করছে। ইসরো কর্তাদের মতে, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। কারণ, আজ ‘চন্দ্রযান ৩’-কে এক কথায় নিক্ষেপ করা হবে বা ঠেলে দেওয়া হবে চাঁদের রাস্তায়। বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই প্রক্রিয়াকে বলা হচ্ছে ‘ট্রান্সলুনার ইঞ্জেকশন’।
আজকের বিশেষ প্রক্রিয়ার ফলে চাঁদের কক্ষপথের দিকে এগিয়ে যাবে ‘চন্দ্রযান ৩’ (Chandrayaan 3)। এরপর প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে ‘চন্দ্রযান ৩’ সোজা এগিয়ে যাবে চাঁদের দিকে। জানা যাচ্ছে, ৫ থেকে ৬ অগাস্ট চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করবে ‘চন্দ্রযান ৩’। এই বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে বলা হচ্ছে ‘লুনার অরবিট ইনসার্টশন’। তারপর চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ শেষ পর্যন্ত ভারতের চন্দ্রযানকে চন্দ্র কক্ষপথে টেনে আনবে। সেখানে একইভাবে পাঁচবার চাঁদের কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে নিজের কক্ষপথ সঙ্কোচন ও গতি কমানোর প্রক্রিয়া চালাবে ‘চন্দ্রযান ৩’। বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে বলা হচ্ছে মুন-বাউন্ড ম্যানুভার। শেষ ধাপে চাঁদের ১০০ কিলোমিটারের কক্ষপথে পৌঁছে পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহের বুকে চূড়ান্ত অবতরণের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
ইসরোর (ISRO Moon Mission) তরফে জানানো হয়েছে, চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে অবতরণ করবে ‘চন্দ্রযান ৩’-এর (Chandrayaan 3) ল্যান্ডার এবং রোভার। ৭০ ডিগ্রি দ্রাঘিমায় অবতরণ করার কথা এই মহাকাশযানের। এই এলাকাটি চাঁদের দক্ষিণ মেরু থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ২৩ বা ২৪ তারিখ চাঁদে অবতরণ করার পর সেখানে গবেষণা চালাবে ‘চন্দ্রযান ৩’। এখনও পর্যন্ত যে তিনটি দেশ চাঁদে পা রেখেছে, তাদের কেউই চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করতে পারেনি। চাঁদের নিরক্ষীয় অঞ্চলের কাছে অবতরণ করেছে তারা।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।