'মাইক, দ্য হেডলেশ চিকেন'-এর কথা শুনেছেন?
প্রায় দেড় বছর বিনা মুণ্ডতেই বেঁচে ছিল এই মুরগি। নিজস্ব চিত্র
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: এই পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত আশ্চর্য কত কিছু ঘটে চলেছে। তার মধ্যে কিছু ঘটনা আমাদের সত্যি ভাবিয়ে তোলে, যার ব্যাখ্যা অভিজ্ঞরাও দিতে হিমশিম খান। কল্পবিজ্ঞানের নানা জিনিস মানুষ দেখতে খুবই পছন্দ করেন। কিন্তু কল্পবিজ্ঞানের জিনিস যদি বাস্তব দুনিয়াতেও ঘটে, তাহলে কেমন হয়? হ্যাঁ, বাস্তবে এমন এক ঘটনাই ঘটেছিল পৃথিবীতে, যা বিজ্ঞানী থেকে শুরু করে অভিজ্ঞদের ভাবিয়ে তুলেছিল। ঘটনাটি হল, একটি মুরগি প্রায় দেড় বছর বিনা মুণ্ডতেই বেঁচে ছিল (Headless Chicken)। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই বাস্তব। আজ জানব সেই মুণ্ডহীন মুরগির সম্বন্ধে।
কীভাবে প্রকাশ্যে এল ওই ঘটনা? (Headless Chicken)
সালটা ১৯৪৫, কলোরাডোর স্বাভাবিক দৈনন্দিন সকালের মতোই একটি সকাল। এই অঞ্চলের ফ্রুটা শহরে মুরগির মাংস সরবরাহ করতেন এক দম্পতি লয়েড ওলসেন ও তাঁর স্ত্রী ক্লারা। এক দিন তাঁরা প্রায় চল্লিশটি মুরগি কেটে সাপ্লাই করার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। তখনই হঠাৎ তাঁদের নজরে পড়ে, ধড় থেকে মাথা আলাদা হয়ে গেলেও মুণ্ডহীন ভাবেই হেঁটে আসছে একটি মুরগি। তখন এই দৃশ্য দেখে যথারীতি অবাক হন দম্পতি। প্রথমে স্বাভাবিক মনে হলেও এটি মারা যাওয়ার অপেক্ষায় একটি বক্সে ভরে ঘুমাতে যান তাঁরা। পরের দিন সকালে উঠে বাক্স খুলতেই চক্ষু চড়কগাছ তাঁদের। দেখা যায়, মুরগিটি তখনও পর্যন্ত জীবিত অবস্থাতেই রয়েছে। এই অবাক করা খবর ছড়িয়ে পড়ে গোটা শহর জুড়ে। রাতারাতি সব কিছু বদলে যায়। সাংবাদিকদের ভিড় জমতে শুরু করে এই অলৌকিক জিনিস দেখার জন্য। একটি মুরগি (Headless Chicken) কীভাবে নিজের মুণ্ড ছাড়াও এভাবে বেঁচে থাকতে পারে? এভাবে প্রায় কয়েকদিন কেটে গেলেও মুণ্ডহীন ভাবেই মুরগিটি জীবিত অবস্থায় থাকে এবং মুরগিটি একটি নাম রাখা হয় "মাইক"। এই মাইককে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রদর্শনীর জন্য নিয়ে যেতে থাকেন লয়েড। যথারীতি যত্ন নেওয়া হয় মাইক-এর। গোটা বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে "Mike the headless chicken" এর কথা। কিন্তু এই অসম্ভব সম্ভব হল কী করেে, তা নিয়ে যথারীতি হইচই পড়ে যায় বিজ্ঞানী মহলে। কিন্তু এই মুণ্ডহীন মুরগিটির মতো অন্য মুরগি তৈরি করতে বার বার ব্যর্থ হন বিজ্ঞানীরা।
কীভাবে অসম্ভব সম্ভব হল? (Headless Chicken)
এটি কোনও জাদু না অলৌকিক ঘটনা, তা নিয়ে মাথাব্যথা শুরু হয় বিভিন্ন মহলে। অনেক গবেষণা শুরু হয়, কীভাবে একটি মুরগি মুণ্ড ছাড়াও এভাবে এক বছর বেঁচে থাকতে পারে! মাইক মুরগিটিকে লিকুইড খাবার ড্রপারে করে মুখে থাকা ছিদ্রের মাধ্যমে খাওয়াতেন। কীভাবে এই সব কিছু সম্ভব হচ্ছিল, তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা তদন্ত শুরু করেন এবং অনেক গবেষণায় দেখা যায়, যেদিন সকালে ওই দম্পতি মুরগিটিকে মাথায় কোপ মেরেছিলেন, সেদিন মুরগিটির (Headless Chicken) মুখের সামনে অংশ বাদ গেলেও মস্তিষ্কের গুরু অংশটি অক্ষত অবস্থাতেই রয়ে যায়। মস্তিষ্কের প্রায় ৮০ শতাংশ বেঁচে যায় সেই সময়। কারণ মুরগির মস্তিষ্কের অংশ মূল মুখমণ্ডলের থেকে অনেকটাই পিছন দিকে থাকে। আর মুরগিটির অর্থাৎ মাইকের মস্তিষ্কের এই অংশটিই শ্বাস-প্রশ্বাস, হৃদ্স্পন্দন, খিদে, হজমের মতো সমস্ত শারীরিক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করত। মাথা না থাকায় ড্রপারের সাহায্যে তরল খাবার ঢেলে দিতেন লয়েড। আর ক্ষতস্থান পরিষ্কার করতেন লয়েড। ফলে আশ্চর্যজনক ভাবে মাইক মুণ্ডহীন ভাবেই বেঁচে যায় দিব্যি।
কবে ও কীভাবে মৃত্যু ঘটে মাইকের? (Headless Chicken)
১৯৪৭ সালে লয়েড দম্পতি একবার মাইককে নিয়ে পশ্চিম আমেরিকার ফিনিক্স শহরে এক প্রদর্শনীতে যান। সেখানে সব শেষে হোটেলে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন তাঁরা। হঠাৎ এক শব্দে ঘুম ভেঙে যায় তাঁদের। দেখেন, দম আটকে প্রায় শেষ অবস্থা মাইকের। পরে দেখা যায় গলায় খাবার আটকে দম বন্ধ হয়ে যায় মাইকের। আর সেদিনই মৃত্যু ঘটে মাইকের। এই অস্বাভাবিক ঘটনার জন্য আজও সেলিব্রিটি মুণ্ডহীন মুরগি মাইক জনপ্রিয় হয়ে আছে গোটা পৃথিবী জুড়ে। প্রায় দেড় বছর এভাবে বেঁচে ছিল মুরগিটি। শুধু একটি দিন কীভাবে আর সাধারণ মুরগির থেকে মাইকের জীবন আলাদা করে দেবে, কারও তা জানা ছিল না। গোটা বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে "Mike the Headless chicken" এর কথা।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।