মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ফি বছরই পৃথিবীর কোনও না কোনও প্রান্তে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড়। এক এক ঘূর্ণিঝড়ের আবার এক এক নাম। অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে, ঘূর্ণিঝড়ের এমন নাম কেন হয়? সম্প্রতি যে ঘূর্ণিঝড়গুলি ভারতের পূর্ব উপকূলে বিশেষ দাগ কেটেছে, সেগুলি হল ‘আয়লা’, ‘আম্পান’, 'ইয়াস' ও 'ফণী'।
ইতিমধ্যেই 'অশনি' ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কবার্তা দিয়েছিল হাওয়া অফিস। সেই ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আছড়ে পড়ার আগেই নিম্নচাপে পরিণত হয়ে গিয়েছে। এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম নিয়েও জনসাধারণের মনে কৌতূহল চাড়া দিয়েছে। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ নাম দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। সিংহলি ভাষায় এর অর্থ 'ক্রোধ'। রবিবার সকালে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হয়েছিল এই ঘূর্ণিঝড়।
রাষ্ট্রসংঘের অধীনস্থ সংস্থা ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন (WMO)-র তথ্য অনুসারে, একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অবস্থানে বা বিশ্বজুড়ে একসময়ে একাধিক ঘূর্ণিঝড় তৈরি হতে পারে। আর, এই ঘূর্ণিঝড়গুলির জেরে দুর্যোগ একসপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে চলতে পারে। তাই বিভ্রান্তি এড়াতে প্রতিটি নিরক্ষীয় অঞ্চলে তৈরি ঝড়কে, দুর্যোগের পরিমাণ অনুমান করতে, ঝুঁকি বোঝাতে, কতটা সচেতনতার দরকার তা বোঝাতে, ব্যবস্থাপনা বোঝাতে এবং প্রশমনের সময়কাল বোঝাতেই আলাদা নাম দেওয়া হয়। নাম তৈরির ক্ষেত্রে মাথায় রাখা হয় যে তা হবে সংক্ষিপ্ত এবং সহজে উচ্চারণ করা যাবে এমন। যাতে এই নাম সহজে রেলস্টেশন, উপকূলীয় ঘাঁটি, সমুদ্রে থাকা জাহাজের মধ্যেও দ্রুত ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে। যাতে সাধারণ মানুষ এবং যাত্রীরা ঝড়ের বিস্তারিত তথ্য দ্রুত পেতে পারেন। আর, সেই অনুযায়ী সাবধানতা অবলম্বন করতে পারেন।
জটিল অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশ সনাক্তকরণের যে পদ্ধতি আগে চালু ছিল, তার চেয়ে নতুন এই পদ্ধতিতে ঝড়ের সম্পর্কে মানুষকে জানানো বা সচেতন করা অনেক সহজ হয়েছে। শুরুর দিকে ঝড়ের নামকরণ করা হত ইচ্ছেমতো। ১৯০০ সালের মাঝামাঝি থেকে, ঝড়ের মেয়েলি নাম ব্যবহার শুরু হয়েছিল। আবহাওয়াবিদরা পরবর্তীতে আরও সংগঠিত এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনার জন্য একটি তালিকা থেকে ঝড়ের নাম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
১৯৫৩ সাল থেকে অতলান্তিক নিরক্ষীয় অঞ্চলে ঝড়ের নামকরণ করা হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় হারিকেন সেন্টারে তৈরি তালিকা অনুযায়ী। এমনটাই জানিয়েছে ডব্লিউএমও। বর্তমানে বিশ্বে ছ’টি আঞ্চলিক বিশেষ আবহাওয়া কেন্দ্র (আরএসএমসি) এবং পাঁচটি আঞ্চলিক ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র রয়েছে। এখান থেকেই ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয় এবং সতর্কবার্তাও দেওয়া হয়।
ভারতের মেটিওরোলজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট (আইএমডি) হল আরএসএমসিগুলির মধ্যে একটি। স্বভাবতই একটি ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করার দায়িত্ব তারও রয়েছে। উত্তর ভারত মহাসাগরে যখন ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়, আর তার বাতাসের গতিবেগ যখন ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার বা তার বেশি হয়ে যায়, তখন আইএমডি সতর্কবার্তা জারি করে। আইএমডি উত্তর ভারত মহাসাগরের ১৩টি দেশকে ঘূর্ণিঝড় এবং ঝড়-বৃষ্টির সতর্কবার্তা দেয়।
বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ শুরু হয়েছিল ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বরে। ঘূর্ণিঝড়ের নামের এই তালিকাটি লিঙ্গ, রাজনীতি, ধর্মীয় বিশ্বাস এবং সংস্কৃতির নিরপেক্ষতা বজায় রেখে বর্ণানুক্রমিকভাবে সাজানো দেশগুলোর দেওয়া নাম অনুসারে তৈরি করা হয়েছে। দক্ষিণ চিন সাগর থেকে তাইল্যান্ড অতিক্রম করে বঙ্গোপসাগরে যে ঝড় আসে, তার নাম বদলানো হয় না।
একবার যদি কোনও একটি নাম নির্দিষ্ট ঝড়কে বোঝাতে ব্যবহার হয়, তবে পরে আর ওই নাম অন্য কোনও ঝড়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় না। নামকরণের সময় মাথায় রাখা হয়, সর্বোচ্চ আটটি অক্ষর থাকতে পারবে। কোনও সদস্য দেশের আপত্তি থাকলে সেই নামগ্রহণ করা হয় না। কোনও জনগোষ্ঠীর আবেগ যাতে আঘাতপ্রাপ্ত না হয়, ঝড়ের নামকরণে সেটাও মাথায় রাখেন আবহাওয়াবিদরা। ২০২০ সালে, ১৩টি দেশের দেওয়া ঝড়ের ১৬৯টি নামের নতুন একটি তালিকাও প্রকাশ হয়েছে। এর আগে ৮টি দেশের ৬৪টি নাম ব্যবহার হয়েছে।
ভারত থেকে যে নামগুলো দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ‘গতি’, ‘মেঘ’, ‘আকাশ’। অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ দিয়েছে ‘অগনি’, ‘হেলেন’ এবং ‘ফণী’। পাকিস্তান দিয়েছে ‘লায়লা’, ‘নার্গিস' ও ‘বুলবুল’। ‘অশনি’র পর যে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হবে, তার নাম হবে ‘সিত্রং’। এই নামটি তাইল্যান্ড দিয়েছে। ভবিষ্যতে ঘূর্ণিঝড়ের যে নামগুলো ব্যবহার করা হবে, তার মধ্যে রয়েছে ভারতের ‘ঘূর্ণি’, ‘প্রবাহ’, ‘ঝড়’ এবং ‘মুরাসু’। বাংলাদেশের ‘বিপর্যয়’, সৌদি আরবের ‘আসিফ’, ইয়েমেনের ‘দিকসাম’, ইরানের ‘তুফান’, এবং শ্রীলঙ্কার ‘শক্তি’।
+ There are no comments
Add yours