গত বছর জাতীয় প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছিল ও। দ্বিতীয় হওয়া ছেলেটিকে তাঁর রাজ্য কিন্তু পুরস্কৃত করেছে। আমাদের স্থানীয় সাংসদ, বিধায়ক বা রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী তো চেনেনই না অচিন্ত্য শিউলিকে
গ্রামের বাড়ি। মায়ের সঙ্গে অচিন্ত্য।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: অভাবকে হারিয়ে কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জিতেছে ভাই অচিন্ত্য। এরকম আনন্দের দিনেও উচ্ছ্বাসে ভাসতে পারছেন না দাদা অলোক শিউলি। ভাইয়ের লক্ষ্য যে অলিম্পিক। প্যারিস অলিম্পিকে যেতে হবে তাঁকে। কিন্তু তার জন্য দরকার টাকা। "এখানকার কেউ তো সাহায্য করে না।" ক্ষোভ অলোকের গলায়। মুখ্যমন্ত্রী ট্যুইট করে অভিনন্দন জানিয়েছেন তো! তাহলে হয়তো এবার সাহায্য আসতে পারে। তবুও নিশ্চিত নয় দাদা অলোক। ভাইয়ের সাফল্যের দিনে তাঁর গলায় ক্ষোভের সুর। বললেন, ‘‘অভাবকে হারিয়ে আমি না পারলেও ভাই সেই যুদ্ধে জিতেছে। হরিয়ানা-সহ অন্য রাজ্যে এ রকম সাফল্য আনলে সরকার পুরস্কার দেয়। আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী , কী করবেন জানি না! যুব বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে রুপো জিতেছিল ভাই। এই সাফল্যের পরে কেউ খোঁজই নেননি। গত বছর জাতীয় প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছিল ও। দ্বিতীয় হওয়া ছেলেটিকে তাঁর রাজ্য কিন্তু পুরস্কৃত করেছে। আমাদের স্থানীয় সাংসদ বা বিধায়করা তো চেনেনই না অচিন্ত্য শিউলিকে! আমাদের রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী বোধহয় জানেনই না ভাই কমনওয়েলথের আসরে নেমেছে।"
আরও পড়ুন: আশা করি এবার একটা সিনেমা দেখার সময় পাবে! অচিন্ত্যর প্রশংসায় মোদি
বাবা রিকশা চালাতেন। অচিন্ত্যর তখন ৮ বছর বয়স। বাবা মারা গেলেন। অলোক একটু বড়। স্বামীর মৃত্যুর পর সেলাই, জরির কাজ করা শুরু করেন অচিন্ত্যর মা পূর্ণিমা শিউলি। দুই ভাইও সময় পেলেই মাকে সাহায্য করত। তাঁদের সাপ্তাহিক আয় ছিল মাত্র ৫০০ টাকা। সেই টাকাতেই চলত সংসার। বাবার মৃত্যুর ধাক্কা, সংসার সামলে পড়াশোনা, কাজ ও ভারোত্তোলক হওয়ার স্বপ্নে ক্ষান্ত দেন অলোক। তবে ভাই অচিন্ত্যর ভারোত্তোলক হওয়ার স্বপ্নে ধুলো জমতে দেননি। চলতি কমনওয়েলথ গেমসে ৭৩ কেজি বিভাগে সোনা জয়ের পর সে কথা জানাতে ভোলেননি ভাই অচিন্ত্য। প্রতিক্রিয়ায় অচিন্ত্য বললেন, “এই পদক উৎসর্গ করছি দাদাকে।” যাঁর পরিশ্রম, উৎসাহ ছাড়া এতটা পথ হয়তো আসাই হত না। যাঁর জন্য পাতিয়ালায় জাতীয় শিবিরে নিশ্চিন্তে অনুশীলনে মগ্ন থাকতে পারতেন। বললেন, “দাদা ভারোত্তোলক হতে চেয়েছিল। বাবার মৃত্যুর পর তা হয়ে ওঠেনি। আমাকে সাপোর্ট করতে দিনরাত পরিশ্রম করে গিয়েছে। এখনও পরিবারের দায়িত্ব একমাত্র দাদার কাঁধে। এই সোনার পদক দাদা এবং আমার কোচদের উৎসর্গ করছি।”
#IndianArmy congratulates Havildar Achinta Sheuli on winning #GoldMedal in #Weightlifting by lifting a total of 313 kg (GR) in Men's 73 kg Finals at #CommonwealthGames2022. #Cheer4India#IndianArmy #MissionOlympics pic.twitter.com/sHpjnVhzdx
— ADG PI - INDIAN ARMY (@adgpi) August 1, 2022
এখন অচিন্ত্য ভারতীয় সেনাবাহিনীতে হাবিলদারের কাজ করেন। ন্যাশনাল ওয়েট লিফটিং প্রতিযোগিতায় অচিন্ত্য চতুর্থ হওয়ার পরেই সেনাবাহিনীর নজরে পড়ে যান তিনি। পরে অল ইন্ডিয়া ট্রায়ালে অংশ নিয়ে সে সেখানে সুযোগ পান। পরে ২০১৪ সালে হরিয়ানায় ন্যাশানাল গেমসে তৃতীয় হয়ে সেনাবাহিনীর স্পোর্টস ইন্সটিটিউটে (Military Sports Institute) যোগ দেন। এরপরে পাতিয়ালায় ভারতীয় শিবিরে ডাক পান অচিন্ত্য। ইতিমধ্যেই অচিন্ত্য ২০১৫ সালে ভারতে যুব কমনওয়েলথ গেমসে রূপো, ২০১৭ সালে ইউথ ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ানশিপে রূপো, ২০১৯ সালে জুনিয়র বিভাগে সোনার পদক, ২০২১ সালে ওয়ার্ল্ড জুনিয়র প্রতিযোগিতায় রূপো এবং জুনিয়র ও সিনিয়র বিভাগে জোড়া সোনার পদক জয় করেছেন। এবার লক্ষ্য ২০২৪ সালের প্যারিস অলিম্পিক্সে পদক জেতা।