মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ২০০০ সালে সিডনি অলিম্পিকে ভারোত্তলক কর্ণম মালেশ্বরীকে পুরস্কার নিতে দেখেছিলেন তিনি। তখনই ভেবেছিলেন, মেয়েদের আর ঘরবন্দি করে রাখবেন না। মল্লযোদ্ধা (Indian Wrestling Team) বানাবেন। পরিচয় করিয়ে দেবেন কুস্তির জগতের সঙ্গে। কেবল পরিচয় করানোই নয়, মেয়েরা যাতে অলিম্পিকের (Paris Olympics 2024) পোডিয়ামে উঠতে পারে, সেজন্যও নিরন্তর চেষ্টা করে যাবেন বলে শপথ করেছিলেন। যাঁর সম্পর্কে এসব ভালো ভালো কথা বলা হচ্ছে, তিনি হলেন মহাবীর ফোগাট। যাঁকে তামাম ভারত চেনে মহিলা কুস্তিগিরদের কোচ হিসেবে। ফোগাট নিজে কোনওদিন ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেননি। তা সত্ত্বেও দেশ-বিদেশের কুস্তিগীররা নতজানু হন আজও।
কুস্তিগীরের স্বপ্ন (Paris Olympics 2024)
এহেন কুস্তিগীর তাঁর স্বপ্ন সফল করতে নিজের মেয়েকেই দিয়েছিলেন কুস্তির প্রশিক্ষণ। হরিয়ানার মতো একটি রাজ্যে সেই সময় যেটা ছিল অকল্পনীয়। কল্পনার সেই জগৎটাকেই বাস্তবের মাটিতে টেনে নামালেন ফোগাট। ভারতীয় কুস্তির জগতে দাপট ফোগাট পরিবারেরই। তাঁর মেয়ে গীতা, ববিতা, ঋতু, সঙ্গীতাকে কুস্তিগীর বানিয়েছেন তিনিই। কুস্তি লড়তে শিখিয়েছেন ভাইঝি বীণেশ এবং প্রিয়াঙ্কাকেও। ঘরের মেয়েদের কুস্তির ময়দানে টেনে নামাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল মহাবীরকে। পড়শির সমালোচনা, গ্রামবাসীদের গঞ্জনা, মায় নিজের পরিবারেও ব্যাপক বাধার সম্মুখীন হয়েছিলেন মহাবীর। তবুও হাল ছাড়েননি। তার জেরেই আজও ভারতীয় কুস্তি জগতে দাপট ফোগাটদের। তাঁর জীবন-দর্শনে প্রাণিত হয়েই আমির খান বানিয়েছিলেন বক্স অফিস হিট করা ছবি ‘দঙ্গল’।
দ্রোণাচার্য
ভারতে মহিলা কুস্তিগীরদের প্রথম লড়াইয়ের ময়দানে দেখা যায় নয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে। তবে এটা মূলত সীমাবদ্ধ ছিল দিল্লিতেই। প্রত্যন্ত গ্রামের কোনও মেয়ে কুস্তি লড়ছেন, তা কেউ ভাবতেই পারতেন না। সেই সময়ই নিজের মেয়েদের কুস্তির মাঠে নামিয়ে দিয়েছিলেন মহাবীর। তার পর থেকেই তিনি পরিচিত হতে থাকেন ‘ভারতীয় মহিলা কুস্তির জনক’ হিসেবে। ফোগাটকে ২০১৬ সালে দ্রোণাচার্য পুরস্কারে ভূষিত (Indian Wrestling Team) করে ভারত সরকার। গেমস অ্যান্ড স্পোর্টসে অসামান্য অবদানের জন্য কোচদের এই পুরস্কার দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: '২৪ কোটি জনগণের দেশ থেকে মাত্র ৭ জন অ্যাথলিট?' লাইভ টিভিতে লজ্জার মুখে পাকিস্তান
মহাবীরের ‘বীরত্ব’
মহাবীরের ‘বীরত্ব’ প্রমাণিত হয় সে-ই ২০১০ সালেই, যখন কমনওয়েল্থ গেমসে তাঁর মেয়ে গীতা কুস্তিতে ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে স্বর্ণপদক জয় করেন। তিনিই প্রথম মহিলা কুস্তিগীর, যিনি এই পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। মহাবীরের আরও এক মেয়ে ববিতা ২০১২ সালে বিশ্ব কুস্তি চ্যাম্পিয়ানশিপে ব্রোঞ্জ পদক জয় করেন। মহাবীরের ভাইঝি বীণেশও কমনওয়েল্থ গেমসে জিতেছেন সোনার পদক। মহাবীর এক সময় বলেছিলেন, “আমি সব ঝুঁকি নিয়েও আমার মেয়েদের পদকের যোগ্য করে তুলেছি।”
বীণেশের লড়াই
মহাবীরের ভাইঝি বীণেশ একাধিক আন্তর্জাতিক পদক জিতেছেন। ২০১৯ ও ২০২২ সালে হয়েছিলেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান। তিনবার কমনওয়েল্থ গেমস জিতে রেকর্ডও গড়েছিলেন মহাবীরের এই ভাইঝি। ২০১৮ সালে জাকার্তা এশিয়ান গেমসেও তাঁর মাথায় উঠেছে বিজয়ীর তাজ (Paris Olympics 2024)। ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে পদক জিতেছেন ঋতু এবং প্রিয়াঙ্কাও। হরিয়ানার ভিওয়ানি জেলার বালালি গ্রামে জন্ম মহাবীরের। তাঁর বাবা মান সিং ছিলেন একজন কৃষক। মা গৃহবধূ। মহাবীররা পাঁচ ভাই। বীণেশ ও প্রিয়ঙ্কা তাঁর ছোট ভাই রাজপালের মেয়ে।
রক্তে কুস্তি
মহাবীরের বাবা ছিলেন স্বনামধন্য কুস্তিগীরও। তাই কুস্তিটা তাঁর রক্তে। তিনি কুস্তি লড়তে জানলেও, কখনও প্রতিনিধিত্ব করেননি ভারতের। তবে তাতে কী? পরিবারের সোনা-ব্রোঞ্জের মেয়েদের কল্যাণে পদকে উপচে পড়ার জোগাড় মহাবীরের ঘর। প্যারিস অলিম্পিক্সে এ বছর ভারতের প্রতিনিধিত্ব করছেন ৬ জন কুস্তিগীর। এর মধ্যে পাঁচজনই এসেছেন হরিয়ানার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে। যেখানে তাঁরা প্রতিনিয়ত বাধার সম্মুখীন হতেন ‘পুরুষদের খেলা’ খেলতে গিয়ে।
কী বলছেন মহাবীর?
মহাবীর বলেন, “আমি যখন আমার বাড়ির মেয়েদের কুস্তির জগতে নিয়ে আসি, তখন আমার লক্ষ্যই ছিল অলিম্পিক পদক জয়। আমার মেয়েরা সব ধরনের মেডেল জিতেছে। অধরা রয়েছে অলিম্পিক মেডেল। আমি আশা করি, প্যারিস অলিম্পিকে বীণেশ সেই পদক জিতে নেবে।” প্যারিস অলিম্পিক্সে ভারতীয় দলে রয়েছেন বীণেশ ফোগাট (৫০ কেজি), অন্তিম পাঙ্গাল (৫৩ কেজি), অংশু মালিক (৫৭ কেজি), নিশা দাহিয়া (৬৮ কেজি), ঋতিকা হুদা (৭৬ কেজি)। এই দলে রয়েছেন একমাত্র পুরুষ কুস্তিগীর আমন শেরওয়াত(৫৭ কেজি) (Paris Olympics 2024)।
ঋতিকা বলেন, “অলিম্পিক জেতাটা যে কোনও ক্রীড়াবিদেরই স্বপ্ন। বিশ্বের সব চেয়ে বড় স্পোর্টিং ইভেন্টের অংশ হতে পেরে আমি খুব খুশি।” তিনি বলেন, “ভারতীয় মহিলা কুস্তিগীররা প্যারিসে খেলছেন, এটা ভবিষ্যৎ (Indian Wrestling Team) প্রজন্মকে মোটিভেট করবে (Paris Olympics 2024)।”
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours