2-Tier Test Cricket: টেস্ট ক্রিকেটে টু-টিয়ার সিস্টেম চালুর ভাবনা আইসিসি-র নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান জয় শাহের
টেস্ট ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা ফেরাতে বড় সিদ্ধান্ত আইসিসি-র। ফাইল চিত্র
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আইসিসি চেয়ারম্যান হিসেবে সদ্য দায়িত্ব নেওয়ার পরই টেস্ট ক্রিকেটে বড়সড় এক বদলের পরিকল্পনা করছেন জয় শাহ (ICC Chairman Jay Shah)। টেস্ট ক্রিকেটে টু-টিয়ার সিস্টেম বা দ্বিস্তরীয় ব্যবস্থা চালু করার চিন্তাভাবনা করছেন আইসিসির নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান। টি-টোয়েন্টির যুগে টেস্ট ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা ফিরিয়ে আনতে এই ব্যবস্থা কার্যকর করার কথা ভাবা হয়েছে। ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের ক্রিকেট বোর্ডের কর্তারা মিলে এই নীল নকশা তৈরি করছেন। যার নেতৃত্বে আইসিসি চেয়ারম্যান জয় শাহ।
আইপিএল ও টি-টোয়েন্টির যুগে ক্রমশ হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যের টেস্ট ক্রিকেট। আধুনিক ক্রিকেটের ঘরানায় ধরে খেলা, উইকেটে থেকে খেলা দর্শক মনে জায়গা করে নিতে পারছে না। দুমদাম শট দেখতেই মাঠে ভিড় জমাচ্ছে দর্শক। সম্প্রতি এমন কথাই শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু বর্ডার-গাভাস্কর ট্রফিতে (Border-Gavaskar Trophy) রেকর্ড দর্শকসংখ্যার পরে সেই ধারণা ভেঙে গিয়েছে। ভালো খেলা হলে দর্শক মাঠে আসতে বাধ্য তা প্রমাণ করেছে ভারত-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট সিরিজ। রোহিত-বিরাট-যশস্বী-পন্থদের সঙ্গে কামিন্স-স্টার্কদের দ্বৈরথ দেখতে প্রতিদিন মাঠে এসেছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। বুমরা-স্মিথ-হেড-সিরাজ বা জাদেজা-কনস্টাসদের খেলা নজর কেড়েছে সকলের। তাই টেস্ট ক্রিকট নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে আইসিসি। অ্যাশেজ সিরিজের বাইরে অস্ট্রেলিয়ায় মাঠে এত ভিড় আর কোনও সিরিজে হয়নি। সদ্যসমাপ্ত বর্ডার-গাভাস্কর ট্রফিতে মোট দর্শকসংখ্যা ছিল ৮ লক্ষ ৩৭ হাজার ৮৭৯। শুধু ১৯৩৬-৩৭, ২০১৭-১৮ ও ১৯৪৬-৪৭ সালে অ্যাশেজ সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে এর চেয়ে বেশি দর্শক স্টেডিয়ামে গিয়ে খেলা দেখেছিলেন।
টেস্ট ক্রিকেটকে দুটো শ্রেণিতে ভাঙার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আইসিসি চেয়ারম্যান জয় শাহ ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার চেয়ারম্যান মাইক বায়ার্ড, ইসিবি চেয়ারম্যান রিচার্ড থম্পসনের সঙ্গে বৈঠক করবেন টেস্ট ক্রিকেটকে দুটো আলাদা আলাদা ডিভিশনে ভাঙার জন্য। টেস্ট ক্রিকেটকে টিয়ার-১ ও টিয়ার-২ তে ভাঙা হবে। বর্তমানে নিয়ম অনুযায়ী, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড— এই তিন দল একে অপরের বিরুদ্ধে চার বছরে দু’বার একে অপরের বিরুদ্ধে খেলে। টেস্ট খেলিয়ে তিনটে প্রথম সারির দলের ক্ষেত্রে যেটা অনেক কম বলে মনে করে আইসিসি। রিপোর্ট অনুযায়ী, আইসিসি যেই পরিকল্পনা করেছে তাতে এই তিন দল একে অপরের বিরুদ্ধে তিন বছরে দু’বার করে টেস্ট খেলবে।
আইসিসি যেই প্রস্তাব দিয়েছে তাতে প্রথম ডিভিশনে খেলবে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। দ্বিতীয় ডিভিশনে খেলবে বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবোয়ে, আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ড। এই গ্রুপ বিন্যাসের অর্থ হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও ভারত তিন দল একে অপরের বিরুদ্ধে আরও বেশি করে ম্যাচ খেলবে। তিন মহাশক্তিধর টেস্ট খেলিয়ে দেশ নিজেদের মধ্যে বেশি করে খেললে টেস্ট ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা বাড়বে বলে খবর আইসিসির অন্দরে। তাই তিন ক্রিকেট খেলিয়ে দেশগুলোর সঙ্গে আইসিসি একটা চুক্তি করতে চাইছে। সূত্রের খবর, চলতি মাসের শেষেই আইসিসির চেয়ারম্যান জয় শাহ বৈঠক করবেন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড কর্তাদের সঙ্গে।
তবে প্রস্তাবিত এই ফর্ম্যাট নিয়ে বিতর্কও শুরু হয়ে গিয়েছে। কারণ, এখনও পর্যন্ত এই দ্বিস্তরীয় টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ভাবনায় অবনমন প্রথা থাকবে বলে খবর নেই। সেক্ষেত্রে ওপরের পর্বে যাওয়ারও সুযোগ থাকবে না দ্বিতীয় গ্রেডে থাকা দলগুলির। কী করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো ঐতিহ্যশালী দলকে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের সঙ্গে খেলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়, স্যর গ্যারি সোবার্স, ভিভ রিচার্ডস, পেস বোলিংয়ের পঞ্চপাণ্ডব, ব্রায়ান লারার দেশকে গ্রেড টুয়ে রাখা আসলে উপেক্ষা করা কি না, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। শুরু হয়েছে জোর বিতর্ক।
West Indies great Lloyd flays two-tier test structure https://t.co/YwEIjC5aqm pic.twitter.com/VR5qGGTcBk
— Reuters (@Reuters) January 7, 2025
তবে, এই প্রথম নয়, যেখানে টেস্ট ক্রিকেটকে দুই ভাগ ভাগ করার কথা হচ্ছে। ২০১৬ সালে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তখন সব ক্রিকেট বোর্ড তা খারিজ করে দেয়, তালিকায় ছিল বিসিসিআইও। সেই সময় ভারতের যুক্তি ছিল, টেস্ট ক্রিকেটকে দুই ভাগে ভাগ করা হলে ছোট দলগুলো পিছিয়ে যাবে এবং টেস্টে এগোতে পারবে না। কিন্তু ২০১৬ সালে টেস্ট ক্রিকেটের যা ছবি ছিল সেটা এখন বদলেছে। এখন সমর্থকরা নির্দিষ্ট কিছু দলের ম্যাচ দেখতে টেস্টে ভিড় করেন। তাই আইসিসি চাইছে পুরোনো প্রস্তাব ফিরিয়ে আনতে ও সেটাকে বাস্তবায়িত করতে।
নতুন ফরম্যাট চালু হলে সবটাই হবে ২০২৭ বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পর। এখন আইসিসির টেস্ট সাইকেল চলছে। সেই সাইকেল অনুযায়ী, ২০২৭ সাল পর্যন্ত টেস্ট সূচি তৈরি হয়ে গিয়েছে। এই হিসেবে যদি টেস্টকে দুটো ভাগে ভাগ করা যায় তাহলে সূচিতে বদল আনতে হবে। মনে করা হচ্ছে, বর্তমানে চলা টেস্ট সাইকেল শেষ হলে তারপর নতুন নিয়ম চালু করা হতে পারে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।