Salt lake Stadium: ‘ডার্বি কাড়বি কেড়ে নে, মেয়েটাকে ফিরিয়ে দে’! স্লোগান শুনল যুবভারতী, উঠল মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিও
যুবভারতীর সামনে প্রতিবাদ, সমর্থকদের পাশে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কল্যাণ চৌবে।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: গঙ্গা থেকে পদ্মা পার, ঘটি-বাঙালের লড়াই, ইলিশ না চিংড়ি এ সব তর্ক এখন ঊর্ধ্বে। ডার্বির ময়দানে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের গলায় একটাই স্বর, ‘বিচার চায় আরজি কর’। কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে সবুজ মেরুন বা লাল-হলুদ সমর্থকদের এক সুর ‘ডার্বি নিয়ে লড়াই নাই, আরজি করের বিচার চাই’। রবিবার যুবভারতীতে হওয়ার কথা ছিল ডুরান্ড ডার্বির। যদিও আরজি করে (RG Kar Incident) পড়ুয়া চিকিৎসকরে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় উত্তপ্ত শহরে ডার্বি বাতিল করে দেয় পুলিশ। তবুও যুবভারতীর বাইরে প্রতিবাদের ঝড় তুলল ফুটবল প্রিয় বাঙালি। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, মহমেডান সমর্থকদের প্রতিবাদে চার ঘণ্টার বেশি অবরুদ্ধ হয়ে থাকল বাইপাস। আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদ করতে গিয়ে খেতে হল পুলিশের লাঠি। সমর্থকদের বাঁচাতে এগিয়ে এলেন সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কল্যাণ চৌবে। সম্পূর্ণ নিজের উদ্যোগে ইস্ট-মোহন বা মহামেডান সমর্থকদের পুলিশের হাত থেকে বাঁচালেন কল্যাণ।
সমর্থকদের পাশে কল্যাণ
রবিবার যুবভারতী সংলগ্ন এলাকায় যখন দুই দলের সমর্থক ও পুলিশের মধ্য বচসা চলছে তখনই ঘটনাস্থলে পৌঁছন সর্বভারতীয় ফুটবল সংস্থার সভাপতি কল্যাণ চৌবে। কল্যাণ জানান, সমর্থকদের দাবিকে সমর্থন জানাতেই তিনি সেখানে গিয়েছেন। পুলিশের ভূমিকার তীব্র নিন্দা করেন তিনি। কল্যাণ বলেন, ‘‘সমর্থকদের দাবিকে সমর্থন জানাতেই এখানে এসেছি। পুলিশ কী বলবে? যে ১০টা ছেলেকে তুলে নিয়ে গিয়েছি। কেন? তাঁরা ফুটবল খেলা দেখতে এসেছিলেন। ফুটবল খেলা দেখায় কী অপরাধ আছে? আমি পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হবে। ফুটবল খেলা দেখার জন্য কাউকে অ্যারেস্ট হতে দিতে পারব না।’’
"It's shameful; law and order has collapsed in West Bengal. A football match was canceled, and police presence looks like a riot," says Kalyan Chaubey after the East Bengal vs. Mohun Bagan Derby was called off. ⚽️🚨#WestBengal #Football #SaltLakeStadium https://t.co/gut2zeuEyY
— BoseSingh (@Lohit1984) August 18, 2024
এদিন পুলিশের ভূমিকার বিরোধিতা করে ফেডারেশন সভাপতি জানান, টা স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ। স্বাধীনতার আগে বা পরে এ রকম প্রতিবাদ কখনও হয়নি। ডার্বির অপেক্ষা সবাই করে থাকে। ফেরিওয়ালা থেকে শুরু করে খেলোয়াড়, সদস্য-সমর্থক সবাই এই ম্যাচের অপেক্ষা করে থাকেন। এই জন্যে আজ সবাই এগিয়ে এসেছেন। লাল-হলুদ, সবুজ-মেরুন, সাদা-কালো সবাই এক হয়ে গিয়েছে। পুলিশের লাঠিচার্জ মোটেই ভাল কাজ হল না। পতাকা নিয়ে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ চলছিল। সমর্থকদের কথায়, এদিন ফেডারেশন সভাপতি যা করেছেন তা এক কথায় প্রশংসনীয়। একজন বলেন, ‘‘ওনাকে ধন্যবাদ, উনি আজ সমর্থকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। কোনও সমর্থককে গ্রেফতার হতে দেননি। কার্যত পুলিশের প্রিজন ভ্যানের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন কল্যাণ। ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগানের কোনও দলের সমর্থককেই গ্রেফতার হতে দেননি।’’
রবিবাসরীয় বিকেলে বৃষ্টির মধ্যেই তিলোত্তমার হয়ে প্রতিবাদে সামিল হয়েছিলেন অগণিত সমর্থক। বিকেল ৪টে থেকে যুবভারতীর বাইরে অল্প অল্প করে জমায়েত শুরু হয়। পুলিশ আগে থেকেই তৈরি ছিল। গার্ডরেল দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছিল সমর্থকদের আটকাতে। মিছিল বড় হতেই পুলিশ আটকায়। মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকেরা প্রশ্ন তুলছিলেন, যদি নিরাপত্তার দাবি তুলে ডার্বি বাতিল করা হয়, তা হলে প্রতিবাদ আটকাতে এত পুলিশ মোতায়েন করা হল কেন? এর থেকে কম পুলিশে তো ডার্বি হয়ে যেত? আসলে কি পুলিশ তথা রাজ্য সরকার ভয় পেয়েছিল? সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে ডুরান্ড ডার্বির গ্যালারি জুড়ে যদি আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদ-পোস্টার দেখা যেত সারা ভারতে, তাহলে তা সরকারের পক্ষে ভালো হত না, বলা বাহুল্য। তাই কি সংগঠকদের ওপর ম্যাচ বাতিল করার চাপ দেওয়া হয়েছে? এমনই সব প্রশ্ন তুলেছেন দুই প্রধানের সমর্থকরা।
You can cancel the match, Can you silent our voice? #JusticeForRGKar #MBFT pic.twitter.com/l7ZZ9gpCX4
— MBFT : Mohun Bagan (@MBFT89) August 17, 2024
বাঙালি দুই ভাগ হয়ে যায় ডার্বির লড়াই নিয়ে। ফিফার বিচারেও ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগানের ম্যাচ এশিয়ার অন্যতম সেরা ফুটবল দ্বৈরথ। তবে রবিবারের (১৮ অগস্ট) ডার্বি এক নতুন ছবির জন্ম দিল। এদিন আর কেউ লাল-হলুদ নয়, সবুজ-মেরুন নয়, সব রঙ মিশে গেল প্রতিবাদের রঙে। কেউ বললেন, ‘তুমি আমি একই স্বর, জাস্টিস ফর আরজি কর’, কেউ বললেন, চিংড়ি-ইলিশ এক স্বর, জাস্টিস ফর আরজি কর, ‘ঘটি বাঙাল দিয়েছে ডাক, তিলোত্তমা বিচার পাক’। প্রতিবাদ মিছিল থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবিও উঠল। চেনা স্লোগান, যতবার ডার্বি… একটু বদলে হল, ‘যতবার ডার্বি, স্বৈরাচারী হারবি।’ স্লোগান উঠল, ‘এক হয়েছে বাঙাল-ঘটি, ভয় পেয়েছে হাওয়াই চটি।’ এমনকি, মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি জানিয়ে কেউ কেউ স্লোগান দিলেন, ‘ইস্ট-মোহনের দাবি এক, মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ’। মিছিল করে হাঁটতে হাঁটতে বিক্ষোভকারীদের এদিন জাতীয় সঙ্গীত গাইতেও দেখা যায়। দেখা যায়, আশেপাশে দাঁড়িয়ে যাঁরা গোটা ব্যাপারটি দেখছিলেন, তাঁরাও জাতীয় সঙ্গীতে গলা মেলান। স্লোগান উঠল ‘ডার্বি কাড়বি কেড়ে নে, মেয়েটাকে ফিরিয়ে দে’, ‘খেলার মাঠ বন্ধ তবে, খেলার বদলে বিচার হবে’।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।