'ভাবা'য় নিয়োগপত্র পেয়ে সোহম বললেন, ‘আমার লক্ষ্য সুপার কম্পিউটার তৈরি করা।’
বাবা-মায়ের সঙ্গে সোহম মহাপাত্র। নিজস্ব চিত্র।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: 'বার্ক' (ভাবা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টার)-এর বিজ্ঞানী হলেন ঝাড়গ্রামের (Jhargram) ভূমিপুত্র সোহম মহাপাত্র। বেসরকারি সংস্থায় বাৎসরিক ১২ লাখ টাকার সফটওয়্যার ডেভেলপারের চাকরি ছেড়ে বাড়ি ফিরে এসেছিলেন। কারণ মোটা মাইনের চাকরি হলেও কাজে মন বসছিল না তাঁর। বিজ্ঞানী হয়ে দেশের জন্য কিছু করার ইচ্ছে তাঁকে কুরে কুরে খাচ্ছিল।
ঝাড়গ্রামের (Jhargram) ভুমিপুত্রের পরিচয়?
ঝাড়গ্রাম (Jhargram) শহরের মধুবন মোড়ের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা সোহম। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। মা সেবা ভারতী মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষিকা রাজশ্রী রায় মহাপাত্র এবং বাবা ঝাড়গ্রাম জেলা আদালতের আইনজীবী সীতাংশু মহাপাত্র। ছেলে চাকরি ছেড়ে দেওয়ায় বাবা-মা প্রথমে খানিকটা অবাক হলেও ছেলের ওপর কিছু চাপিয়ে দেননি। আর ছেলের সেই ইচ্ছে সাফল্য হিসেবে ধরা দিল মাত্র দশ মাসেই। মাত্র ২৩ বছর ৯ মাসেই বিজ্ঞানী হলেন ছেলে সোহম! কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-এ বি-টেক করা তরুণ বিজ্ঞানী হিসেবে চলতি মাসের শেষের দিকে যোগ দিতে চলেছেন মুম্বইয়ের পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র ভাবা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টারে।
ঝাড়গ্রাম (Jhargram) লায়েন্স মডেল স্কুল থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত, তারপর ঝাড়গ্রাম কুমুদকুমারী ইনস্টিটিউশন থেকে ২০১৫ সালে মাধ্যমিক ও ২০১৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন সোহম। তারপর রাজ্যের জয়েন্ট পরীক্ষা পাশ করে কলকাতার বেলেঘাটায় অবস্থিত গভর্নমেন্ট কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সেরামিক টেকনোলজি থেকে ২০২১ সালে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে বি-টেক পাশ করেন। ওই বছরই সর্বভারতীয় ‘গেট’ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও এম টেক করেন সোহম। ২০২১ সালের জুন মাসে একটি বেসরকারি সংস্থায় সফটওয়্যার ডেভেলাপার ইঞ্জিনিয়ারিং-এর বছরে ১২ লাখ টাকা বেতনের চাকরি পেয়ে সেখানে চলে যান। দেড় বছর চাকরি করার পরেও কাজে মন না বসায় ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চাকরি ছেড়ে সোজা ঝাড়গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন সোহম।
কোনও কোচিং ছাড়াই নিজে ঝাড়গ্রামের (Jhargram) বাড়িতে শুরু করেন ‘গেট’-এর প্রস্তুতি। সঙ্গী শুধু বই ও ইন্টারনেট। মাত্র দশ মাসের মধ্যে প্রস্তুতির পর ‘গেট’ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দেশের একাধিক আইআইটিতে ভর্তির সুযোগ পান। এমনকি পাটনা আইআইটিতে ভর্তিও হয়ে যান। ওই সময়ই মুম্বইয়ের পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্রে বিজ্ঞানী পদে লিখিত পরীক্ষায় তৃতীয় স্থান অর্জন করেন। তারপর ইন্টারভিউ দেওয়ার পর তাঁর কাছে ই-মেলের মাধ্যমে যোগদানের অফার লেটার আসে। যেদিন তাঁর দিদিমা প্রয়াত হলেন, সেদিনই নাতি হাতে পেলেন বিজ্ঞানী হিসেবে যোগ দেওয়ার সুযোগ। মাসে ১ লাখ ১০ হাজার টাকার বেতনে চলতি মাসের শেষে মুম্বইয়ে গিয়ে কাজে যোগ দেবেন সোহম।
সোহম মহাপাত্র বলেন, ‘আমার লক্ষ্য সুপার কম্পিউটার তৈরি করা।’ সোহম বলেন,‘যখন চাকরি ছেড়ে বাড়ি (Jhargram) এসেছিলাম তখন অনেকেই ভেবেছিল আমাকে চাকরি থেকে হয়তো বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ১২ লাখ টাকার চাকরি ছাড়াটা আমার অনেক আত্মীয়-স্বজনরাও মেনে নিতে পারেননি। কিন্তু আমি লক্ষ্যে স্থির ছিলাম, তাই বাড়িতে শুধুমাত্র টেক্স বই পড়েই কোচিং ছাড়াই নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছি।’
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।