Bangladeshi Islamists: শিক্ষিত সমাজে প্রভাব বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসা দুই হুত জঙ্গি!...
এ রাজ্যে ঢুকে পড়েছে দুই হুটি জঙ্গি। প্রতীকী ছবি।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বৈধ ভিসা নিয়ে বাংলাদেশ থেকে এ রাজ্যে চলে এসেছে নিষিদ্ধ ইসলামী জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীর (হুত) দুই সন্ত্রাসবাদী (HuT Operatives)। একজন সাব্বির আমির, অন্যজন রিদওয়ান মানুফ। গত ৩০ মে তারা ঢুকে পড়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্যে। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, এই দুই হুত জঙ্গি এ রাজ্যে ঢুকে নিয়োগ করছে (Bangladeshi Islamists) ছাত্র ও তরুণদের।
এর পাশাপাশি তারা পশ্চিমবঙ্গ ও পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলিতে প্রতিষ্ঠা করছে জঙ্গি মডিউল। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি এই মর্মে সতর্কতা জারি করেছে। গত কয়েক মাসে তারা পশ্চিমবঙ্গের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ছোট ছোট ছাত্র সমাবেশে বক্তৃতাও দিয়েছে। নিয়োগের চেষ্টা করেছে তরুণদের। ওই দুই হুত জঙ্গিকে খুঁজে বের করতে পশ্চিমবঙ্গ, অসম, বিহার, ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশা পুলিশের পাশাপাশি রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা্গুলিকে নির্দেশ দিয়েছে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো। আইবির এক প্রবীণ আধিকারিক বলেন, “তারা কীভাবে ভিসা পেল, তা উদ্বেগজনক। এর মানে হয় তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড ঠিকঠাক পরীক্ষা করা হয়নি, নতুবা বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলি তাদের বিষয়ে যথাযথ তথ্য দেয়নি।”
হুত একটি বৈশ্বিক জঙ্গি সংগঠন। ১৯৫৩ সালে জেরুজালেমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর লক্ষ্য ছিল সমস্ত মুসলিম জাতিকে এক খিলাফতের অধীনে ঐক্যবদ্ধ করা। ২০০০ সালে এটি বাংলাদেশে কাজকর্ম শুরু করে। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার সরকার একে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তার পরেও গোপনে জঙ্গি কার্যকলাপ চালিয়ে যেতে থাকে হুত। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “এই দুই হুত জঙ্গি হয়তো এ বছরের মে মাসে স্থলবন্দর দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করেছে। তখন হুত ভারতে নিষিদ্ধ ছিল না বলে তাদের এ দেশে ঢোকাটা সহজ হয়েছিল।” ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ১০ অক্টোবর হুতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এর আগে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, তেলঙ্গানা ও তামিলনাড়ু থেকে কয়েকজন হুত জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
অন্যান্য ইসলামপন্থী জঙ্গি সংগঠনগুলির তুলনায় হুত অনেক বেশি বিপজ্জনক। শিক্ষিত মুসলিম মহলে এর প্রভাব বিস্তর। ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলির মতে, হুত ভারতে তাদের শাখা পরিচালনা করছে তাদের বাংলাদেশ শাখার কৌশলের মতোই। বাংলাদেশে হুত শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে অসন্তোষ, বেকারত্ব, রাজনৈতিক দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং রাষ্ট্রের দমনমূলক নীতিকে কাজে লাগিয়ে প্রভাব বিস্তার করেছে। যার জেরে অক্টোবর মাসে ঢাকার কিছু নামী স্কুলের ছাত্ররা কালো আইএস পতাকা হাতে খিলাফত প্রতিষ্ঠার দাবিতে মিছিল করেছিল।
হুত (HuT Operatives) ভারতের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষিত শ্রেণিকে লক্ষ্য করে এ দেশে ঘাঁটি গাড়ার যে কৌশল নিয়েছে, তা (Bangladeshi Islamists) ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলির মধ্যে গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। সেই কারণেই ওই দুই হুত জঙ্গির নাগাল পেতে পশ্চিমবঙ্গ ও তার পড়শি রাজ্যগুলিতে তল্লাশি চালাচ্ছেন আইবির আধিকারিকরা। এক আধিকারিক বলেন, “আমাদের কাছে রিপোর্ট আছে, এই দুই জঙ্গি শুধুমাত্র বাংলার কিছু জায়গায় ইসলাম নিয়ে সভা এবং সেমিনারের আয়োজন করেনি, কিছু কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উগ্রপন্থী করে তোলার চেষ্টাও করেছে। হুত বাংলার বিশাল মুসলিম জনগোষ্ঠী এবং পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলোর শিক্ষিত মানুষ ও ছাত্রদের টার্গেট করছে।
এই দুই হুত জঙ্গি পরিচালিত সভা ও সেমিনারগুলোর মূল বিষয় ছিল প্যালেস্তাইন ও ভারতে মুসলমানদের অবস্থা। তিনি বলেন, “এই সেমিনার ও সভার মাধ্যমে, তারা মুসলিম কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের, পেশাজীবীদের এবং শিক্ষিত সমাজের মগজধোলাই করার চেষ্টা করছে। তাদের উগ্রপন্থী করে তোলার পাশাপাশি সরাসরি হুতে যুক্ত করা অথবা ভবিষ্যতে সংগঠনকে সহায়তা করার জন্য সহানুভূতিশীল করে তোলার চেষ্টা করছে। আমরা সন্দেহ করছি যে, তারা কিছু ছাত্রকে উগ্রপন্থী করতে পেরেছে। বাংলায় ও বিহারে প্রায় ছটি হুত মডিউল গড়ে তুলেছে।”
জানা গিয়েছে, হুত-এর এই জঙ্গি রাষ্ট্রীয় ও কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজর এড়িয়ে যেতে পেরেছিল কারণ তারা নিজেদের ইসলামি পণ্ডিত হিসেবে পরিচয় দিয়েছিল। আইবির ওই আধিকারিক বলেন, “বাংলায় তাদের পৃষ্ঠপোষকেরা তাদের ইসলামি পণ্ডিত হিসেবে পরিচয় দিয়েছে। তারা খুবই কৌশলীভাবে কাজ করেছে। তারা আগ্রাসী বক্তৃতা দেয় না। খুব নরম ভাষায় ইসলাম বিপদের মুখে আছে এবং ভারতে মুসলমানরা নির্যাতিত হচ্ছে এই বিষয়টি শ্রোতাদের মাথায় ঢোকানোর চেষ্টা করে (Bangladeshi Islamists)। তারা শ্রোতাদের মধ্যে কারা তাদের বিদ্বেষমূলক এবং ‘ভিক্টিমহুডে’র বয়ান গ্রহণ করছে সেদিকে নজর রাখে। এরপর তারা ওই ব্যক্তিদের টার্গেট করে, জিহাদি মতাদর্শে পরিচিত করায় এবং শেষমেশ তাদের সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত করে।”
এই দুই হুত (HuT Operatives) জঙ্গি যারা সংগঠনের কৌশল এবং নিয়োগ বিভাগে কাজ করে, তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা ও অসমের মুসলিম ছাত্রদের প্রোফাইল অনুসন্ধান করছে। যারা সামান্য ইসলামি ঝোঁকও দেখায়, তাদের সঙ্গেই যোগাযোগ করে অনলাইনে উগ্রপন্থী করার চেষ্টা করছে তারা। আইবির ওই কর্তা বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ এমন একটি ঘটনার সূত্র ধরে এই দুই হুত কর্মীর উপস্থিতি আবিষ্কার করেছে।” প্রসঙ্গত, এই হুত-ই বাংলাদেশে হিন্দু ও ধর্মনিরপেক্ষ মুসলমানদের টার্গেট করছে এবং তাদের হত্যাও করছে।
আরও পড়ুন: “মাথায় তলোয়ার ঠেকিয়ে ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে হিন্দুদের”, বাংলাদেশ নিয়ে বিস্ফোরক রাধারমণ
জানা গিয়েছে, ঢাকার প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি হুটির একটি প্রধান কেন্দ্র। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র এবং শিক্ষক, এমনকি একজন প্রাক্তন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলরও সরাসরি এই জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বাংলায় এই দুই হুত জঙ্গির উপস্থিতির জেরে ভারতীয় নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজর ফের পড়েছে বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠনগুলির দিকে। বাংলাদেশে ডামাডোলের বাজারে এই সংগঠনগুলির চাঁইরা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকে প্রভাব বিস্তার করছে। গড়ে তুলছে মডিউল ও স্লিপার সেল।
আইবির ওই আধিকারিক বলেন, “হুত (HuT Operatives) জেএমবি বা এবিটির চেয়েও ঢের বেশি বিপজ্জনক একটি জঙ্গি সংগঠন। কারণ এর নেতৃত্ব ও সদস্যরা সবাই শিক্ষিত ও বুদ্ধিমান। কীভাবে আড়ালে থেকে কাজ করতে হয়, তা তারা ভালোই জানে। শিক্ষিত ও পেশাজীবী হওয়ায় তারা সাধারণত আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজরে আসে না।” প্রসঙ্গত, হুতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে পাকিস্তান, রাশিয়া, চিন, জার্মানি, ব্রিটেন, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া এবং বেশ কিছু আরব দেশ।
বিরোধীদের অভিযোগ, তোষণের রাজনীতি করতে গিয়ে একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের ভোটারদের তোল্লাই দিচ্ছে বাংলার তৃণমূল সরকার। ‘উদারীকরণে’র সেই আবহে নানা ছলে এ রাজ্যে ঢুকে পড়ছে জঙ্গিরা (HuT Operatives)। বিভিন্নভাবে (Bangladeshi Islamists) যার মাশুল গুণতে হচ্ছে দেশবাসীকে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।