শনিবার খুন হন বিজেপি কর্মী অসীম সাহা
অসীম সাহার মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে (নিজস্ব চিত্র)
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বস্ত্র ব্যবসায়ী তথা বিজেপি কর্মী অসীম সাহা হত্যার (BJP Murder) ঘটনায় উত্তপ্ত ইসলামপুর। রবিবার বিজেপি কর্মীর মৃতদেহ হাইজ্যাকের অভিযোগ উঠল পুলিশ ও ব্যবসায়ী সমিতির বিরুদ্ধে। খুনের ঘটনা সামনে আসতেই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে বিজেপি নেতৃত্ব। শনিবার ইসলামপুরে ৩১ নং জাতীয় সড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে পথ অবরোধ করেন তাঁরা। ঘটনাস্থলে পুলিশ এলে পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন বিজেপির নেতা-কর্মীরা। শনিবার রাতে বিজেপির দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রবিবার ১২ ঘণ্টা ইসলামপুর বনধের ডাক দেয় বিজেপি নেতৃত্ব। এদিকে রবিবার সকাল থেকেই কোনও রকম অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, সে কারণে গোটা ইসলামপুর জুড়ে মোতায়েন ছিল বিরাট পুলিশ বাহিনী। বিজেপির জেলা সহ সভাপতি সুরজিৎ সেন জানান, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা, দিনে-দুপুরে এভাবে অসীমের খুনের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ১২ ঘণ্টা বনধ ডাকা হয়েছে। এই বনধে কোনওরকম পিকেটিং করা হয়নি।
অপরদিকে, তৃণমূল জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়াল বলেন, ‘‘অসীমের মৃত্যুর (BJP Murder) ঘটনা আকাঙ্ক্ষিত নয়। তবে এর সঙ্গে রাজনৈতিক কোনও যোগ নেই। কারণ অসীম কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। যদি যুক্ত থাকত তাহলে কোনও না কোনও রাজনৈতিক মঞ্চে তাকে দেখা যেত। আর যে এই ঘটনায় অভিযুক্ত, তার সঙ্গেও কোনও রাজনৈতিক যোগ নেই। বিজেপি মিথ্যা অভিযোগে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টা করছে বলে দাবি করেন তিনি।
পরবর্তী সময়ে, কোচবিহার থেকে মৃত অসীম সাহার (BJP Murder) বাবা তপনকুমার সাহা তাঁর স্ত্রী এবং মেয়েকে নিয়ে ইসলামপুরে আসেন। তিনি মহঃ তফিক ও মহঃ সাহিল সহ তাদের সহযোগীদের নামে ইসলামপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর ছেলেকে যারা খুন করেছে তাদের শাস্তি হোক। তবে ছেলে কোনও দলের সাথে যুক্ত কিনা, তা তিনি জানেন না।
যদিও বিজেপির সহ সভাপতি সুরজিত সেন সহ কর্মীরা তাদের সঙ্গে নিয়ে থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরবর্তী সময়ে তাঁদের দলীয় কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। অপরদিকে, নর্থ বেঙ্গল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর অসীম সাহার মৃতদেহ (BJP Murder) নিয়ে শিলিগুড়ি থেকে ইসলামপুর অভিমুখে রওনা দেন তাঁর মামা রতন সাহা ও বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা। বিজেপির দলীয় কার্যালয়ে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর বন্দোবস্ত করা হয়। যদিও ইসলামপুর আসার সময় শ্রীকৃষ্ণপুর এলাকায় পুলিশ এবং ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যরা গাড়ি আটকে মৃতদেহ সরাসরি বাড়িতে নিয়ে যায়। বিজেপি কর্মীদের অভিযোগ, মৃত অসীম সাহাকে শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য প্রথমে ইসলামপুরে বিজেপির দলীয় কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও, মৃত অসীমের মামাকে ভয় দেখিয়ে তৃণমূলের মদতপুষ্ট ব্যবসায়ী সংগঠনের কিছু সদস্য এবং ইসলামপুর থানার পুলিশ কার্যত 'হাইজ্যাক' করে মৃতদেহ (BJP Murder) নিয়ে যায়। মৃতদেহ তাঁর মামাবাড়িতে নিয়ে আসা হলে শোকের ছায়া নেমে আসে গোটা এলাকায়। অসীমের মা-বাবা এবং বোনকে দলীয় কার্যালয় থেকে তার মামা বাড়িতে নিয়ে আসে বিজেপি নেতৃত্ব। অপরদিকে, ঘটনাস্থলে তৃণমূলের জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়ালও পৌঁছান।
বিজেপির শহর সভাপতি জ্যোতির্ময় শেঠ বলেন, ‘‘নিহত অসীম সাহা আমাদের কর্মী ছিলেন। তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল জেলা কার্যালয়ে। সেখানে তাঁর মা-বাবা-বোনও ছিল। কিন্তু পুলিশ প্রশাসন এবং তৃণমূলের মদতপুষ্ট ব্যবসায়ী সমিতির কিছু সদস্য তার মামাকে ভয় দেখিয়ে সেখানে যেতে দেয়নি। আমরা খবর পেয়ে তার মা-বাবা ও বোনকে মামাবাড়িতে নিয়ে এসেছি। পুলিশ প্রশাসন এত কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে আমাদের কর্মীর মৃতদেহ সৎকারের জন্য, এমনটা যদি পঞ্চায়েত নির্বাচনে করত তাহলে অনেক ভাল হত।’’ অপরদিকে তৃণমূলের জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়াল বলেন, ‘‘শেষ শ্রদ্ধা (BJP Murder) জানাতে এসেছি। এটা কোনও রাজনৈতিক মঞ্চ নয়। তাই এ বিষয়ে এখন কোনও মন্তব্য করবো না।’’ এই ঘটনাকে ঘিরে রাজনৈতিক টানাপোড়েনে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়েছে গোটা ইসলামপুর জুড়ে। তবে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনায় অভিযুক্ত মহঃ সাহিলকে ইতিমধ্যেই ইসলামপুর মহকুমা আদালতে পেশ করা হয়েছে এবং তাকে ৮ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।