শুক্রবার পর্যন্ত ইডির হেফাজতে, তার আগে আড়াই দিনে যতটা সম্ভব জিজ্ঞাসাবাদ সেরে ফেলতে চাইছেন অফিসাররা।
অনুব্রত মণ্ডল।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: হোলির দিন ইডির জেরায় ক্লান্ত অনুব্রত (Anubrata Mondal)। সূত্রের খবর, বুধবার দুপুরে যখন তদন্তকারী আধিকারিকরা লম্বা প্রশ্নপত্র নিয়ে টানা জেরা করছেন বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতিকে-তখন কেষ্ট কার্যত ভেঙে পড়েন। ইডি-র স্পেশাল ডিরেক্টর, দাপুটে আইপিএস সনিয়া নারাংয়ের নেতৃত্বে ছ'জন আধিকারিকের বিশেষ দল প্রশ্নপত্রের সঙ্গেই অনুব্রতর সামনে তুলে ধরেন তাঁর মেয়ে সুকন্যা মণ্ডল, বীরভূমের একটি ট্রাস্টের কর্তা মলয় পীঠ এবং একদা তাঁর ঘনিষ্ঠ দেহরক্ষী সায়গল হোসেনের বয়ান। আজ, বৃহস্পতিবার সকালে কেষ্টর সঙ্গে তাঁর আইনজীবীরা কথা বলতে পারেন বলে জানা গিয়েছে।
বিচারক রাকেশ কুমার অনুব্রতকে (Anubrata Mondal) তিন দিনের জন্য ইডি হেফাজতে রেখে শুক্রবার ফের আদালতে হাজির করানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। অনুব্রতদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাঁর কোনও এক জন আইনজীবী ইডি দফতরে হাজির থাকবেন। যদিও তিনি কোনও কথাবার্তা শুনতে পাবেন না। ইডির তরফে বিচারককে জানানো হয়েছিল, এই মামলায় ৩-৪ জন অভিযুক্তকে আগেই গ্রেফতার করা হয়েছে। যারা এখন জেলে। চার্জশিটও দায়ের হয়েছে।
গরু পাচারে যে কোটি কোটি টাকার বেআইনি লেনদেন হয়েছে, তার সঙ্গে অনুব্রতের (Anubrata Mondal) যোগ নিয়ে তদন্তকারীরা চেপে ধরতে একটা সময়ে ছলছলে চোখে ভেঙে পড়েন কেষ্ট। ইডি সূত্রের খবর, তিনি বারবার তদন্তকারীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন- তিনি নির্দোষ। ইডি-র আধিকারিকরা অনুব্রতর কাছ থেকে মূলত কয়েকটি প্রশ্নের নির্দিষ্ট উত্তর চাইছেন। তা হল, বীরভূমের ইলামবাজারের হাট থেকে গরু বেআইনি ভাবে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পার করে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কাকে, কী অঙ্কের প্রোটেকশন মানি বিভিন্ন স্তরে দেওয়া হতো? তা কি কেষ্টই ঠিক করতেন? পাচারের কোটি কোটি টাকা কোথায় কোথায় সরানো হয়েছে? বহু সাধারণ মানুষের নামে অ্যাকাউন্ট খুলে যে আর্থিক লেনদেন করা হয়েছে, সে সব কি অনুব্রতরই মস্তিষ্কপ্রসূত? এই জেরাপর্বে ইডির আধিকারিকদের কাছে বড় হাতিয়ার ছিল সুকন্যা, সায়গল, মলয়ের বয়ানের পাশাপাশি বীরভূমের বেশ কয়েকটি চালকলের মালিক, ব্যবসায়ীদের বক্তব্যও- যাঁদের সঙ্গে এর আগে বিভিন্ন সময়ে কথা বলেছেন তদন্তকারীরা। কয়েকজন চালকল-কোল্ড স্টোরেজ মালিক, ব্যবসায়ীর কথা তদন্তকারীরা বললেও তাঁদের চিনতে অস্বীকার করেন কেষ্ট।
আরও পড়ুন: ভাবাদিঘিকে বাঁচাতে একজোট গ্রামবাসীরা, থমকে তারকেশ্বর-বিষ্ণুপুর রেলপথ সংযোগের কাজ
বুধবার, বেলা ১১টা থেকে ঘণ্টাখানেক তাঁর সঙ্গে একপ্রস্ত কথা বলেন তদন্তকারীরা। আদালতের নির্দেশে এদিন ফের রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতালে তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়। প্রথমে তদন্তকারীদের বেশির ভাগ প্রশ্নে নিরুত্তরই ছিলেন। তদন্তকারীরা এদিন কেষ্টর কাছ থেকে নথিপত্র দেখিয়ে এ-ও জানতে চান, কীভাবে বছরের পর বছর তাঁর আয় ও সম্পত্তি বেড়েছে? পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা, এমনকী দিল্লি, গাজিয়াবাদ-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যে সব সম্পত্তির হদিশ মিলেছে, তার সঙ্গে তাঁর বা তাঁর পরিবার-পরিচিত-ঘনিষ্ঠদের কী যোগ- তাও জানতে চাওয়া হয়। ইডি মূলত জানার চেষ্টা করছে গরু পাচারের মানি-ট্রেল, অর্থাৎ টাকা কোথায়, কী ভাবে সরানো হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতিকে রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টে তোলা হবে। সেখানে ইডি ফের অনুব্রতকে নিজেদের হেফাজতে নিতে চাইবে। তার আগে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত আড়াই দিনে যতটা সম্ভব জিজ্ঞাসাবাদ সেরে ফেলতে চাইছেন ইডি-র অফিসাররা। তার জন্য ইডি-র স্পেশাল ডিরেক্টর সনিয়া নারাং, অ্যাস্টিট্যান্ট ডিরেক্টর পঙ্কজ কুমারের নেতৃত্বে দল তৈরি হয়েছে। অনুব্রতের শারীরিক অবস্থা নিয়ে ইতিমধ্যেই তাঁর আইনজীবীরা প্রশ্ন তুলে রেখেছেন। ইডি-র হেফাজতে থাকার সময় তৃণমূল নেতার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তার দায় তদন্তকারীদের উপরে এসে পড়তে পারে। তাই পুরো জিজ্ঞাসাবাদের পর্বই ভিডিয়ো রেকর্ডিং করে রাখা হচ্ছে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।