বাতানাল গ্রামের গাজন উৎসবে ইংল্যান্ড, রাশিয়া, আমেরিকা ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু বিদেশি আসেন
আরামবাগের গাজন উৎসবের ছবি। নিজস্ব চিত্র
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: গাজন উৎসবে (Gajan Festival) মাতোয়ারা আরামবাগ মহকুমার বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার নীলষষ্ঠীর পুজোর দিন থেকেই আরামবাগের মইগ্রাম, বাতানল, নারায়ণপুর, খানাকুলের ঘন্টেশ্বর ছাড়াও পুরশুড়া ও গোঘাটের বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী গাজন উৎসব। কয়েকশো বছরের পুরনো মইগ্রাম, বাতানল ও খানাকুলের ঘন্টেশ্বরে শিবের গাজনে অগণিত ভক্তের ঢল নেমেছে। উল্লেখযোগ্যভাবে এখানে মহিলারাও সন্ন্যাসী হন। পাশাপাশি চলে বাণ ফোঁড়া। কেবলমাত্র পুরুষরাই বাণ ফোঁড়েন, তেমনটা নয়, মহিলারাও বাণ ফুঁড়ে শিবের আরাধনা করেন।
এই বাণ ফোঁড়া দেখতে শুক্রবার সকাল থেকেই অসংখ্য মানুষের ভিড় জমে ওঠে বাতানল, মইগ্রাম ও ঘন্টেশ্বরের গাজন উৎসবে (Gajan Festival)। তবে আরামবাগের বাতানাল গ্রামের রাত গাজন হল খুবই বিখ্যাত। বহু প্রাচীনকাল থেকেই এই বাতানাল গ্রামের বুড়ো শিবের রাত গাজন দেখতে বহু দূর-দূরান্ত থেকে অগণিত শিবের ভক্ত ও বিদেশি পর্যটক এখানে উপস্থিত হন। এছাড়াও দিনের বেলা দিন গাজনেও প্রচুর বিদেশি পর্যটক আসেন এই গাজনের দিনে। অন্যান্য জায়গার থেকে বাতানাল গ্রামে শিবের গাজন হল প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী। ইংল্যান্ড, রাশিয়া, আমেরিকা ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু বিদেশি আসেন। শুধু তাই নয়, আরামবাগের মুইগ্রাম এলাকাতেও বহু বিদেশি পর্যটকের আগমন ঘটে।
মইগ্রামের গাজন উৎসব (Gajan Festival) কমিটির সম্পাদক সুজয় চক্রবর্তী বলেন, নীলষষ্ঠী ও গাজন উৎসবের পৌরাণিক ইতিহাস সবার জানা। শিবকে সন্তুষ্ট করতেই এই গাজন। ভক্তরা নিজেদের উপর শারীরিক অত্যাচার করে শিবের ধ্যান ভঙ্গ করেন। এলাকা ছাড়া দূরদূরান্তের মানুষ উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গেই মইগ্রামে গাজন দেখতে ভিড় জমান। সব মিলিয়ে বলা যায়, আরামবাগ মহকুমার বাসিন্দারা এখন গাজন উৎসবে মেতে উঠেছেন।
গবেষকদের মতে, গা শব্দের অর্থ হল গ্রাম। এবং জন মানে জনগণ। বিশ্বাস মতে, এই সময় হর কালীর বিবাহ হয়েছিল। শিব হলেন জনগণের দেবতা। গ্রামের জনগণ সবাই দেবতার বিয়েতে বরযাত্রী যাওয়ার উদ্দেশে সমবেত হন। আবার অন্য একটি মত হল, গাজন (Gajan Festival) শব্দটি এসেছে ‘গর্জন’ থেকে। অনেকে বলেন, সন্ন্যাসীদের হুঙ্কারই শিবসাধনায় গাজন নামে প্রচলিত হয়। বাংলার মঙ্গলকাব্যেও গাজনের উল্লেখ মেলে। ধর্মমঙ্গল কাব্যে রাণী রঞ্জাবতী ধর্মকে তুষ্ট করতে গাজন (Gajan Festival) পালন করেছিলেন বলে উল্লেখ রয়েছে। গাজন বা চরক শুধুই শিবের আরাধনা হলেও এই উৎসব পালিত হয় ধর্মরাজকে ঘিরেও। আর দুই দেবতার পুজোতেই জাতপাতের ভেদাভেদ ভেঙে যে কেউ অংশ নিতে পারে। এটাই বাংলার সংস্কৃতি।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।