Tribeni: কোন মুসলিম শাসন কর্তার আমলে ত্রিবেণীর কুম্ভ মেলা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল?
ত্রিবেণীতে কুম্ভমেলায় স্নান (ফাইল ছবি)
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: কুম্ভ মানেই চোখের সামনে যে ছবিটা ভেসে ওঠে সেটা প্রয়াগের। তবে জানলে অবাক হবেন এই বাংলাতে এবারও কুম্ভ মেলার (Bengal Kumbha Mela 2025) আয়োজন করা হচ্ছে। আয়োজকদের দাবি, হারিয়ে যেতে বসা 'ইতিহাস'কে ফের মানুষের সামনে ফিরিয়ে আনার সবরকম চেষ্টা করা হচ্ছে। আয়োজকরা জানিয়েছেন, মন কী বাতে খোদ দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলার এই কুম্ভ মেলার কথা উল্লেখ করেছিলেন। আর এই কুম্ভমেলার পুরানো ঐতিহ্য রয়েছে। বাংলায় মুসলিম আক্রমণের আগে এই মেলার বাংলার মানুষ তথা দেশের মানুষের কাছে আলাদা গুরত্ব ছিল। এই ত্রিবেণীর সঙ্গমে স্নান করার জন্য সাধু-সন্তদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের ভিড় উপচে পড়ত। প্রায় ৭০০ বছর পর আবার সেই ত্রিবেণীতে শুরু হয়েছে পুণ্যস্নান।
ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, প্রাচীনকালে ঋষিরা আধ্যাত্মিক সাধনা ও মুক্তিলাভের জন্য ত্রিবেণীতে (Bengal Kumbha Mela 2025) আসতেন। ৭০৩ বছর পর গঙ্গার আরও উপনদী, যমুনা এবং সরস্বতী (কুন্তি) সঙ্গমে আবার কুম্ভমেলার আয়োজন করা হয়েছিল। ৭০৩ বছর আগে জাফর খান গাজি ত্রিবেণীর (Tribeni) বিষ্ণু মন্দিরকে মসজিদে রূপান্তরিত করেন। সেই সময় থেকে ইসলামি আক্রমণের কারণে কুম্ভস্নান ও মেলা বন্ধ হয়ে যায়। ১৩১৯ সালের পর ২০২২ সালে ত্রিবেণীতে খুব আনন্দের সঙ্গে একটি কুম্ভস্নানের আয়োজন করা হয়েছিল। এই ত্রিবেণী হল 'মুক্ত বেণী' (মুক্ত প্রবাহ) এবং প্রয়াগ হল 'গুপ্ত বেণী' (গোপন প্রবাহ)।
আরও পড়ুন: দলিত পরিবারকে ইসলামে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা! ৫ জন গ্রেফতার
রঘুনন্দনের প্রায়শ্চিত্ত তত্ব গ্রন্থে ত্রিবেণীর (Bengal Kumbha Mela 2025) উল্লেখ পাওয়া যায়। ইতিহাসের বিভিন্ন দলিল থেকে জানা যায়, সপ্তগ্রাম ও ত্রিবেণী শিক্ষা ও সংস্কৃতির তীর্থভূমি ছিল। জানা যায়, উত্তরে প্রয়াগ রয়েছে এলাহাবাদে। দক্ষিণে প্রয়াগ রয়েছে এই ত্রিবেণীতে। বিভিন্ন সাধু- সন্তর কথায়, এটাই কুম্ভের উপযুক্ত স্থান। মঙ্গলকাব্য, বৈষ্ণব সাহিত্য, শাক্ত সাহিত্য, সাধারণ বাংলা সাহিত্যেও এর উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু সেই ঐতিহ্য হারিয়ে গিয়েছিল কালের গর্ভে। কিন্তু বিশেষ বিশেষ দিনগুলিতে বহু মানুষ আসেন এই ত্রিবেণীঘাটে। বিভিন্ন গবেষণায় জানা যায় এই কুম্ভস্নান ও মেলার কথা। বাংলা সাহিত্য ও কাব্যের মধ্যে তো এর উল্লেখ আছেই। ১৯৭৯ সালে এক বিদেশিনী এলান মরিনিসের (Alan Morinis) অক্সফোর্ডে জমা দেওয়া এক তথ্য থেকে এই কুম্ভের কথা জানা যায়।
ইতিহাসবিদ অশোক গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "ত্রিবেণী কুম্ভ মেলার (Bengal Kumbha Mela 2025) সঙ্গে গঙ্গাসাগর মেলার একটা যোগ ছিল। তৎকালীন সাধু-সন্তরা, গঙ্গাসাগর মেলা শেষ হওয়ার পর পদব্রজে ত্রিবেণীতে আসত। মাঘ সংক্রান্তির দিন তাঁরা এখানে স্নান করতেন। এই দিনটাকেই অনুকুম্ভ হিসেবে ধরা হত ত্রিবেণীতে। সপ্তগ্রাম ও ত্রিবেণী শিক্ষা ও সংস্কৃতির তীর্থভূমি ছিল। পরবর্তীকালে মুসলিম আক্রমণের ফলে এখানকার মন্দির এবং তীর্থস্থান নষ্ট হয়ে যায়। পন্ডিতরা এখান থেকে চলে যান। ত্রিবেণী যেহেতু গঙ্গার মুক্তবেণী, সেই কারণে এই জায়গাটার আলাদা গুরুত্ব ছিল।"
২০২২ সালে এই কুম্ভস্নান (Bengal Kumbha Mela 2025) ফের শুরু হয়েছিল। তারপর থেকে প্রতি বছর এই কুম্ভ স্নানের আয়োজন করা হচ্ছে। চলতি বছরের আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে এই বঙ্গীয় কুম্ভ স্নানের আয়োজন করা হবে। আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই কুম্ভ স্নান চলবে। হুগলি জেলার ত্রিবেণীর সপ্তর্ষি ঘাটে হবে এই কুম্ভ স্নান। আয়োজকদের দাবি, হাজার জনের বেশি সাধু আসবেন এবার। তার মধ্যে ২০০জনের বেশি নাগা। হুগলি জেলার ত্রিবেণীর সপ্তর্ষি ঘাটে হবে এই মহাকুম্ভ স্নান। ১৫ লাখের বেশি মানুষ বাংলার এই মহাকুম্ভে এবার স্নান করবেন বলে আশা আয়োজকদের।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।