Avik Dey: তদন্ত কমিটির কাছে বর্ধমান মেডিক্যালে অভীক বাহিনীর কুর্কীতি ফাঁস...
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ, অভীক দে (ইনসেটে) (সংগৃহীত ছবি)
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আরজি কর কাণ্ডে ধৃত সন্দীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ অভীক দে (Avik Dey) এবং তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের কুকীর্তি প্রকাশ্যে এসেছে। যা জানলে বোঝা যাবে, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে (Burdwan Medical) অভীক ও তাঁর বাহিনীর দাপট কতটা ছিল। তাঁর দাপটে জুনিয়র ডাক্তাররা ভয়ে সিঁটিয়ে থাকতেন। বিশেষ করে ডাক্তারি পড়়ুয়া ছাত্রীদের সঙ্গে যে আচরণ করা হত, তা শুনলে চোখ কপালে উঠবে। আনন্দ বাজারে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, অভীকদের রাতভর পার্টি চলত। ছুটত মদের ফোয়ারা। সেখানেই, ছাত্রীদের জোর করে ডাকা হত। তাদের দিয়ে পরিবেশন করা হত। এমনকী, তাদের বলা হত, মনোরঞ্জন করতে!
দুর্নীতি, দাদাগিরি, তোলাবাজি, 'থ্রেট কালচার'-সহ একাধিক অভিযোগে বিদ্ধ অভীক। তিনি ছিলেন বর্ধমান মেডিক্যালে আরএমও। পরে, সার্ভিস কোটা এসএসকেএমে সার্জারি বিভাগে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি হন। আরজি কর কাণ্ডের জেরে তাঁকে এসএসকেএম থেকে সাসপেন্ড করা হয়। পাশাপাশি কলেজ ও হস্টেলে ঢোকায় জারি হয় নিষেধাজ্ঞা।
আরও পড়ুন: তিরুপতির প্রসাদ লাড্ডুতে পশু চর্বি! হিন্দু ভাবাবেগে আঘাত, সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা
আনন্দবাজারে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি অভীকের কাজকর্ম খতিয়ে দেখতে গঠিত হয়েছে চার সদস্যের কমিটি গঠিত হয়। কমিটির কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগে জানা গিয়েছে, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের প্রশাসনিক ভবনের ওপরের তলায় কলেজের গেস্ট হাউস। সেখানে তিন- চারটি ঘর পাকাপাকি ভাবে কব্জায় ছিল অভীক দে ও তাঁর ডান হাত হিসেবে পরিচিত বর্ধমানের চিকিৎসক (Burdwan Medical) বিশাল সরকার ও উমর ফারুখের জন্য। সেখানে রাতভর চলত পার্টি, মদ্যপান। সেখানে হস্টেল থেকে প্রথম, দ্বিতীয় বর্ষের ডাক্তারি ছাত্রীদের জোর করে এবং ভয় দেখিয়ে ডেকে আনা হত। তাঁদের দিয়ে খাবার ও মদ পরিবেশন করানো হত। এমনকী অতিথিদের মনোরঞ্জনের নির্দেশও দেওয়া হত বলে অভিযোগ। নির্দেশ না মানলে পরীক্ষায় বসতে না দেওয়া এবং রেজিস্ট্রেশন আটকানোর হুমকি দেওয়া হত। ২০২২-২৩ সালের ছাত্রীরা সেই পার্টিতে যাওয়ার নির্দেশ না মানায় অভীক-সঙ্গী বিশাল ওই ব্যাচের পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ।
আনন্দবাজারের তথ্য অনুযায়ী, তদন্ত কমিটির কাছে যে লিখিত অভিযোগ এসেছে তাতে বলা হয়েছে, মেডিক্যাল (Burdwan Medical) পড়ুয়াদের ব্যক্তিগত ফোন নম্বর জোর করে নিজেদের কাছে রাখতেন অভীক। তার পরে সেই নম্বর চলে যেত 'রাজনৈতিক প্রভাবশালী'দের কাছে। এমনকী রাতে তাঁদের সঙ্গ দিতে ডাক পড়ত সেই শিক্ষানবিশদের। সম্মত না হলে চলত ভয় দেখানো, হেনস্থা এবং পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকি- এমনই লিখিত অভিযোগ গিয়েছে তদন্তকারীদের কাছে। বহু ছাত্রী তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছেন, সরস্বতী পুজোর আগে বেছে বেছে ছাত্রীদের ডেকে বলা হত, পুজোর দিন অভীকের ঘনিষ্ঠ সিনিয়রদের সঙ্গিনী হয়ে ঘুরতে হবে। সাত দিনের মধ্যে কমিটিকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু কমিটিতে এত বিপুল চিঠি, তথ্য জমা পড়ছে যে, রিপোর্ট দিতে আরও ১৪ দিন সময় চেয়েছেন তাঁরা।
কমিটির তদন্তে এ-ও জানা গিয়েছে যে, নিয়মিত বর্ধমানের (Burdwan Medical) মর্গ থেকে মৃতদেহের ভিসেরা ও হাড় ৭ থেকে ১৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিহার, উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে পাচার করা হত এবং এর পিছনেও ছিল অভীক বাহিনী। বর্ধমান মেডিক্যালের অধ্যক্ষ মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, "তদন্ত কমিটির কাজ চলছে। তাদের যা জানানোর জানাচ্ছি। এর বাইরে কিছু বলা যাবে না।”
আনন্দবাজারের প্রতিবেদন অনুয়ায়ী, পরীক্ষায় কারা গার্ড দেবেন সেই তালিকাও অভীকের তত্ত্বাবধানে ঠিক করতেন চিকিৎসক বিশাল ও অমলেন্দু দাস। বর্ধমানের (Burdwan Medical) এক চিকিৎসক তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছেন, তিনি অভীক বাহিনীর কথা শোনেননি বলে প্রতি বর্ষে এক বার করে তাঁকে ফেল করানো হয়েছে। চূড়ান্ত হতাশ হয়ে তিনি আত্মহননের চেষ্টাও করেছিলেন। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ সূত্রের খবর, অভীকের ঘনিষ্ঠ বিশাল ২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের মেডিক্যালের শিক্ষানবিশ ছাত্রীদের অশালীন মেসেজ পাঠাতেন, রাতে ঘরে ডেকে পাঠাতেন ও ঘুরতে যেতে চাপ দিতেন। পরীক্ষার হলে ছিল তাঁর অবাধ গতিবিধি। পছন্দের ছাত্রছাত্রীদের কাছে গিয়ে উত্তর বলে দিতেন প্রকাশ্যেই। কারা কারা অনার্স পাবে সেটাও অভীক, বিশাল ও অমলেন্দু কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসে ঠিক করতেন বলে অভিযোগ জমা পড়েছে। ২০১৯-২০ এবং ২০২২-২৩ বর্ষের বহু মহিলা চিকিৎসকের অভিযোগ, অমলেন্দু তাঁদের রাতে কলেজের গেস্ট হাউসে ডাকতেন, মোবাইলে অশালীন মেসেজ পাঠাতেন। এ ব্যাপারে জানতে বিশালকে বহু বার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। আর অমলেন্দু বলেন, "এই সবই মিথ্যা অভিযোগ, চক্রান্ত।”
গত লোকসভা ভোটে অভীক-বাহিনী বর্ধমান মেডিক্যালের (Burdwan Medical) সুপারের ঘরে পূর্ব বর্ধমানের তৃণমূল প্রার্থী চিকিৎসক শর্মিলা সরকারের নির্বাচনী সভার আয়োজন করেছিল এবং সেখানে সব জুনিয়রের উপস্থিত থাকার ফতোয়া দিয়েছিল বলেও অভিযোগ জমা পড়েছে। সন্দীপ ঘোষকে আরজি কর থেকে বদলির পরে বর্ধমান থেকে বহু ছাত্রছাত্রীকে অভীক তাঁর সঙ্গীরা জোর করে কলকাতায় নিয়ে গিয়ে বিক্ষোভ-মিছিল করতে বাধ্য করেছিলেন বলেও অভিযোগ পেয়েছে কমিটি।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।