গরুপাচারের বিপুল টাকা লুকিয়ে রাখতে ঘনিষ্ঠদের ব্যবহার করেছিলেন অনুব্রত মণ্ডল।
অনুব্রত মণ্ডল।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: গরু পাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mondal) বিরুদ্ধে ২০৩ পাতার চার্জশিট পেশ করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট তথা ইডি (ED)। ইডি গত ৬ মার্চ অনুব্রতকে দিল্লিতে নিজেদের হেফাজতে পেয়েছিল। তার ৫৯-তম দিনের মাথায় চার্জশিট দায়ের করেছে ইডি। সেই সঙ্গে দু’টি খণ্ডে তথ্যপ্রমাণ-সম্বলিত ৯০০ পৃষ্ঠার নথিও জমা দিয়েছে ইডি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাখিল করা চার্জশিটে আরও বিপাকে পড়েছেন তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতা অনুব্রত।
বৃহস্পতিবার দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালতে জমা পড়া তৃতীয় অতিরিক্ত চার্জশিটে ইডি দাবি করল, লটারি কেটে নয়, লটারির পুরস্কারপ্রাপকদের কাছ থেকে টাকা দিয়ে টিকিট কিনে নিতেন অনুব্রত। এ ভাবেই ২ কোটি টাকার পুরস্কার পাওয়ার আড়ালে কালো টাকা সাদা করা হয়েছে। ইডির চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে যে, অনুব্রত জেরায় জানিয়েছেন, তিনি এবং কন্যা সুকন্যা মোট ১০-১২ বার লটারি জিতেছেন। তার মধ্যে ২০১৮ সাল থেকে ৫-৬ বার লটারিতে পুরস্কার জিতেছে তাঁর পরিবার। আদালতে জমা পড়া চার্জশিটে কেন্দ্রীয় এজেন্সি দাবি করেছে, অনুব্রত এবং তাঁর কন্যা সুকন্যা আসল পুরস্কারপ্রাপকদের কাছ থেকে অনেকগুলি লটারির টিকিট কিনে নিয়েছিলেন। যে লটারিগুলিতে পুরস্কার উঠেছিল। ইডির দাবি, তদন্তে উঠে এসেছে, বোলপুরের লটারি বিক্রয়কেন্দ্র গাঙ্গুলি লটারি এজেন্সির সঙ্গে অনুব্রত বিশ্বজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাধ্যমে বোঝাপড়া করে নিয়েছিলেন।
অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সায়গল হোসেনের ফোন ব্যবহার করেই গরুপাচারের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন অনুব্রত। বৃহস্পতিবার দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালতে চার্জশিট পেশ করে এমনই জানিয়েছে ইডি। এমনকী ওই ফোনের ২টি নম্বর দিয়েই যে গরুপাচারকারী এনামুল হক ও আবদুল লতিফ অনুব্রতর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন আদালতে তারও প্রমাণ পেশ করেছেন তদন্তকারীরা। ইডির পেশ করা চার্জশিটে জানানো হয়েছে, অনুব্রত নিজে কোনও মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন না। তিনি সায়গল হোসেনের ২টি নম্বর ব্যবহার করে সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। চার্জশিটের সঙ্গে ২০১৭ সাল থেকে সায়গল হোসেনের ২টি ফোনের কল ডিটেইলস আদালতে পেশ করেছে ইডি।
চার্জশিটে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, গরুপাচারের বিপুল টাকা লুকিয়ে রাখতে ঘনিষ্ঠদের ব্যবহার করেছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। তাদের দিয়ে ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলিয়েছিলেন তিনি। অনুব্রতর নির্দেশে তাঁর বাড়ির পরিচারক বিদ্যুৎবরণ গায়েন, তৃণমূল কাউন্সিলর বিশ্বজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলান সায়গল। সেই সমস্ত অ্যাকাউন্টে প্রচুর নগদ জমা পড়তে থাকে। এছাড়া তৃণমূল কাউন্সিলর ওমর শেখ, তৃণমূল কর্মী অর্ক দত্ত, তাপস মণ্ডল ও শ্যামাপদ কর্মকারকে দিয়ে ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলিয়েছিলেন অনুব্রত। এমনকী এলাকার সবজি ব্যবসায়ী বিজয় রজককে দিয়ে ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলান তিনি।
আরও পড়ুন: মেয়ে সুকন্যার বয়ানই হাতিয়ার! অনুব্রতের বিরুদ্ধে ২০৩ পাতার চার্জশিট পেশ ইডির
ইডি জানিয়েছে, জেরায় অভিযুক্তরা জানিয়েছে, অনুব্রতর নির্দেশে সায়গল হোসেন তাদের অ্যাকাউন্ট খুলতে সাহায্য করেন। তবে সেই অ্যাকাউন্টের পাশবই, চেকবই ও ক্রেডিট কার্ড অনুব্রতর কাছেই থাকত। অনুব্রত ইচ্ছামতো সেই টাকা খরচ করতেন বা কাউকে পাঠাতেন। এব্যাপারে বিন্দু বিসর্গ জানেন না তাঁরা। চার্জশিটে ইডি জানিয়েছে, জেরায় অনুব্রতর মেয়ে সুকন্যাও একই কথা জানিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, আর্থিক লেনদেনের ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। বাবা অনুব্রত মণ্ডল যেমন নির্দেশ দিতেন তেমন সই করে দিতেন তিনি।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
Tags: