নিখোঁজ ৫ শ্রমিক! দুশ্চিন্তায় বন্ধ পুজো...
পশ্চিম কৃষ্ণপুরে উৎকণ্ঠায় নিখোঁজ শ্রমিকের এক পরিবার। নিজস্ব চিত্র।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: উত্তর সিকিমের একেবারে চিন সীমান্তে ঠিকাদার সংস্থার মাধ্যমে কাজে গিয়ে দক্ষিণ দিনাজপুরের (Dakshin Dinajpur) পাঁচজন শ্রমিক এখনও পর্যন্ত নিখোঁজ। উৎকণ্ঠায় ওই পরিবারগুলিতে উনুন পর্যন্ত জ্বলছে না। তাই পুরো গ্রাম ওই পরিবারগুলির পাশে দাঁড়াতে চেয়ে, এবারে গ্রামের দুর্গাপুজো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই এবারে পুজো নেই বালুরঘাট ব্লকের বোয়ালদার গ্রাম পঞ্চায়েতের আদিবাসী অধ্যুষিত পশ্চিম কৃষ্ণপুরে।
বালুরঘাট (Dakshin Dinajpur) ব্লকের ভেরেন্ডা মোড় হয়ে বোল্লা যাওয়ার পকেট রুট ধরে এগিয়ে যাওয়ার পর, একেবারে ফাঁকা মাঠের মাঝখান দিয়ে ঢালাই রাস্তা চলে গিয়েছে, একেবারে দ্বীপের মতো পশ্চিম কৃষ্ণপুর গ্রামে। ছোট্ট ওই গ্রামে প্রতিটি বাড়ি যেন একে অপরের সাথে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বারোয়ারি কমিটির মাধ্যমে লক্ষ্মীপুজো, সরস্বতীপুজো, কালীপুজো, দুর্গাপুজোয় একসাথে ওই গ্রামের মানুষ আনন্দ করে। প্রথমে, এবারের দুর্গাপুজো ছোট করে হলেও গ্রামের সকলে একসঙ্গে মিলেমিশে আয়োজন করবে বলে ঠিক করেছিলেন। কিন্তু আচমকা সিকিমের বন্যা যেন তাঁদের সব আয়োজন লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। একই গ্রামের পাঁচ জন শ্রমিক, সিকিমের ভয়াবহ বন্যার দিনের পর থেকে নিখোঁজ হয়ে রয়েছেন। আর তাঁদের দুশ্চিন্তায় পরিবারদের খাওয়-দাওয়া প্রায় উবে গিয়েছে। সেই সঙ্গে চরম উৎকণ্ঠায় গোটা গ্রাম।
এদিন গ্রামে (Dakshin Dinajpur) গিয়ে দেখা গেল, গৃহবধূ সুজাতা বেসরার এক বছর বয়সী পুত্র সন্তানকে কোলে নিয়ে, কাঁদতে কাঁদতে প্রায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর স্বামী বোদন সরেন ও ছেলে বিক্রম সরেন একসাথে কাজে গিয়ে ছিলেন সিকিমে। দুজনেই বর্তমানে নিখোঁজ। দুশ্চিন্তায় পরিবার।
সুজাতার দিদি ছবি বেসরা বলেন, “আমাদের বাড়িতে উনুন জ্বলছে না কয়েকদিন ধরে। রাতে ঘুমায় না কেউ। শুধু কান্না করে করে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন সকলে। কিছুতেই ওঁদের বোঝানো যাচ্ছেনা। আমার একমাত্র যুবক ছেলে নয়ন মার্ডিও নিখোঁজ। তার বাবা বিষন মার্ডি যেন পাগল হয়ে গিয়েছেন।"
৮ মাসের গর্ভবতী শিউলি সরেনর স্বামী জয়ন্ত মূর্মুও নিখোঁজের। তিনি ইতিমধ্যেই শিলিগুড়ি রওনা হয়ে গিয়েছেন তাঁর স্বামীর খোঁজে। আবার পাশের বাড়ির সুজয় টুডুও নিখোঁজ। সুজয়ের স্ত্রী আরবিন সরেনও শিলিগুড়ি গিয়েছেন। গ্রামের প্রায় সব পরিবারেই উৎকণ্ঠা। ওই নিখোঁজরা ভালোভাবে ফিরে আসুন, এটাই চায় সকলে।
গ্রামের (Dakshin Dinajpur) একমাত্র সরকারী কর্মী বাবলু সরেন বলেন, “গত সেপ্টেম্বর মাসের ২২ তারিখে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন এলাকার ২৭ জন শ্রমিক একসাথে শিলিগুড়ির এক ঠিকাদার সংস্থার মাধ্যমে উত্তর সিকিমের জিরো পয়েন্ট এলাকায় কাজে গেছিল। তাঁদের সেখানে ভারতীয় সেনার হয়ে চীন সীমান্তে বাঙ্কার নির্মাণের কাজ করানো হচ্ছিল। গত ৪ অক্টোবর সিকিমের ভয়াবহ বন্যার পর থেকে সকল শ্রমিকরা নিখোঁজ। এর মধ্যে আমাদের গ্রামের পাঁচজন রয়েছেন। এই প্রতিটি পরিবারই প্রবল দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন। প্রায় প্রতিটি পরিবারের সদস্যরাই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমরা গ্রামবাসীরা সকলেই তাঁদের পাশে রয়েছি। তাই এবারে আমরা পুজো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যদি ষষ্ঠির আগের দিনও সুস্থ ভাবে বাড়ি ফিরে আসে, তাহলে আমরা ফের দুর্গাপুজোয় ঝাপিয়ে পড়ব। কিন্তু বর্তমানে যে পরিস্থিতি, তাতে পুজো করা কি সম্ভব?
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।