স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা কয়েক হাজার ছাড়িয়েছে।
ডেঙ্গি মশা
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বর্ষা শুরু হতেই রাজ্যে মশাবাহিত রোগের প্রকোপ দেখা দেয়। বিশেষত ডেঙ্গির (Dengue) প্রকোপ প্রাণঘাতী। অগাষ্ট-সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর চব্বিশ পরগনার মতো জেলাগুলোতে ডেঙ্গির প্রকোপ মারাত্মক। কিন্তু বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও সরকার এখনো মোকাবিলার পথ খুঁজে পেল না। তাই রাজ্যবাসীর ভোগান্তি অব্যাহত। ফি-বছরেই মশাবাহিত রোগে প্রাণ যায় কয়েক হাজার রাজ্যবাসীর।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গির মতো সংক্রমকের মোকাবিলা বছরভর করতে হয়। কিন্তু সারা বছর স্বাস্থ্য দফতরের সেই তৎপরতা দেখা যায় না। আর তাই বর্ষাকালে পরিস্থিতি সামলাতে প্রশাসন হিমশিম খায়। এবছরে ও ডেঙ্গির প্রকোপ মারাত্মক বাড়ছে।
স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা কয়েক হাজার ছাড়িয়েছে। ইতিমধ্যেই হাওড়াতে দু'জনের মৃত্যু হয়েছে। হুগলিতেও মারাত্মক ডেঙ্গি প্রকোপ বেড়েছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গির মতো রোগের বিরুদ্ধে মোকাবিলা করতে হলে সরকারের একাধিক বিভাগের মধ্যে সমন্বয় জরুরি। শিক্ষা, পূর্ত, স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করবে পুরসভা ও পঞ্চায়েতগুলো। এতগুলো দফতরের একযোগে কাজে প্রয়োজন সদিচ্ছা ও সমন্বয়। তবেই কাজে সাফল্য আসবে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই দুইয়ের অভাব দেখা যায়। আর তাই সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন: পুজোর আগে ফের চিন্তা বাড়াচ্ছে ডেঙ্গি, ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে আক্রান্ত ৪০১ জন
অধিকাংশ সময়, বাচ্চারা স্কুল থেকে আক্রান্ত হচ্ছে। কলকাতা ও তার আশপাশের রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ। বিশেষত হাওড়া, হুগলি, উত্তর চব্বিশ পরগনায় রাস্তার অবস্থা বেশ খারাপ। সামান্য বৃষ্টিতেও জল জমে। হাওড়ার একাধিক জায়গায় রাস্তার জল বাড়িতে ঢুকে যায়। জল সরতেই তিন-চার দিন কেটে যায়। জমা জল মশাল আঁতুড়ঘর জানার পরেও বাসিন্দাদের কিছু করার থাকে না। শিক্ষা, পূর্ত ও পুর দফতরের সমন্বয়ের অভাব এই ছবিগুলোতে স্পষ্ট।
হাওড়ায় গত সপ্তাহেই ২৯ বছর বয়সি এক সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে। পুরসভার বক্তব্য, তারা নিয়মিত এলাকা পরিদর্শন করছেন। কিন্তু এরকম সংক্রমক রোগ পুরোপুরি ঠেকানো সম্ভব নয়। এলাকার বাসিন্দারা অবশ্য খুব বিরক্ত। বাসিন্দাদের একাংশের প্রশ্ন, পুরসভার কাজ কি শুধুমাত্র বাড়িতে বাড়িতে জ্বর হয়েছে কিনা, সেটাই জানা। আর কিছুই কি করণীয় নেই? সময় মতো রাস্তা সারাই, নর্দমা পরিষ্কার, পার্কের আগাছা কেটে পরিষ্কার কে করবে?
একই রকম পরিস্থিতি হুগলি জেলাতেও। হুগলির উত্তরপাড়া পুরসভা এলাকায় গত এক সপ্তাহে লাফিয়ে বেড়েছে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা। বাড়িতে পুর কর্মীরা জ্বরের খোঁজ নিতে গেলে অনেক জায়গায় তাদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন সাধারণ মানুষ। এক বাসিন্দার কথায়, "বাড়িতে জল জমিয়ে রাখতে নেই। জমা জলে মশা জন্মায় দশ বছর ধরে শুনছি। জল জমিয়ে রাখি না। কিন্তু সবকিছু আমাদের কাধে ফেলে দিলেই হবে না। পুরসভা নিজেদের কাজ করছে কোথায়? "
যদিও রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর এবং কলকাতা পুরসভার যুক্তি, বছরভর ডেঙ্গি মোকাবিলার কাজ চলে। তবে রাতারাতি সব সমস্যা নির্মূল সম্ভব নয়।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, যে কোনও সংক্রমক রোগের মোকাবিলার ক্ষেত্রে সরকারের তরফ থেকে রোগের সঠিক তথ্য দেওয়া প্রথম কাজ। কিন্তু ডেঙ্গি মোকাবিলার ক্ষেত্রে সেটাই সবচেয়ে বড় অন্তরায় হয়ে উঠেছে। ডেঙ্গি মৃত্যুর সঠিক তথ্যের জন্য মানুষকে আদালতের দ্বারস্থ পর্যন্ত হতে হচ্ছে। সাধারণ মানুষ তো বটেই স্বাস্থ্য মন্ত্রকে তথ্য পাঠানো নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়। মানুষ রোগের ভয়াবহতা সম্পর্কে না জানতে পারলে, রোগ ঠেকানো মুশকিল। তাই ডেঙ্গিকে মোকাবিলা করতে হলে সঠিক তথ্য জানাতে হবে। কোন জেলায় সংক্রমণ কেমন হচ্ছে, সেটা ঠিকমতো বোঝাতে হবে। এক বিশেষজ্ঞের কথায়, "শুধু গান বাজিয়ে মানুষকে সচেতন করা যায় না। বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে জানাতে হয়। ডেঙ্গির তথ্য নিয়ে অতীতে অনেক ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। এখনো হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে হলে আগে ধোঁয়াশা থেকে বেরোতে হবে। "
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ।