শুধু বৈঠক, উপদ্রুত এলাকা পরিদর্শন আর দোষারোপ! কাজের কাজ কি হচ্ছে কিছু?
প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গি।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: রাজ্যে এখন আতঙ্কের আরেক নাম ডেঙ্গি (Dengue Update)। কলকাতায় ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে এই মশাবাহিত রোগ। কমার কোনও লক্ষণ নেই। প্রশাসনও নির্বিকার। শুধু বৈঠক, উপদ্রুত এলাকা পরিদর্শন এবং দোষারোপ করে দায় ঝেড়ে ফেলতে চাইছে প্রশাসন। চলছে তথ্য গোপনের চেষ্টা। শহরে ফের এক ডেঙ্গি আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে।
ডেঙ্গি (Dengue Update) নিয়ে আতঙ্কপুরী হয়ে উঠছে দমদম। ফের এক ডেঙ্গি আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে দক্ষিণ দমদম এলাকা থেকে। এবার ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল এক বৃদ্ধার। এ নিয়ে দমদম এলাকা থেকে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে হল ৬। দমদম পুরসভার ২৭নং ওয়ার্ডের শ্যামনগর অঞ্চলে মৃত্যু হল এক বয়স্ক ভদ্র মহিলার। রুনা বসাক নামে ৫৩ বছর বয়সি ওই মহিলা চলতি মাসের ১৪ তারিখ নাগেরবাজার সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। প্রসঙ্গত, কলকাতা ছাড়া নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ ২৪ পরগনার এবং হুগলি জেলায় রেড জোন চিহ্নিত করেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর।
পুজোর আগে ডেঙ্গি (Dengue Update) নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও আতঙ্কের শেষ নেই। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিদিন রাজ্যে ২৫০ থেকে ৩০০ জন নতুন ডেঙ্গি আক্রান্ত হচ্ছে। ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছড়িয়ে পড়েছে দক্ষিণবঙ্গের প্রায় প্রতিটি জেলাতেই। শহরাঞ্চলের পাশাপাশি ডেঙ্গি থাবা বসিয়েছে গ্রামাঞ্চলেও। জেলায় জেলায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাঠানো হচ্ছে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে। উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া এবং মুর্শিদাবাদ এই তিনটে জেলা নিয়ে চিন্তার কারণ সবথেকে বেশি। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, গত এক সপ্তাহে রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৭,৭৬০ জন।
রাজ্যে বাড়ছে ডেঙ্গি (Dengue) আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। পুজো পেরিয়েও এই দাপট বজায় থাকতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নভেম্বর পর্যন্ত থাকতে পারে ডেঙ্গির দাপট। তবু নিরুত্তাপ রাজ্য। তথ্য গোপনে ব্যস্ত সরকার। সব রাজ্য ডেঙ্গি নিয়ে কেন্দ্রের কাছে রিপোর্ট জমা দিলেও পশ্চিমবঙ্গ থেকে এখনও কোনও রিপোর্ট পাঠানো হয়নি। এ প্রসঙ্গে রাজ্যকে বিঁধলেন বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য (Shamik Bhattacharya)। তিনি বলেন, "ডেঙ্গি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের কোথাও কোনও তৎপরতা নেই। ডেঙ্গি রোধ করার জন্য পুরনিগমের যে ভূমিকা থাকা উচিত, জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য যে কর্মসূচি নেওয়া উচিত এবং কীটনাশক ব্যবহার করা উচিত সেটা একবিন্দু মানে না। সেটা দিয়ে কোনও কাজ হচ্ছে না। আমাদের রাজ্যে সমাজবিরোধীরা যেমন ভয়মুক্ত হয়ে গেছে, যে পুলিশ তাদের কিছু করতে পারবে না, সেরকমই মশারাও ভয়মুক্ত হয়ে গেছে যে এই সরকার বা পুরনিগম তাদের কোনও ক্ষতি করতে পারবে না। তারাও নির্ভয়ে বিচরণ করছে।"
দুর্ভাগ্যের বিষয় এটাই যে, এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন জেলা হাসপাতাল থেকে কলকাতায় রেফার করা হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় তারা যে প্রেসক্রিপশন লিখছে সেখানে ডেঙ্গি শব্দ নেই, বলে মত আক্রান্তদের। কোথাও বলছে, অজানা জ্বর, কোথাও বলছে পাহাড়ি জ্বর। মুর্শিদাবাদ জেলা, মালদা জেলায় এধরনের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। এখানেও ডেঙ্গি প্রতিরোধ করার যে পরিকাঠামোর প্রয়োজন আছে, সরকারকে যতটা তৎপর হতে হয়, মুখ্যমন্ত্রী-স্বাস্থ্যমন্ত্রীর যতটা মধ্যস্থতার প্রয়োজন আছে সেটা হচ্ছে না, বলে দাবি বিরোধীদের। কার্যত মানুষকে খোলা মৃত্যুর দিকে, অসহায় অবস্থার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, বলে অভিমত সাধারণ মানুষের।
বাংলাদেশেও ভয়াবহ আকার নিয়েছে ডেঙ্গি (Dengue Update)। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে চলতি বছরে ডেঙ্গিতে মৃতের সংখ্যা ৯০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশ স্বাস্থ্য দফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ডেঙ্গি বিষয়ক রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সেই দেশে ডেঙ্গিতে আরও ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে চলতি বছরে বাংলাদেশে ডেঙ্গিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯০৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩,০০৮ জন নতুন ডেঙ্গি রোগী। ফলে, সেই দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে, বর্তমানে, ১০,৪৭০ জন ডেঙ্গি রোগী চিকিৎসাধীন আছেন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।