রাজভবন সূত্রের খবর, ১৯টির মধ্যে ৩টি বিল নিয়ে নবান্ন উচিৎ পদক্ষেপ করলে তা সই করতে পারেন পরবর্তী রাজ্যপাল। মমতা চাইলেও বাকি ১৬টি বিলের যে কোনও ভবিষ্যৎ নেই তা একপ্রকার স্পষ্ট।
জগদীপ ধনখড় ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
মাধ্যম নিউজ ডেস্কঃ তাঁর তিন বছরের মেয়াদকালে বিধানসভায় পাশ হওয়া ১৯টি বিল রুখে দিয়েছিলেন সদ্য প্রাক্তন রাজ্যপাল তথা দেশের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়(Jagdeep Dhankhar)।সই করেননি একটিতেও। তাঁর তোলা প্রশ্নের জবাব দিতে পারেনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। সরকারের প্রতিনিধিরা নানা অনুনয়-বিনয় থেকে অনৈতিক আক্রমণ করে গেলেও প্রাক্তন রাজ্যপাল সাংবিধানিক প্রশ্নগুলির জবাব চাইতে থাকেন। কোনওটির বিল পাশের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তার কোনও জবাব ছিল না নবান্নর কাছে।ধনখড় দিল্লি চলে যাওয়ায় এখন সেই সব বিলের ভবিষ্যত কি, তা নিয়ে প্রশাসনিক মহলে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। রাজভবন সূত্রের খবর, ১৯টির মধ্যে ৩টি বিল নিয়ে নবান্ন উচিৎ পদক্ষেপ করলে তা সই করতে পারেন পরবর্তী রাজ্যপাল। মমতা চাইলেও বাকি ১৬টি বিলের যে কোনও ভবিষ্যৎ নেই তা একপ্রকার স্পষ্ট।
জানেন কি ধনখড়ের আমলে রাজ্য সরকারের কোন কোন বিলে আপত্তি জানিয়ে অনুমোদন করেনি রাজভবন। সরকারি সূত্রের খবর, গত পাঁচ বছরে যে ১৯টি বিল আটকে রয়েছে। তার মধ্যে ২০১৬-র ফেব্রুয়ারিতে ডানলপ এবং জেশপের অধিগ্রহণ সংক্রান্ত দুটি বিল পাশ করেছিল বিধানসভা। তৎকালীন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠিও তাতে সই করেননি। ধনখড় রাজভবনে আসার পর নিজের মতামত জানিয়ে তা পাঠান রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য। শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দও এই দুটি বিলে অনুমোদন না দিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেন। আইনত ধাক্কা খেয়ে সরকারও জেশপ এবং ডানলপ কারখানা অধিগ্রহণ নিয়ে আর জোরাজুরি করেনি। রাজ্যপালের তোলা প্রশ্নের জবাবও দিতে পারেনি।
স্থায়ী রাজ্যপাল নেই, স্বাধীনতার ৭৫ বছরে রাজভবনের অ্যাট-হোম কি বাতিল?
ওয়েস্টবেঙ্গল এস্টেট অ্যাকুইজিশন(সংশোধনী)বিল ২০১৭, ওয়েস্টবেঙ্গল কমিশন ফর ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসেস(সংশোধনী)-২০১৮ এবং দ্য কোড অব ক্রিমিন্যাল প্রসিডিওর(পশ্চিমবঙ্গ সংশোধনী ২০১৮ বিল তিনটি ধনখড়ের রাজভবনে প্রবেশের আগে থেকেই ঝুলে ছিল। কেশরীনাথ ত্রিপাঠি তাতে সই করেননি। জগদীপ ধনখড়ও জমিদারি প্রথা বিলোপের বিল এবং ফৌজদারি দণ্ডবিধি সংশোধনের বিল রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দেন। এই তিনটি বিল আজও দিনের আলো দেখেনি।
বর্তমান উপরাষ্ট্রপতির প্রথম বিতর্কিত বিল আসে গণপিটুনি সংক্রান্ত। ২০১৯-এর অগষ্টে বিলটি পাশ করান মমতা(Mamata)। রাজ্যপাল এই বিল সম্পর্কে একাধিক প্রশ্ন তুলে স্বরাষ্ট্র দফতরে ফেরত পাঠান। তিন বছর কেটে গেলেও ধনখড়ের প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রী। ফল গণপিটুনি প্রতিরোধ বিলটি আজও আইনে পরিণত হয়নি। ২০২১ এর নভেম্বরে পাশ হয় হাওড়া পুরনিগম(সংশোধনী)আইন। এই আইনে বালি পুরসভাকে ফের হাওড়া পুরনিগম থেকে পৃথক করার পরিকল্পনা করা হয়। প্রক্রিয়াগত প্রশ্ন তুলে রিপোর্ট চেয়ে পাঠান রাজ্যপাল। জবাব দিতে ব্যর্থ হয় নবান্ন। আজও বিলটি ঝুলে রয়েছে। এরপর ২০২২ এর মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত শিক্ষা ক্ষেত্রে রাজ্যপালের যাবতীয় ক্ষমতা খর্ব করে ৯টি বিল পাশ হয়েছে বিধানসভায়। তাতে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য হিসাবে সরকার রাজ্যপালের বদলে মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়োগ করেছে। বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়েও এ সংক্রান্ত পৃথক বিল পাশ করানো হয়েছে। যদিও তার একটিতেও সই করেননি ধনখড়।
দিল্লি গিয়ে সেটিং কি হল, দিদিকে কী বললেন মোদি?
আরও তিনটি বিল সম্পর্কে অবশ্য রাজভবন রাজ্যের ব্যাখ্যা চেয়েছে। সেই তিনটি বিল হল ওয়েস্ট বেঙ্গল ফায়ার সার্ভিসেস(সংশোধনী)-২০২২, ওয়েস্টবেঙ্গল ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট(সংশোধনী)২০২২ এবং ওয়েষ্টবেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অব টিচার্স, ট্রেনিং, এডুকেশন প্ল্যানিং অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন(সংশোধনী)-২০২২। সরকার যদি রাজভবনের তলব করা ব্যাখ্যা দিতে পারে তা হলে এগুলি পরবর্তী রাজ্যপাল সই করে দিতে পারেন বলে জানা যাচ্ছে।ধনখড়ের কালির আঁচড় যে সব বিলে পড়েছে তা দিনের আলো দেখার আশা আপাতত নেই বলেই প্রশাসনিক সূত্রের খবর।