একের পর এক বাসরুট বন্ধ, চরম দুর্ভোগে হাওড়া শহরের বাসিন্দারা
হাওড়ায় মুখ থুবড়ে পড়েছে যাত্রী পরিবহণ। নিজস্ব চিত্র
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: উত্তর হাওড়া থেকে কলকাতা গামী একের পর এক বাস রুট (Transport) বন্ধ হতে বসেছে। যার ফলে চরম দুর্ভোগ পড়েছেন হাওড়া শহরের বাসিন্দারা। একটা সময় উত্তর হাওড়ার সালকিয়া, বেলগাছিয়া, বালি সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে হাওড়া স্টেশন হয়ে কলকাতা যাওয়া খুবই সহজ ছিল। কিন্তু আস্তে আস্তে বিভিন্ন রুটের গাড়ির সংখ্যা ক্রমশ কমতে শুরু করে। এখন বেশ কিছু রুটে গাড়ি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ। কয়েকটি রুটে নামমাত্র গাড়ি চললেও যাত্রীদের মূলত ভরসা করতে হয় টোটো ও অটোর ওপর। যদিও বাস মালিকদের দাবি, একদিকে তেলের দাম বেড়ে যাওয়া, অন্যদিকে অটো ও টোটোর দৌরাত্ম্য বাড়তে থাকায় তাঁদের বাধ্য হয়েই বাস রুটগুলি বন্ধ করে দিতে হয়েছে।
কী বলছেন ভুক্তভোগী বাসিন্দারা?
উত্তর হাওড়ার এক বাসিন্দা সুজিত পাল জানান, একটা সময় শ্রীরামপুর থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত এল ৩১ নামে একটি সরকারি বাস (Transport) চলত। যেটি উত্তর হাওড়ার সালকিয়া হয়ে যেত। সেই বাস বহু বছর ধরে বন্ধ। তারপর থেকে এই রুটে কোনও সরকারি বাস চলে না। একমাত্র নির্ভর ছিল বেসরকারি বাস। তার মধ্যে বেলগাছিয়া থেকে সল্টলেক রুটে ১৭ নম্বর মিনিবাস চলত। যেটি পোস্তা হয়ে যেত। উত্তর হাওড়ার বাসিন্দাদের উত্তর কলকাতা যাওয়ার একমাত্র উপায় ছিল এই বাসটি। বিগত চার বছর ধরে যে রুটটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া হাওড়ার বালুহাটি থেকে ধর্মতলা রুটে মিনি বাস চলত আধ ঘণ্টা ছাড়া। বর্তমানে সেই রুটে সারাদিনে মাত্র দুটি গাড়ি চলে। অন্যদিকে সত্যবালা থেকে দক্ষিণ কলকাতার কসবা রুটে যে মিনিবাস চলত, সেটিও প্রায় বন্ধের পথে। এখন দিনে ২ থেকে তিনটি গাড়ি চলে। রবীন্দ্র সদন হয়ে সরাসরি দক্ষিণ কলকাতা সঙ্গে যোগাযোগ ছিল এই গাড়িটির। অন্যদিকে হাওড়া থেকে ডোমজুড়, শিয়াখালা, চন্ডীতলা, জগদীশপুর সহ বিভিন্ন রুটে ১৫ মিনিট ছাড়া চলত ৫৭ এ বাস। বর্তমানে এই রুটে শুধুমাত্র কয়েকটি বাস সালকিয়া হয়ে জগদীশপুর যায়। কখনও শিয়াখালা রুটে দু-একটি বাস যায়। বর্তমানে যাত্রীদের ভরসা বলতে ভট্টনগর-ধর্মতলা মিনিবাস, জগদীশপুর-হাওড়া বাস ও সালকিয়া-ধর্মতলা মিনিবাস।
কী সমস্যার কথা শোনালেন বাস মালিকরা (Transport)?
উত্তর হাওড়ার সালকিয়া থেকে ধর্মতলা রুটের মিনিবাসও দিন দিন কমে যাচ্ছে। ওই রুটের এক বাস মালিক গৌতম পাইন জানিয়েছেন, ছোট ছোট রুটে যাত্রীরা আগে যাওয়ার জন্য বাসে উঠত। কিন্তু এখন তারা অটো বা টোটোতে চলে যায়। ফলে তাদের যাত্রী কমছে। তিনি বলেন, হাওড়া ব্রিজে অটো ও টোটো উঠতে দেওয়া হয় না। সেটা যদি দেওয়া হত, তাহলে এখন যে কয়েকজন যাত্রী পান সেটাও বন্ধ হয়ে যেত। এর পাশাপাশি তিনি জানান, বর্তমানে একটা নতুন বাস কিনতে দাম যেমন অনেক বেশি পড়ে, একইভাবে বাস চালানোর খরচ অনেক বেশি। সঙ্গে রয়েছে পুলিশি ঝামেলা। যখন তখন নানা কারণে কেস দেয় পুলিশ। সেই কেসের টাকা মেটাতেই লাভের গুড় পিঁপড়েয় খেয়ে নেয়। তিনি বলেন, যেহেতু আদালতের নির্দেশ রয়েছে ১৫ বছরের উপরে কোনও বাস চালানো যাবে না, এর ফলে যে সমস্ত বাসের বয়স ১৫ বছর হয়ে গেছে, সেগুলি (Transport) বসে গেলে মালিকরা আর নতুন বাস রাস্তায় নামাতে চাইছে না। এর ফলে রুটগুলি আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তিনি জানান, সালকিয়া এবং কোনা রুটের দুটি মিনি বাস গত মাসে ১৫ বছরের কারণে বসে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে ২০২৪ সালের মধ্যে উত্তর হাওড়া থেকে ধর্মতলা গামী সমস্ত রুট বন্ধ হয়ে যাবে বলে তাঁর আশঙ্কা। তিনি বলেন, নতুন বাস কেনার ক্ষেত্রেও সরকার যদি কিছু ছাড় দেয় এবং পুলিশ যদি কেস দেওয়া বন্ধ করে ও বিভিন্ন বাসের রুট ঘুরিয়ে দেয় যাতে বাসগুলি যাত্রী পায়, তাহলে হয়তো তাঁরা নতুন করে বাস নামাতে পারবেন। না হলে তাঁদের বাস চালানো বন্ধ করে দিতে হবে।
কী জানালেন পরিবহণ (Transport) অফিসার?
হাওড়ার অতিরিক্ত রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট (Transport) অফিসার বিপ্লব গোস্বামী বলেন, যাতে এই বাস রুটগুলি বন্ধ হয়ে না যায়, তাই ইতিমধ্যেই বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্য সরকার। তার মধ্যে যেমন ২০২৪ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত বাস মালিকদের সময় দেওয়া হয়েছে ই ভেহিকেল বা ইলেকট্রিক বাসে রেজিস্ট্রি করার জন্য। ওই সময়ের মধ্যে তারা যদি ই ভেহিকেল বা ইলেকট্রিক বাস কেনার রেজিস্ট্রি করে, তাহলে তাদের রোড ট্যাক্স ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি যদি কোনও বাস রুটের রুট পরিবর্তন, পরিমার্জন বা সংযোজন করতে হয় তার জন্য সার্ভে করে পরিবহণ দফতরে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। এবং সেই সার্ভের কাজও তাঁরা এখন জোর কদমে চালিয়ে যাচ্ছেন। এক মাসের মধ্যেই তাঁরা রাজ্যকে সমস্ত রিপোর্ট পেশ করবেন। ইতিমধ্যেই বাস মালিকদের সঙ্গে তাঁরা এ নিয়ে কথা বলেছেন। ২০৩০ সালের মধ্যে রাজ্য সরকার সমস্ত বাসকে ইলেকট্রিক বাসে রূপান্তরিত করার যে পরিকল্পনা নিয়েছে তা যেমন বাস্তবায়িত হবে, এর পাশাপাশি পুরনো রুটগুলি আবার ফিরে আসবে বলে তিনি মনে করেন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।