এখনও পর্যন্ত অনুব্রত ও তাঁর পরিবারের ১১ কোটি ২৬ লক্ষ টাকার সম্পত্তি আটক করা হয়েছে
অনুব্রত মণ্ডল ও তাঁর মেয়ে সুকন্যা মণ্ডল।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: গরু পাচার মামলায় (Cow Smuggling Case) অনুব্রত মণ্ডলের নামে চার্জশিট জমা দিল ইডি। গ্রেফতারির প্রায় সাড়ে আট মাস বাদে অনুব্রতের নামে বৃহস্পতিবার দিল্লির রাউজ অ্যাভিনিউ আদালতে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দাখিল করেছে ইডি। ২০৩ পাতার চার্জশিটের সঙ্গে অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে প্রায় তিন হাজার পাতার নথিও জমা দিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
ইডি সূত্রে খবর, অনুব্রতর বিরুদ্ধে তাঁর মেয়ে সুকন্যার বয়ানকেই হাতিয়ার করেছেন তদন্তকারীরা। চার্জশিটে ইডি দাবি করেছে, জিজ্ঞাসাবাদে সুকন্যা তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, বাবার কথা মতোই তিনি চেকে সই করে দিতেন। আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে তিনি কিছুই জানতেন না। চার্জশিটে অনুব্রত এবং তাঁর মেয়ে সুকন্যা মণ্ডল সহ তৃণমূল নেতার ঘনিষ্ঠদের নামে বিপুল সম্পত্তির উল্লেখ করেছে ইডি।
অনুব্রত মণ্ডল কতটা প্রভাবশালী, তা বোঝাতে তাঁর দিল্লি যাত্রা আটকাতে দুবরাজপুরের এক তৃণমূল কর্মীকে খুনের চেষ্টার ঘটনায় এক বছর পর অনুব্রতকে পুলিশের গ্রেফতারির ঘটনাও চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে৷ আবার দিল্লি নিয়ে যাওয়ার সময় রাজ্য পুলিশের ঘেরাটোপে থাকা সত্ত্বেও যেভাবে শক্তিগড়ের একটি হোটেলে অনুব্রত প্রাতঃরাশের ফাঁকে ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন, সে বিষয়টিও চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইডি-র দাবি, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে নগদে অর্থ জমার পাশাপাশি গরু পাচারের টাকাতেই অনুব্রত ১.৫১ কোটি টাকা খরচ করে স্ত্রী-কন্যার নামে ভোলে বোম রাইস মিল কিনেছিলেন। সুকন্যা ও বাড়ির পরিচারক বিদ্যুৎবরণ গায়েনের নামে ২.৪২ কোটি টাকায় নীড় ডেভেলপার নামের সংস্থা কেনা হয়েছিল। সে টাকাও এসেছিল গরু পাচারের আয় থেকে। সুকন্যা ও বিদ্যুতের নামেই এএনএম অ্যাগ্রোকেম নামের আর একটি সংস্থা মাত্র ১ লক্ষ টাকায় কেনা হয়েছিল। বাকি টাকা গরু পাচারের আয় থেকে বেনামে লেনদেন হয়েছিল।
ইডি দাবি করেছে, নিজের ‘রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাব’ খাটিয়ে অনুব্রত এনামুল হককে গরু পাচারে (Cow Smuggling Case) সাহায্য করতেন। এনামুল ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতেন। তার বিনিময়েই গরু পাচারের আয়ের টাকা অনুব্রতের কাছে পৌঁছে যেত। তার সুবাদেই ২০১৫-১৬ থেকে মণ্ডল পরিবারের অর্থ-সম্পত্তি ফুলেফেঁপে উঠতে শুরু করে। এখনও পর্যন্ত অনুব্রত ও তাঁর পরিবারের ১১ কোটি ২৬ লক্ষ টাকার সম্পত্তি আটক করা হয়েছে। ইডি জানিয়েছে, অনুব্রত মূলত তাঁর দেহরক্ষী সায়গল হোসেনের মোবাইলে গরু পাচার কারবারি এনামুলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। সায়গলই অনুব্রত ও এনামুলের মধ্যে যোগসূত্র হিসেবে কাজ করত।
ইডি চার্জশিটে জানিয়েছে, অনুব্রত তাঁর বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি ও অর্থের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে জানিয়েছেন, মূলত জমির দালালি ও চালের ব্যবসা থেকে এই টাকা এসেছে। কিন্তু তার কোনও নথি দেখাতে পারেননি। চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট মণীশ ব্যাঙ্কে নগদ জমা থেকে ব্যবসায়িক লেনদেন, আয়কর রিটার্ন জমার বিষয়ে জানেন বলে অনুব্রত জানিয়েছেন। কিন্তু মণীশ নগদ টাকার কোনও ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।
আরও পড়ুুন: জ্বলছে মণিপুর, জারি কারফিউ, অশান্তির কারণ কী জানেন?
গরু পাচারের (Cow Smuggling Case) মূল অভিযুক্ত এনামুল হক, বিএসএফ অফিসার সতীশ কুমার, অনুব্রতের দেহরক্ষী সায়গল হোসেনরা আগে থেকেই তিহাড় জেলে ছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে ইডি আগেই চার্জশিট পেশ করেছে। অনুব্রত, সুকন্যা, মণীশও এখন তিহাড়ে। সব অভিযুক্তকে আগামী সোমবার, ৮ মে একসঙ্গে আদালতে তোলা হবে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।